একের পর এক পাথর বোঝাই লরি আটক করছে বন দফতর। অভিযোগ, এর ফলে ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে। বন্ধ হতে বসেছে বেলপাহাড়ির পাথর খাদানগুলির আদিবাসী শ্রমিকদের রুজিরুটি। প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দিনভর বেলপাহাড়ি ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন কয়েকশো আদিবাসী। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মহিলারা সংখ্যায় বেশি ছিলেন। আটক করা লরিগুলি ছাড়ার দাবি জানান তাঁরা। বেলপাহাড়ির রেঞ্জ অফিসার অরুণ বিশ্বাস সাত দিনের মধ্যে আলোচনার আশ্বাস দিলে বিকেলে ঘেরাও-বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও আশিসকুমার সামন্ত বলেন, “ভূমি দফতর থেকে ব্যক্তিগত বা রায়ত জমি থেকে পাথর তোলার অনুমতিপত্র নিয়ে একাধিক খাদান কর্তৃপক্ষ বেআইনি ভাবে পাথর তুলে বাইরে পাচার করছিলেন। এ রকম কিছু পাথর বোঝাই লরি গত কয়েক দিনে আটক করা হয়েছে।” বিক্ষোভকারী পাথর ব্যবসায়ীদের অবশ্য দাবি, তাঁরা বনভূমি থেকে পাথর তোলেননি। বৈধ অনুমতিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাদের পাথর বোঝাই লরি ধরপাকড় করে হয়রান করা হচ্ছে। বন আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হচ্ছে। বন দফতরের এক শ্রেণীর কর্মীরা পক্ষপাতিত্ব করছেন। যারা সত্যি বেআইনি ভাবে পাথর পাচার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
বেলপাহাড়ির বনভূমি থেকে পাথর তোলার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে বলে সরব হয়েছে পরিবেশবাদী কিছু সংগঠন। ইতিমধ্যেই বেলপাহাড়ির বেশ কিছু টিলা ও পাহাড় হারিয়ে যেতে বসেছে। কিছু প্রাকৃতিক ঝর্নার উত্সমুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন দফতর সূত্রে খবর, ব্যক্তিগত বা রায়ত জমি থেকে পাথর তোলায় নিষেধাজ্ঞা নেই। রায়ত জমি থেকে পাথর তুলতে ভূমি দফতর থেকে অনুমতি নিতে হয়। অভিযোগ, রায়ত জমি থেকে পাথর তোলার অনুমতিপত্র নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু পাথর ব্যবসায়ী বেলপাহাড়ির ডাকাই, কেন্দাপাড়া, বামুনডিহা, শিমুলপাল, গাড়পাহাড়, কাঁকড়িঝর্নার মতো এলাকার বনভূমি থেকে লাগাতার পাথর তুলছেন।
বেলপাহাড়ি পাথর ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র চঞ্চল পালের দাবি, “আমরা ভূমি দফতরের অনুমতি নিয়ে রায়তি জমি থেকে পাথর তুলে লরিতে করে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করি। আমাদের কাছে বৈধ অনুমতিপত্র থাকা সত্ত্বেও পাথর বোঝাই লরিগুলিকে আটক করছে বন দফতর।” চঞ্চলবাবুর প্রশ্ন, রাস্তায় যাওয়ার সময় লরিগুলিকে ধরছে বন দফতর। লরিতে বোঝাই পাথর যে বনভূমি থেকেই তোলা হয়েছে, এটা কী ভাবে জানা যাচ্ছে? ডিএফও আশিসবাবুর জবাব, “আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি, বনভূমি থেকে পাথর তুলে সেগুলিকে রাতের অন্ধকারে ট্র্যাক্টরে করে রায়তি জমিতে ফেলা হচ্ছে। তারপর পাথর লরিতে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
এই চাপানউতোরের মাঝে রানি টুডু, গীতা নায়েক, মালতী মাণ্ডির মতো কয়েকশো খাদান শ্রমিকের দিশাহারা দশা। তাঁদের প্রশ্ন, “খাদানের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে খাব কী!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy