Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পশ্চিমে তবু মিলল বাস, পূর্বে দুর্ভোগ

২১শে জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সমাবেশে যোগ দেওয়া নিয়ে পরিবহণের দুই পৃথক চিত্র সামনে এল দুই মেদিনীপুরে। সিংহভাগ তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ট্রেনে করে ধর্মতলার সমাবেশে যাওয়ায় বাস-সহ অন্য পরিবহণ আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক থাকল পশ্চিম মেদিনীপুরে। অন্য দিকে, আশঙ্কাকে সত্যি করে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন, সোমবারে পূর্ব মেদিনীপুরে বিপর্যস্ত হল পরিবহণ ব্যবস্থা।

বাদুড়ঝোলা। সোমবার সকালে এমনই ছিল বাসের হাল। হলদিয়া- মেচেদা রাজ্য সড়কে পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

বাদুড়ঝোলা। সোমবার সকালে এমনই ছিল বাসের হাল। হলদিয়া- মেচেদা রাজ্য সড়কে পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০০:৪০
Share: Save:

২১শে জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সমাবেশে যোগ দেওয়া নিয়ে পরিবহণের দুই পৃথক চিত্র সামনে এল দুই মেদিনীপুরে। সিংহভাগ তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ট্রেনে করে ধর্মতলার সমাবেশে যাওয়ায় বাস-সহ অন্য পরিবহণ আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক থাকল পশ্চিম মেদিনীপুরে। অন্য দিকে, আশঙ্কাকে সত্যি করে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন, সোমবারে পূর্ব মেদিনীপুরে বিপর্যস্ত হল পরিবহণ ব্যবস্থা।

২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যাওয়ার জন্য এত দিন বেসরকারি বাসভাড়া করাই ছিল দস্তুর। সেই প্রবণতা জারি রেখে পূর্ব মেদিনীপুরে বিভিন্ন রুটের বাস বিচ্ছিন্ন ভাবে তুলে নেওয়ায় দুর্ভোগে নাজেহাল হলেন জেলার অধিকাংশ নিত্যযাত্রী। এ দিন সকাল থেকেই হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য ও জাতীয় সড়ক, হলদিয়া-মেদিনীপুর, মেচেদা-দিঘা, ঘাটাল-পাঁশকুড়া, এগরা-হাওড়ার মত গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলিতে বাস তুলনায় কম ছিল। ফলে অধিকাংশ বাসস্ট্যান্ডেই নিত্যযাত্রী-সহ সাধারণ মানুষকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। হাতে গোনা যে গুটিকয়েক বাস চলেছে, সেগুলি ছিল ভিড়ে ঠাসা।

সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অফিস, স্কুল-কলেজে যাওয়ার জন্য বাস পেতে নাজেহাল হন নিত্যযাত্রীরা। বাস না পেয়ে অতিরিক্ত পয়সা খরচ করে ট্রেকার, ট্যাক্সি, মেশিনভ্যান, ম্যাজিক ভ্যানে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন বহু মানুষ। অভিযোগ, সেই সুযোগে অন্য দিনের চেয়ে এ দিন বেশি ভাড়া হাঁকেন অধিকাংশ যান-চালকই। বাস মালিক সংগঠন সূত্রে খবর, হলদিয়া থেকে তমলুক হয়ে মেচেদা রাজ্য সড়কে শতাধিক বাস চলে। এ দিন তার সিংহভাগ বাস তুলে নেওয়ায় এই রুটের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কেও পঞ্চাশটির বেশি বাস চলে। সোমবার এই রুট থেকেও অর্ধেকরেও বেশি বাস তুলে নেওয়া হয় বলে বাস মালিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে। কম চলেছে পাঁশকুড়া-ঘাটাল রুটের বাসও। তুলনায় ভাল ছিল নন্দীগ্রাম থেকে বিভিন্ন রুটের বাস।

মেদিনীপুর সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা।

এ দিন সকালে ঘাটালের গোপীগঞ্জে যাওয়ার জন্য পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন শুভঙ্কর দাস। তিনি বলেন, “কলকাতায় সমাবেশের জন্য এখানে বাস কম চলবে, এ কথা জানা ছিল না। যা অবস্থা, কোনও রকমে বাড়ি ফিরতে পারলেই হল!” তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড়ের হলদিয়া ও মেচেদাগামী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল, অপেক্ষমান যাত্রীদের ভিড় যেন মেলার চেহারা নিয়েছে। বাস এলেই চলছে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি। হলদিয়া, মহিষাদল, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, বাজকুল থেকে তমলুক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা সাধারণ বাসিন্দাদের অনেকেই বাড়ি ফেরার জন্য বাস না পেয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ট্রেকার, ম্যাজিক, মেশিনভ্যান, ট্যাক্সিতে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন। ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্যে জেলা হাসপাতালে এসেছিলেন মহিষাদলের তেরপেক্ষ্যার গৃহবধূ অনিমা সামন্ত। তিনি বলেন, “সকালে কোনও রকমে বাসে চেপে তমলুকে এসেছিলাম। এখন কী করে ফিরব বুঝতে পারছি না!”

সমাবেশে যোগ দিতে অনেকে দলীয় ভাবে ভাড়া করা বাসে কলকাতায় রওনা দেন। তবে হাউর, পাঁশকুড়া, ক্ষীরাই, ভোগপুর, মেচেদা, কোলাঘাট, দিঘা, কাঁথি, বাজকুল, হলদিয়া, তমলুক থেকে অনেকেই ট্রেনে চেপে সমাবেশে যান।

অন্য দিকে, ট্রেনে করেই সমাবেশে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্ব। সেই মতো দলের অনেক কর্মী-সমর্থকই সোমবার ট্রেনে করে সমাবেশে যান। ফলে, জেলায় বাস পরিবহণ ব্যবস্থা মোটের উপর স্বাভাবিক ছিল। কিছু রুটের অন্য দিনের থেকে বাস কম ছিল। তবে এর জন্য নিত্যযাত্রীদের চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। একটু অপেক্ষা করার পর বাস পেয়ে গিয়েছেন।

পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর দিয়ে প্রতিদিন আটশোরও বেশি বেসরকারি বাস চলে। জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, “এ দিন সব মিলিয়ে ১৩০-১৫০টি বাস ভাড়া করা হয়েছিল। ফলে, বাস পরিবহণ ব্যবস্থা মোটের উপর স্বাভাবিকই ছিল। নিত্যযাত্রীদের তেমন সমস্যা হয়নি।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “আমাদের জেলা থেকে প্রচুর কর্মী-সমর্থক সোমবার কলকাতায় গিয়েছিলেন। সকলকে ট্রেনে করে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো অনেকে ট্রেনেই গিয়েছেন।”

বস্তুত, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যাওয়ার জন্য এত দিন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ আগে থেকেই বাসভাড়া করে নিতেন। এ বারও বেশ কয়েক’টি ব্লক নেতৃত্ব বাস ভাড়া করেন। তবে পরবর্তী সময়ে দলের নির্দেশে তা বাতিল করেন। নেতৃত্বের নির্দেশ ছিল, প্রয়োজনে ভাড়া করা বাসে নিকটবর্তী স্টেশনে যাওয়া যাবে। স্টেশন থেকে ট্রেনে করেই হাওড়া পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে মিছিল করে ধর্মতলায়। দলের ওই সূত্রে খবর, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই জেলা নেতৃত্ব এই নির্দেশ দেন। নেতৃত্ব মনে করেছেন, এর ফলে একদিকে যেমন বাস ভাড়া বাঁচবে, অন্যদিকে তেমন কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বাড়তি উন্মাদনা দেখা দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE