Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচিল তৈরির টাকা নেই, স্কুলের সীমানায় তাই গাছ

জেলার যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমানা প্রাচীর নেই, সেখানে গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক সীমানা প্রাচীর নির্মাণে উদ্যোগী হল জেলা পরিষদ। ইতিমধ্যে সব স্কুল কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, এর মধ্যে দু’হাজারেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমানা প্রাচীর নেই। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বলেন, “যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমানা প্রাচীর নেই, তার মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রই বেশি।

সীমানা পাঁচিল নেই গোপগড় প্রাথমিক স্কুলে। —নিজস্ব চিত্র

সীমানা পাঁচিল নেই গোপগড় প্রাথমিক স্কুলে। —নিজস্ব চিত্র

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

জেলার যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমানা প্রাচীর নেই, সেখানে গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক সীমানা প্রাচীর নির্মাণে উদ্যোগী হল জেলা পরিষদ। ইতিমধ্যে সব স্কুল কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, এর মধ্যে দু’হাজারেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমানা প্রাচীর নেই। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বলেন, “যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমানা প্রাচীর নেই, তার মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রই বেশি। এই সব প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে।” তাঁর আশ্বাস, “এ ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ-পঞ্চায়েত সব রকম সাহায্য করবে। চলতি বছরের মধ্যেই এই কাজ করতে বলা হয়েছে।”

এ ক্ষেত্রে অবশ্য একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। স্কুলে সীমানা পাঁচিল দেওয়ার উদ্দেশ্য হল সুরক্ষা। সীমানা বরাবর গাছ লাগিয়ে সেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে কী করে? এ ক্ষেত্রে শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদবাবুর বক্তব্য, “প্রতিটি স্কুলে সীমানা পাঁচিল তৈরির জন্য অর্থ নেই। তাই আপাতত সীমানা বরাবর গাছ লাগানো হবে। এতে অন্তত সীমানা পাঁচিলের জায়গাটা বেদখল হবে না।” তবে তিনি এ-ও জানাচ্ছেন, পরে যে রকম অর্থ বরাদ্দ হবে, সেই অনুযায়ী স্কুলগুলিতে কংক্রিটের সীমানা প্রাচীর দেওয়া হবে।

পশ্চিম মেদিনীপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮,৬৭৭টি। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪,৭২৩টি। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪,৪৫,৫০০ জন। অন্য দিকে, উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১,২৬৩টি। উচ্চ বিদ্যালয়গুলোর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬,৬৮,১৪৪ জন। এরমধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫২৪টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭১টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৬৮টি এবং মাদ্রাসা ১৮টি। মোট শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ২,৪৫৯টি। শিশু শিক্ষা কেন্দ্রগুলোর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১,০৮,১৪৮ জন। মোট মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ২৩২টি। মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলোর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৪,৩৫৭ জন। বস্তুত, ইতিমধ্যে জেলার বিদ্যুত্‌ সংযোগহীন বিদ্যালয়গুলোয় বিদ্যুত্‌ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে সমস্ত বিদ্যালয়ে বিদ্যুত্‌ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যালয়গুলো উদ্যোগী হলে জেলা পরিষদ সব রকম সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছে। পাশাপাশি, সমস্ত বিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাকা প্রাচীর নির্মাণ করতে গেলে অর্থের একটা সমস্যা থাকত। সেই ক্ষেত্রে সমস্ত বিদ্যালয়কে অর্থ সাহায্য দেওয়া সম্ভবও হত না। পরিস্থিতি দেখেই প্রাকৃতিক সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। পার্কগুলোয় যে ভাবে গাছ লাগিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়, প্রাচীর-বিহীন বিদ্যালয়গুলোর আশপাশে সেই ভাবেই গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। এক কর্তার কথায়, “গতানুগতিক যে সব কাজ হয়, তার বাইরে বেরিয়ে নতুন কিছু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। স্কুলগুলোর ভালর জন্যই এই পদক্ষেপ।”

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নারায়ণ সাঁতরাও বলেন, “এটা ভাল উদ্যোগ। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সীমানা প্রাচীর থাকা উচিত। যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমানা প্রাচীর নেই, সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হলে একদিকে যেমন ওই প্রতিষ্ঠানের জায়গা নির্ধারিত হবে, অন্য দিকে এলাকায় সবুজের সংখ্যাও বাড়বে। সব এলাকায় সবুজের সংখ্যা বাড়ানোটাও তো জরুরি।” সীমানা-বিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হলেও পরবর্তী সময় ওই সব প্রাচীরের আশেপাশে আম, পেয়ারা, কাঁঠাল, পেঁপে প্রভৃতি গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে বলেও জেলা পরিষদ সূত্রে খবর।

পশ্চিম মেদিনীপুরের একটা বড় এলাকা জুড়ে রয়েছে জঙ্গলমহল। দীর্ঘ অশান্তির জেরে এক সময় এখানে প্রচুর গাছ কাটা পড়ে। সেই সময় বিস্তীর্ণ এলাকায় বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা কাজই করতে পারেননি। এখন পরিস্থিতি আগের মতো না থাকলেও এখনও গাছ কাটার অভিযোগ ওঠে। তাই প্রতি বছর নতুন গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে এই এলাকাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সবুজের পরিমাণ বাড়াতে প্রতি বছর অরণ্য সপ্তাহে প্রায় কুড়ি লক্ষ চারা গাছ বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন এলাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও চলে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জেলার সমস্ত ক্যানাল, খাল, নদী পাড়ে গাছ লাগানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। জেলা পরিষদের এক কর্তার কথায়, “আমাদের সকলেরই উচিত, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা। এ জন্য আরও বেশি গাছ লাগাতে হবে। বিদ্যালয়ের আশপাশে সবুজের সংখ্যা বাড়লে পরিবেশটা আরও সুন্দর হবে।”

সীমানা সুরক্ষা

• পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৮,৬৭৭টি। ছাত্রছাত্রী ১২ লক্ষ ৫৬ হাজার ১৪৯ জন।

• দু’হাজারেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমানা প্রাচীর নেই। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক, শিশুশিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রই বেশি।

• প্রাচীর-বিহীন বিদ্যালয়ে গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক সীমানা প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ। চলতি বছরের মধ্যে কাজ শেষের নির্দেশ।

• পরবর্তী সময়ে প্রাচীরের আশপাশে আম, পেয়ারা, কাঁঠাল, পেপে প্রভৃতি গাছও লাগানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE