Advertisement
E-Paper

প্রবাসীকে মৃত দেখিয়ে জমি জালিয়াতির নালিশ

স্বামীর সঙ্গে জার্মান প্রবাসী এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তাঁর পৈতৃক জমি হস্তান্তরের অভিযোগ উঠল তাঁর পরিজনদের বিরুদ্ধে। কোলাঘাট থানার বড়িশা গ্রামের এই ঘটনায় দীপা চক্রবর্তী নামে ওই প্রৌঢ়া স্বামীর সঙ্গে বুধবার কোলা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে সশরীরে হাজির হন। পঞ্চায়েতে তাঁর জেঠতুতো তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে জাল দলিল তৈরি করে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগও জানিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:১৫

স্বামীর সঙ্গে জার্মান প্রবাসী এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তাঁর পৈতৃক জমি হস্তান্তরের অভিযোগ উঠল তাঁর পরিজনদের বিরুদ্ধে। কোলাঘাট থানার বড়িশা গ্রামের এই ঘটনায় দীপা চক্রবর্তী নামে ওই প্রৌঢ়া স্বামীর সঙ্গে বুধবার কোলা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে সশরীরে হাজির হন। পঞ্চায়েতে তাঁর জেঠতুতো তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে জাল দলিল তৈরি করে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগও জানিয়েছেন তিনি। ঘটনার কথা স্বীকার করে কোলা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মৌমিতা মণ্ডল বলেন, “জীবিত ব্যক্তিকে মৃত বলে জানিয়ে ও ভুয়ো ছবি দিয়ে জাল দলিল তৈরি করে জমি হস্তান্তরের অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক তদন্তের জন্য সুপারিশ করা হবে।” এ দিকে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দীপাদেবীর সেই জেঠতুতো তিন ভাই অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোলাঘাট বাজার সংলগ্ন বড়িশা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন সুধীর চক্রবর্তী। সুধীরবাবুর এক মেয়ে দীপা ওরফে মান্তু ও এক ছেলে পিনাকী চক্রবর্তী ওরফে পিন্টু। বড়িশা গ্রামে পৈতৃক জমি ছাড়াও নিজের বাড়ি ছিল সুধীরবাবুর। যদিও কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার বেহালায় থাকতেন সুধীরবাবুর পরিবার। সুধীরবাবুর স্ত্রী ১৯৯১ সালে মারা যান। সুধীরবাবু মারা যান ১৯৯৪ সালে। সুধীরবাবুর ছেলে পিনাকি এখন বেহালার সুকান্তপল্লির বাসিন্দা। মেয়ে দীপা চক্রবর্তী বিবাহ সূত্রে জার্মানির হামবুর্গের বাসিন্দা। মারা যাওয়ার আগে সুধীরবাবু বড়িশায় পারিবারিক নিজের জমিতে বাড়ি তৈরি করতে গেলে ওই জমি নিয়ে শরিকি বিরোধের জেরে মামলা হয়।

দীপাদেবীর জেঠতুতো ভাই আলোমোহন চক্রবর্তীর দাবি, পিনাকী তাঁর দিদিকে মৃত দেখিয়ে নিজেকে ওই জমির একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে জানায়। বড়িশা গ্রামে তাঁদের পারিবারিক জমির মধ্যে দু’টি দাগে মোট ৩০ ডেসিমল জমি পিন্টু চক্রবর্তী তাঁর জেঠতুতো তিন ভাই আলোমোহন চক্রবর্তী, প্রলয় চক্রবর্তী ও মলয় চক্রবর্তীকে ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট তারিখে মোট ৫ লক্ষ টাকা দামে বিক্রি করেছেন, এই মর্মে দলিল তৈরি করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। দীপাদেবীর অভিযোগ, “জমি হস্তান্তরের ওই দলিলে পিন্টু চক্রবর্তীর ছবি ও স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।” দীপাদেবী বলেন, “আমাকে মৃত দেখিয়ে দু’বছর আগে আমার ভাই পিনাকি ওরফে পিন্টু আমারই জেঠতুতো তিন ভাইকে জমি বিক্রি করেছে বলে জানতে পারি। খোঁজ নিয়ে দেখি জমি বিক্রির দলিলে আমার ভাইয়ের যে ছবি দেওয়া হয়েছে তা ওর নয়। আর পিনাকির যে সাক্ষর রয়েছে তাও জাল।”

বর্তমানে জার্মানি ও ভারত দুই দেশের নাগরিক ওই দম্পতি কলকাতায় যোধপুর পার্কে নিজেদের ফ্ল্যাটেই রয়েছেন। স্বামী রঞ্জিত সেনগুপ্ত পড়াশোনা ও কর্মসূত্রে দীর্ঘ ৫৫ বছর ধরে জার্মানির বাসিন্দা। বুধবার কোলা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে দীপাদেবী ও তাঁর স্বামী রঞ্জিত সেনগুপ্ত অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন।

পেশায় রেল কর্মী আলোমোহনবাবুর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করতেই তিনি বেরিয়ে আসেন। এরপর পাশাপাশি বাড়িতে থাকা আরও দুই ভাইকে ডেকে নিয়ে আলোমোহনবাবু দাবি করেন, “কয়েকবছর আগে পিন্টু আমাদের কাছে এসে তাঁদের এখানকার জমি বিক্রির কথা বলেছিল। তারপরেই দাম ঠিক করে পিন্টুর কাছ থেকে আমরা মোট ৩০ ডেসিমল জমি কিনেছি।” প্রশ্ন উঠছে, জমির দলিলে পিনাকীর বদলে পিন্টুর নাম ব্যবহার হল কী করে? আর দীপাদেবীর মারা যাওয়ার বিষয়ে আলোমোহনবাবু নিজে কোনও খোঁজ নিয়েছিলেন? আলোমোহনবাবু বলেন, “পিন্টুই জানিয়েছিল দীপাদেবী মারা গিয়েছে। আমরা ওর কথা বিশ্বাস করে উত্তরাধিকারী হিসেবে পিন্টুর কাছ থেকে জমি কিনেছি।” তাঁর কথায়, “বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী দিদি আর আমি। বাবার সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য আমি কারও সঙ্গে কথাও বলিনি। ফলে আমার দিদিকে মৃত বলে দেখিয়ে আমার নামে জমি বিক্রির জন্য যাঁরা জাল দলিল করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

tamluk land fraud
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy