এই বাড়ি ঘিরেই যাবতীয় চর্চা।— নিজস্ব চিত্র
পেল্লায় বাড়ি, আসবাব, আলমারি বন্দি সোনাদানার হবেটা কী? বাড়ির কর্তা দীপককুমার ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী মনীষাদেবীর মৃত্যুর পরে মেদিনীপুর শহরের বিধাননগর এলাকা এখন এই চর্চাতেই সরগরম। দীর্ঘদিন উচ্চ সরকারি পদে চাকরি করা দীপকবাবুর উত্তরসূরি কে, এলাকার মানুষ তা জানেন না। তাই বাড়ির চাবি আপাতত রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মৌ রায়ের হাতে। তিনি বলেন, “স্থানীয় মানুষের দাবি মেনে বাড়ির চাবি নিজের কাছে রেখেছি। এখন চাই প্রকৃত উত্তরসূরির হাতে চাবি তুলে দিতে। দীপকবাবুর পরিচিতদের সঙ্গে কথাও বলেছি। কিন্তু সন্তান বা নিজের দাদা-ভাই কারও সন্ধান পাচ্ছি না।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীপকবাবু সরকারি আধিকারিক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। মেদিনীপুরে জমি অধিগ্রহণ দফতরে কাজ করেছেন। তারপর ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক হিসেবে বদলি হয়ে যান। পরে আবার মেদিনীপুরে ফিরে আসেন অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসাবে। জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসাবে চাকরি থেকে অবসর নেন দীপকবাবু। সেই সময়ই বিধাননগরে বাড়ি তৈরি করেন। মাস তিনেক হল দীপকবাবু মারা গিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী মনীষাদেবীও মারা গিয়েছেন মাস খানেক আগে। মৃত্যুর পরে স্থানীয় বাসিন্দারাই সত্কার করেছেন। চাঁদা তুলে শ্রাদ্ধশান্তিও করেছেন। কাউন্সিলর মৌদেবী বলেন, “সত্কার থেকে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান পাড়ার সকলে চাঁদা তুলেই করেছি। সেই সময় জনা কয়েক আত্মীয় এসেছিলেন। দু’-একজন বোন পরিচয় দিয়ে সম্পত্তি তাঁদের বলে নেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু কেউ প্রকৃত শরিকের খোঁজ খবর দিতে পারেননি।” এরপরই পাড়ার সকলে বৈঠক করে বাড়ি চাবি স্থানীয় কাউন্সিলর মৌদেবীকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রিনা মহাপাত্র, শিবানী ভকতদের কথায়, “মৃত্যুর সময় তো বাড়ি খোলাই ছিল। আলমারির পাল্লাও খোলা ছিল। অনেকেই তখন দেখেছেন যে, আলমারিতে বিমার কাগজপত্র, সোনার অলঙ্কার রয়েছে। সেই লোভে যদি কেউ কিছু করে বসে, তাই সকলে মিলে আলোচনার মাধ্যমে কাউন্সিলরের হাতে চাবি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” এ দিকে, বাড়ি চাবি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মৌদেবী। তাঁর বক্তব্য, “একজন সরকারি পদস্থ আধিকারিকের বাড়িতে অনেক গয়না, মূল্যবান জিনিস, তাছাড়া বিমা ও ব্যাঙ্কেও প্রচুর টাকা থাকার কথা। এই সময় যদি বাড়িতে চুরি হয়ে যায় বা অন্য কোনও ভাবে কেউ সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়, তাহলে তো আমার বদনাম হয়ে যাবে।”
দীপকবাবুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল মেদিনীপুর পুরসভার কর্মী দেবাশিস সুকুলের। তাঁর কথায়, “আমার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রে জানতে পেরেছিলাম, ওঁর দু’টি বিয়ে। প্রথম পক্ষের দু’ই কন্যাও রয়েছে। দ্বিতীয় পক্ষে সন্তান নেই। কিন্তু দুই কন্যার কোনও ঠিকানা আমার জানা নেই।” এ ব্যাপারে আইনজীবী রঞ্জন সরকার বলেন, “স্ত্রী, সন্তান, মা, বাবা যেমন শরিক, তেমনই আবার তেমন কেউ না থাকলে ভাই, বোন, ভাইপো, ভাইঝি থেকে ভাগ্নে, ভাগ্নীও শরিক হতে পারেন। তেমনও কেউ না পাওয়া গেলে তখন সম্পত্তি চলে যাবে সরকারের হাতে। তবে শরিকের প্রকৃত খোঁজ করা হয়েছে কিনা আদালত তা দেখবে।”
নিতান্তই কাউকে না পেলে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কাউন্সিলার। তাঁর কথায়, “বিজ্ঞাপন দিতেও তো অনেক খরচ। তাই প্রথমে চেষ্টা করছি যদি দীপকবাবুর পরিজনেদের খোঁজ মেলে। নাহলে নিজেদেরই বিজ্ঞাপনের খরচ জোগাড় করতে হবে। তার আগে যদি কেউ উপযুক্ত নথি নিয়ে আসেন তাহলে আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁকে বাড়ির চাবি দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy