Advertisement
E-Paper

পরপর গাড়ির চাকা চুরি, পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ

পরপর তিনটি গাড়ির চাকা চুরি হল মেদিনীপুর শহরে। এবং সবক’টিই কোতয়ালি থানা এলাকাতেই! একটি ঘটনার সঙ্গে অন্যটির দূরত্বও বেশি নয়। তবু কোনও ক্ষেত্রেই ঘটনার কিনারা করতে পারল না পুলিশ। স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাস ও লরির মালিকদের মধ্যে।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩০
এমনই একাধিক গাড়ির চাকা চুরি।

এমনই একাধিক গাড়ির চাকা চুরি।

পরপর তিনটি গাড়ির চাকা চুরি হল মেদিনীপুর শহরে। এবং সবক’টিই কোতয়ালি থানা এলাকাতেই! একটি ঘটনার সঙ্গে অন্যটির দূরত্বও বেশি নয়। তবু কোনও ক্ষেত্রেই ঘটনার কিনারা করতে পারল না পুলিশ। স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাস ও লরির মালিকদের মধ্যে। অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের ধরার দাবিতে সোচ্চার হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও।

সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলছেন, “ভাবতেই অবাক লাগছে পাঁচ দিনের মাথায় পরপর তিনটি গাড়ির চাকা চুরি হল। অথচ পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরতে পারল না! এ ভাবে চললে তো দুষ্কৃতীরা আরও প্রশ্রয় পাবে। বাড়বে চুরি। অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের ধরতে সংগঠনগত ভাবেও এ বার পুলিশের কাছে দাবি জানাব।”

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম চাকা চুরির ঘটনাটি ঘটে মেদিনীপুর শহর ঘেঁষা ধর্মা এলাকায়। পরের ঘটনাটি সোমবার রাতের। ধর্মা থেকে কিলোমিটার দেড়েক দূরে মোহনপুর সেতুর কাছে। পর দিনই আরও একটি ঘটনা ঘটে মোহনপুর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে হরিশপুর এলাকায়। সেখানে আবার একটি লরির চাকা খোলার পর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বিতীয় লরিরও চাকা খোলার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। যদিও স্থানীয়রা জেগে যাওয়ায় দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। তবে এখানে একটি লরির চাকার সঙ্গে দু’টি লরির ব্যাটারিও খুলে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

প্রশ্ন উঠেছে, হঠাত্‌ করে কী ভাবে এই ধরনের চুরির আমদানি ঘটল। মেদিনীপুর শহর ও শহর লাগোয়া এলাকায় চুরি, ছিনতাই বেড়েছে, এটা সবার জানা। রাস্তা দিয়ে কোনও মহিলা গলায় সোনার হার পরে হাঁটলে মোটর বাইকে চড়েই দুষ্কৃতীরা গলা থেকে তা ছিনিয়ে নিয়ে পালায়। বাড়ির সামনে থেকে, ব্যাঙ্ক বা বাজারের সামনে থেকে মোটর সাইকেল, সাইকেল চুরির ঘটনাও বেড়েছে। মোটর সাইকেল রেখে একটু অন্য দিকে গেলে মুহূর্তে চুরি হয়ে যাচ্ছে মোটর বাইক।

রেহাই পাননি তৃণমূল কাউন্সিলরও। তৃণমূল কাউন্সিলর শিপ্রা মণ্ডলের ছেলে বুদ্ধ মণ্ডলের কথায়, “বাড়ির বারান্দায় মোটর বাইকটি রাখা ছিল। অবাক লাগছে, সেখান থেকেও দুষ্কৃতীরা তা নিয়ে পালিয়েছে। কী দুঃসাহস।!’’ অভিযোগ, এই দুঃসাহসিকতার পিছনে রয়েছে এক শ্রেণির পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে দুষ্কৃতী-যোগ। নতুবা এমন ঘটনা ঘটতে পারে না বলেই অনেকের মত। পুলিশ যদি সক্রিয় না হয়, দুষ্কৃতী না ধরতে পারে, তা হলে তো সাহস বাড়বেই। তাই একটি বাসের চারটি চাকা খোলার পরপর দু’দিনে দু’টি গাড়ির চাকা খোলার সাহস দেখিয়েছে দুষ্কৃতীরা।

কোথাও একটি চুরির ঘটনা ঘটলে স্বাভাবিক কারণেই সেই এলাকায় পুলিশি নজরদারি থাকে বেশি। তল্লাশিও চালায় পুলিশ। সে সব পরোয়া না করে, কোনও বাধার মুখে না পড়ে কী ভাবে দুষ্কৃতীরা পালাল? এখানেই দুষ্কৃতী-পুলিশ যোগের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। কারণ, চাকা খুলতে অনেকটাই সময় লাগে। জ্যাক লাগিয়ে গাড়ি তুলতে হয়, নাট বোল্ট খুলতেও সময় লাগে। ভারি ভারি চাকাকে অন্য গাড়িতে তুলতে হয়। তারপর পালানো। তার মধ্যেও পুলিশের টহলদারি গাড়ির দেখা মেলে না! যা অবাক করে দিয়েছে সকলকে।

পলাশ দাসের বাসের চাকা চুরি গিয়েছে। তাঁর কথায়, “বিষয়টি জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তাদের কানে তোলার চেষ্টা করেছি। তদন্ত করার জন্য পুলিশকে সব ধরনের সাহায্যের কথাও জানিয়েছি। তবু কিছুই হয়নি।” একই কথা আনসার মল্লিকেরও। তাঁরও গাড়ির চাকা চুরি গিয়েছে। তিনি বলছেন, “পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকলে আরও সমস্যা অপেক্ষা করছে।”

বাস ও লরি মালিকরা জানিয়েছেন, গাড়িগুলি সব সময় বাইরেই রাখা হয়। এক একটি মালিকের একাধিক বাস ও লরি রয়েছে। সবার পক্ষে ওই ধরনের বৃহত্‌ গাড়ি রাখার মতো জায়গা পাওয়া কঠিন। আবার খোলা জায়গাতে রাখলেও তো সমস্যা! পলাশবাবুর কথায়, “দুষ্কৃতীরা তো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আসছে। রাতে গাড়ি দেখভালের জন্য যদি ৪-৫ জনকেও রাখি, তাঁরা কী করবেন? উল্টে তো চাকার সঙ্গে দু’জনের প্রাণও চলে যাবে!”

পুলিশ এত নিষ্ক্রিয় কেন? তার অবশ্য সদুত্তর মেলেনি। থানার অফিসারেরা ‘তদন্ত চলছে’ বলেই দায় এড়াচ্ছেন। ততই দুশ্চিন্তা বাড়ছে পরিবহণ ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তিদের।

car wheel theft suman ghosh midnapore medinipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy