পুজোর সময় মহিলাদের প্রতি যে কোনও ধরনের অশালীন মন্তব্য বা ব্যবহার রুখতে তৎপর হচ্ছে পুলিশ। দুর্গা পুজোর ক’দিন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলায় সাদা পোশাকের পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও পুজোর সময় মহিলাদের উপর অত্যাচার ও আশালীন ব্যবহারে যুক্তদের ধরতে পুলিশ কর্মী-আধিকারিক নিয়ে ‘অ্যান্টি ক্রাইম স্কোয়াড’ তৈরি করছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। বিভিন্ন পুজো মণ্ডপের সামনে ও যাতায়াতের পথে ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়গুলিতেও সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “বিভিন্ন পুজো মণ্ডপের চত্বর-সহ যাতায়াতের পথে মহিলাদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার ও তাঁদের উপর অত্যাচার বন্ধ করতে ও ছিনতাইবাজদের রুখতে ‘অ্যান্টি ক্রাইম স্কোয়াড’ গঠন করা হয়েছে।” তিনি জানান, এই স্কোয়াডে প্রায় ২ হাজার পুলিশ কর্মী থাকছে। জেলার প্রতিটি শহর ও বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ চত্বর ছাড়াও যাতায়াতের রাস্তায় এই স্কোয়াড সদস্যরা পঞ্চমীর দিন থেকে দশমী পর্যন্ত নজরদারি চালাবে। মহিলাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারে যুক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবছরই পুজোর সময় শহরের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ ও যাতায়াতের পথে মানুষের ঢল নামে। বিশেষ করে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সপরিবারে ঠাকুর দেখতে বের হওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। সেই সময় দুষ্কৃতীদের মধ্যে ভিড়ের মধ্যে মণ্ডপে ঠাকুর দেখতে আসা মহিলাদের সঙ্গে আশালীন আচরণ করা ও তাঁদের বিভিন্ন গয়না ছিনতাইয়ের প্রবণতা থাকে। তাই জনবহুল স্থানগুলিতে মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়। তবে মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বাড়তে থাকায় এ বার নিরাপত্তা আরও আঁটোসাটো করতে চাইছে পুলিশ। জেলার বড় পুজো মণ্ডপগুলিতে সিসিটিভি (ক্লোজ সার্কিট টিভি) বসানোর জন্য পূজা উদ্যোক্তাদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কেননা, পুজো মণ্ডপের ভিড়ে মিশে কেউ যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর কার্যকলাপ চালাতে না পারে, সিসিটিভি’র মাধ্যমে তার উপর সহজে নজরদারি চালানো যাবে।
শুধু জেলার সদর শহর তমলুক নয়, কাঁতি, হলদিয়া, এগরাতেও এই নজরদারি চলবে। পাশাপাশি, অ্যান্টি ক্রাইম স্কোয়াডের সদস্যরা মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ইভটিজারদের ধরতে অভিযানও চালাবে। মহিলাদের প্রতি যে কোনও ধরনের অশালীন আচরণ, ছিনতাই-সহ যে কোনও অপরাধের খবর পেলেই স্কোয়াডের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যাবে। অপরাধের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপও নেওয়া হবে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বড়-ছোট মিলিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ১১০০ দুর্গা পুজো হয়ে থাকে। জেলার বিভিন্ন স্থানে থাকা বড় বড় মণ্ডপগুলিতে যায়ায়াতের সুবিধার জন্য পুলিশের তরফে পুজো গাইড ম্যাপ প্রকাশ করা হচ্ছে। এ বার ওই গাইড ম্যাপে একই সঙ্গে জেলার চারটি মহকুমার বড় বড় পুজো মণ্ডপের দিক নির্দেশ থাকছে। বিভিন্ন স্থানে থাকা পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র থেকে এরকম প্রায় ৪০ হাজার পুজো গাইড ম্যাপ বিতরণ করা হবে।
পুজোর ক’দিন রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। সেই সময় রাস্তা সচল রাখতে ট্রাফিক পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার্স মোতায়েন থাকবে। তাছাড়া পুজো মণ্ডপগুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কর্মী ও পুজো কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঠাকুর দেখতে বেরনো শিশুদের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া রুখতে তাঁদের চাইল্ড কেয়ার কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জেলায় এরকম প্রায় ৮০ হাজার কার্ড দেওয়া হচ্ছে। ওই কার্ডে শিশুর নাম, অভিভাবকের নাম, ফোন নম্বর থাকছে। শিশু হারিয়ে গেলে সহজেই তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া যাবে। জেলা পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “পুজোর সময় অন্য জেলা থেকে দুষ্কৃতীদের প্রবেশ রুখতে ও মানুষের নিরাপত্তার জন্য নৌকো নিয়ে পুলিশের টহলদারি চলবে। জেলার বিভিন্ন ফেরিঘাটে চেকপোস্ট বসানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy