Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পোস্ত চাষের ফাঁদ থেকে চাষিদের বাঁচাতে প্রচার

পোস্ত চাষ বেআইনি। তা-ও গ্রামবাংলার একাংশ চাষি মুনাফার লোভে এই চাষ করে থাকেন। অভিযোগ, একটি দুষ্ট চক্র আগাম টাকা দিয়ে গরিব চাষিদের পোস্ত চাষে বাধ্য করে। এ কথা প্রশাসনের অজানা নয়। তাই বেআইনি এই চাষ ঠেকাতে প্রচারকে হাতিয়ার করছে কৃষি দফতর।

কেশপুরের রাস্তায় প্রচার গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

কেশপুরের রাস্তায় প্রচার গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

বরুণ দে
কেশপুর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৩৭
Share: Save:

পোস্ত চাষ বেআইনি। তা-ও গ্রামবাংলার একাংশ চাষি মুনাফার লোভে এই চাষ করে থাকেন। অভিযোগ, একটি দুষ্ট চক্র আগাম টাকা দিয়ে গরিব চাষিদের পোস্ত চাষে বাধ্য করে। এ কথা প্রশাসনের অজানা নয়। তাই বেআইনি এই চাষ ঠেকাতে প্রচারকে হাতিয়ার করছে কৃষি দফতর।

শীতেই পোস্ত চাষ হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের মধ্যে সব থেকে বেশি পোস্ত চাষ কেশপুরে হয় বলে অভিযোগ। গত বছরও কেশপুরের বিভিন্ন এলাকায় পোস্ত চাষ হয়েছিল। পুলিশ-প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু জমিতে পোস্ত চাষ নষ্ট করে দেয়। এ নিয়ে চাষিদের মধ্যে অসন্তোষও দেখা দেয়। এ বার তাই কেশপুর দিয়েই প্রচার অভিযান সতর্কতামূলক প্রচার শুরু করেছে কৃষি দফতর। মাইক বাজিয়ে, হ্যান্ডবিল বিলি করে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালানো হচ্ছে। জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “পোস্ত চাষ যে আইনত দণ্ডনীয়, প্রচারে তাই জানানো হচ্ছে। কোনও ভাবেই যাতে অবৈধ পোস্ত চাষ এ বার না হয়, সেই জন্যই এই সতর্কতামূলক প্রচার।” তাঁর কথায়, “পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদেরও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, এলাকায় অবৈধ পোস্ত চাষের খবর পেলেই তা জানাতে।”

মেদিনীপুর সদর, গড়বেতা, শালবনি-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কয়েকটি ব্লকে পোস্ত চাষ হয়। তবে এর মধ্যে কেশপুরেই সব থেকে বেশি পোস্ত চাষ হয় বলে অভিযোগ। এক সূত্রের খবর, গত বছর কেশপুরের প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে পোস্ত চাষ হয়েছিল। এ বার তাই সেখানে সতর্কতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। কেশপুরের ব্লক কৃষি আধিকারিক শিমুল ভট্টাচার্য বলেন, “চাষিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই এই প্রচার।” পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্তা জানান, প্রধান এবং পঞ্চায়েত সদস্যদেরও বলে দেওয়া হয়েছে, এলাকায় অবৈধ পোস্ত চাষ হলে তার খবর আগাম না জানালে চাষে তাঁদের মদত রয়েছে বলেই ধরে নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, পোস্ত চাষ করে ধরা পড়লে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হতে পারে।

জানা গিয়েছে, অসাধু চক্রের লোকজন গ্রামাঞ্চলের গরিব চাষিদের টাকার লোভ দেখিয়ে পোস্ত চাষ করায়। চাষিদের বোঝানো হয় বিকল্প হিসেবে পোস্তই ভাল। বাদাম, ভুট্টা, সর্ষে চাষে যা লাভ হয় পোস্ত চাষ করে তার কয়েকগুণ বেশি লাভ হবে। একাংশ চাষি প্রলোভনে পা-ও দেন। পরে পুলিশ-প্রশাসন এসে চাষ নষ্ট করলে সমস্যায় পড়েন তাঁরা। জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা মানছেন, “কিছু লোকজন গরিব চাষিদের ভুল বুঝিয়ে টাকার লোভ দেখিয়ে পোস্ত চাষ করায়। বাড়তি লাভের মুখ দেখার আশায় কিছু চাষিও পোস্ত চাষ করেন। তাঁরা হয়তো জানেনই না যে পোস্ত চাষ আইনত দণ্ডনীয়। অবৈধ ভাবে পোস্ত চাষ করলে পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে।”

পোস্ত থেকেই আফিম জাতীয় নেশার জিনিস তৈরি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এখন আবার যুব সমাজের একাংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের কাছে সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে নিষিদ্ধ মাদকের পুরিয়া। জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তার মতে, “এই পরিস্থিতিতে পোস্ত চাষ বন্ধ করা খুব জরুরি।” একই তাঁর দাবি, আগের থেকে জেলায় পোস্ত চাষ অনেক কমেছে। এ বছর কোথাও চাষ শুরু হয়েছে বলে খবর নেই। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, পোস্ত চাষ কোথায় হয়েছে তা জানতে এখন উপগ্রহ-চিত্রেরও সাহায্য নেওয়া হয়। যে সব জায়গা সাদা ফুল-সহ গাছে চিহ্নিত, সেখানেই চলে অভিযান। কৃষি দফতরের ওই কর্তার বক্তব্য, “এলাকায় পোস্ত চাষ হয়েছে দেখলে কেউ যদি আমাদের জানান, আমরা তাঁর পরিচয়ও গোপন রাখব।”

এই সতর্কতামূলক প্রচার পোস্ত চাষের রাশ টানতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

barun dey keshpur poppy seeds
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE