Advertisement
E-Paper

ফিকে নন্দীগ্রাম, ভোটের সুর বাঁধা উন্নয়নে

পাঁচ বছর আগে তমলুক কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচনে নির্ণায়ক ছিল নন্দীগ্রাম। ২০০৯ সালের সেই ভোটে তৎকালীন শাসক বামফ্রন্টের রাজনৈতিক জমি আলগা হয়েছিল। নন্দীগ্রাম জমিরক্ষা আন্দোলনের সেনাপতি তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী সে বার সিপিএমের লক্ষ্মণ শেঠকে হেলায় হারিয়ে দিয়েছিলেন নন্দীগ্রাম হাওয়াতেই। ২০১১ সালে পরিবর্তনের নির্বাচনেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অনুঘটকের কাজ করেছিল নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০১:৪৭
মহিষাদলে সিআরপির মহিলা বাহিনীর টহল। ছবি: আরিফ ইকবাল খান।

মহিষাদলে সিআরপির মহিলা বাহিনীর টহল। ছবি: আরিফ ইকবাল খান।

পাঁচ বছর আগে তমলুক কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচনে নির্ণায়ক ছিল নন্দীগ্রাম। ২০০৯ সালের সেই ভোটে তৎকালীন শাসক বামফ্রন্টের রাজনৈতিক জমি আলগা হয়েছিল। নন্দীগ্রাম জমিরক্ষা আন্দোলনের সেনাপতি তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী সে বার সিপিএমের লক্ষ্মণ শেঠকে হেলায় হারিয়ে দিয়েছিলেন নন্দীগ্রাম হাওয়াতেই। ২০১১ সালে পরিবর্তনের নির্বাচনেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অনুঘটকের কাজ করেছিল নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ।

ফের সেই নন্দীগ্রামের জেলায় নির্বাচন। এ বারের লোকসভা ভোটেও ঘুরে ফিরে নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ এসেছে। তবে ততটা জোরদার ভাবে নয়। বাম শিবির নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিটকে এ বার প্রচারে হাতিয়ার করেছে ঠিকই, সেই সঙ্গে এটাও ঠিক যে গত পাঁচ বছরে অনেকটাই বদলেছে জমি-আন্দোলনের আঁতুড়ঘরের চেহারা। পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ, রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তাই শুধু নন্দীগ্রামের জমি-আন্দোলন নয়, এ বার তৃণমূলের প্রচারের প্রধান হাতিয়ার জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন। কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কার, সমুদ্রবাঁধ মেরামতি, হিজলি টাইডাল ক্যানেল-সহ জেলার বিভিন্ন বড়বড় খাল সংস্কার, তমলুক-পাঁশকুড়া, বাজকূল-এগরা রাজ্য সড়কের সম্প্রসারণ, গ্রামীণ এলাকায় পাকা রাস্তা নির্মাণের মতো বিষয় নিয়ে প্রচার চালিয়েছে তৃণমূল। অন্য দিকে বিরোধী সিপিএম হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে নতুন কারখানা না হওয়া, কর্মসংস্থানে ঘাটতি অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে। মূলত উন্নয়ন আর শিল্পায়ন প্রসঙ্গেই এ বার তমলুকে ভোট প্রচারের সুর বাধা ছিল।

উন্নয়ন আর শিল্পায়ন প্রসঙ্গে পাশাপাশি এসেছে রাজনীতিও। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতেই এ বারের অন্যতম বড় ঘটনা একদা সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা লক্ষ্মণ শেঠের বহিষ্কার। তমলুক থেকে সিপিএমের তিনবারের জয়ী প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণবাবু গত লোকসভা নির্বাচনের দিনেও নন্দীগ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দ্বায়িত্বে থাকা সিআরপি-র ডিআইজি অলোক রাজকে ফোন করে ধমকেছিলেন বলে অভিযোগ। এ বারে আর লক্ষ্মণবাবু প্রার্থী নন, সিপিএমেও তিনি নেই। তবু ভোট-তরজায় ঘুরিফিরে এসেছে লক্ষ্মণ-প্রসঙ্গ। নন্দীগ্রাম নিখোঁজ কাণ্ডে গ্রেফতারের পর থেকেই লক্ষ্মণবাবুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। লক্ষ্মণবাবুর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে সিপিএমের অভ্যন্তরেই তদন্ত কমিশন গড়া হয়। এরপরই দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন লক্ষ্মণবাবু। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসংশাও শোনা যায় তাঁর মুখে। এরপরই দলবিরোধী কাজের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয় লক্ষ্মণ শেঠকে। তার আগেই অবশ্য তমলুক কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী করে ছাত্র নেতা ইব্রাহিম আলিকে।

বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন

অন্য দিকে, বিদায়ী সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী এ বারও তৃণমূলের প্রার্থী। গত পাঁচ বছরে তিনি যা কাজ করেছেন, এ বারের ভোটে তারই পরীক্ষী হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ২০০৯ সালের নির্বাচনে তৃণমূল, কংগ্রেস, এসইউসি জোটের প্রার্থী হিসেবে শুভেন্দুবাবু পেয়েছিলেন ৫৫.৫৪ শতাংশ ভোট। আর সিপিএম প্রার্থী লক্ষ্মণ শেঠের প্রাপ্তি ছিল ৪০.৪৭ শতাংশ ভোট। তমলুক লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা থেকে লিড পেয়ে শুভেন্দুবাবু সে বার জিতেছিলেন ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৯৫৮ ভোটে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের নিরিখেও সাতটি বিধানসভাতেই এগিয়েছিল তৃণমূল। তবে ২০১২ সালে হলদিয়া পুরসভার নির্বাচনে নিজেদের জয় ধরে রাখতে সক্ষম হয় সিপিএম। পরে অবশ্য তা বামেদের হাতছাড়া হয়েছে। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও হলদিয়ার সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। তবে সামগ্রিক ভাবে জেলায় আধিপত্য বজায় ছিল তৃণমূলের।

এ বার লড়াইয়ের অঙ্ক অবশ্য একেবারে। জোট নেই। কংগ্রেস ও এসইউসি আলাদা ভাবে লড়ছে। মোদী-হাওয়ায় লড়াইয়ে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী বাদশা আলমও। গত লোকসভা নির্বাচনের বিজেপি প্রার্থী হিসেবে রাজ্যশ্রী চৌধুরী আবার নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। লক্ষ্মণ-অনুগামী হিসেবে নিজেকে দাবি করে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন কালীশঙ্কর জানাও। সব মিলিয়ে তমলুক কেন্দ্রে এ বার ১০ জন প্রার্থী। অঙ্ক যাই হোক, জয় নিয়ে অবশ্য আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল প্রার্থী। শুভেন্দুবাবু বলেন, “গতবারের চেয়ে এ বার সব চেয়ে বড় ব্যাপার হল জেলায় রাজনৈতিক শান্তি ফিরেছে আর প্রচুর উন্নয়নের কাজ হয়েছে, হচ্ছে। প্রচারে প্রচুর মানুষের সাড়াও পেয়েছি। আশাকরি বিপুল সমর্থন পাবো।” জয়ের কথা বলছেন সিপিএম প্রার্থীও। ইব্রাহিমের কথায়, “আমি নন্দীগ্রামে প্রচারে গিয়েও মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। তাই জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।”

দলের অল্পবয়সী এই নেতাকে সামনে রেখে রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব লক্ষ্মণ-কাঁটা উপড়ে ফেলতে চান। শেষমেশ তা হল কিনা, নন্দীগ্রামের ক্ষত সিপিএম মুছতে পারল কিনা, তা পরিষ্কার হবে এ বারের নির্বাচনে। একই সঙ্গে জবাব মিলবে শুভেন্দুবাবুর উন্নয়নের দাবিতে মানুষ কতটা আস্থা রাখলেন।

ananda mondal tamluk nandigram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy