এক বছর ধরে পঞ্চায়েত প্রধানের আসনটি শূন্য পড়ে রয়েছে। অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতির জন্য সংরক্ষিত ওই প্রধান পদে নির্বাচনের জন্য অবশেষে বিজ্ঞপ্তি জারি করল ব্লক প্রশাসন। কেশিয়াড়ি ব্লকের ৭ নম্বর কেশিয়াড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচন হবে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর। তবে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়ায় প্রধান পদের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের তরফে আপাতত ব্লক সভাপতির অনুগামী এক মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যের নাম সামনে এসেছে। আর তাতে বিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত ব্লকের এক জেলা নেতার অনুগামীদের ক্ষোভ বাড়ছে।
গত বছর পঞ্চায়েতে নির্বাচনে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েতের ১৬টি আসনের মধ্যে ১১টিতেই জেতে। তবে প্রধান পদের জন্য ওবিসি সংরক্ষিত মহিলা তৃণমূল সদস্য পাওয়া যায়নি। তাই সিপিএমের জয়ী প্রার্থী কুমারহাটির সন্ধ্যা কর ছিলেন ওই পদের একমাত্র দাবিদার। কিন্তু বোর্ড গঠনের দিন সিপিএমের কোনও সদস্য হাজির না থাকায় প্রধান পদ ফাঁকা থেকে যায়। সিপিএমের অভিযোগ ছিল, তৃণমূলের সন্ত্রাসে দলীয় সদস্যরা আসতে পারেননি। এতদিন তৃণমূলের উপপ্রধান শেফালি পাহাড়িই পঞ্চায়েতের যাবতীয় কাজ সামলেছেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে প্রধান পদের জন্য নির্বাচন করতে হয়। ৯ সেপ্টেম্বর বোর্ডের একবছর হচ্ছে। তাই তার আগেই প্রধান নির্বাচনের দিন ঠিক হয়েছে। বিডিও অসীমকুমার নিয়োগী বলেন, “জেলাশাসকের নির্দেশ মেনে আমি নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। সব পঞ্চায়েত সদস্যকে নির্বাচনে যোগ দেওয়ার চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই তৃণমূলের অন্দরে প্রার্থী নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকিসরিষা থেকে নির্বাচিত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য ভারতী পাতর সম্প্রতি ওবিসি শংসাপত্র পেয়েছেন। তাঁকেই প্রধান পদের দাবিদার হিসেবে প্রস্তাব করছেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগদীশ দাস। সিপিএম এ বার আর প্রধান পদে লড়বে না। দলের জোনাল সম্পাদক ভবানী গিরি বলেন, “আমাদের যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, সেখানে প্রধান পদ দাবির প্রশ্ন আসে না। কারণ, এতে কাজ করা যায় না।” তাতেও অবশ্য ভারতী দেবীর জয় নিঃসংশয় হচ্ছে না। তৃণমূল সূত্রে খবর, কেশিয়াড়ির বাসিন্দা তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য বিষ্ণুপদ দে-র অনুগামী পাঁচ পঞ্চায়েত সদস্যকে নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন জগদীশবাবু। আশঙ্কা, ভারতীদেবীর পক্ষে ভোট না-ও দিতে পারেন ওই পাঁচ তৃণমূল সদস্য। সে ক্ষেত্রে সমীকরণ আরও জটিল হবে।
হিসেব বলছে, জগদীশ অনুগামী ভারতীদেবী-সহ ছ’জন রয়েছেন এক দিকে। আর বিরোধী বিষ্ণুপদ গোষ্ঠীতে রয়েছেন উপ-প্রধান শেফালি পাহাড়ি-সহ পাঁচ জন। সিপিএমের আরও এক মহিলা ওবিসি প্রার্থীকে বিষ্ণুপদ গোষ্ঠী দলে টানার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও খবর। জগদীশবাবু বলেন, “ওই নির্বাচনে দলের নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের সব সদস্যকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। কেউ যদি অনুপস্থিত থাকেন বা উপস্থিত থেকেও দলের মনোনীত একমাত্র ওবিসি প্রার্থী ভারতী পাতরকে সমর্থন না করেন সেটা ফলাফলেই প্রকাশ পাবে। সেক্ষেত্রে ব্লক সভাপতি হিসেবে আমি পদক্ষেপ করব।” এ প্রসঙ্গে বিষ্ণুপদ দে-র বক্তব্য, “ব্লক সভাপতি ভারতী পাতরকে মনোনীত করলেই তো হল না। সর্বসম্মতিক্রমে প্রার্থী মনোনয়ন করতে হয়। অন্য কারও ওবিসি শংসাপত্র আছে কি না দেখতে হবে।” এই জটিলতার মধ্যে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত আদৌ নতুন প্রধান পায় কিনা, সে দিকেই সকলে তাকিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy