Advertisement
১১ মে ২০২৪

বিচারক-পুত্রকে র‌্যাগিং, নালিশ পাল্টা মারেরও

হলদিয়ায় লক্ষ্মণ শেঠের মেডিক্যাল কলেজ আইকেয়ার-এর (ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ) প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে কলেজ হস্টেলে র‌্যাগিং, মারধরের চেষ্টার অভিযোগে নাম জড়াল দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের। সোমবার বিকেলে প্রথম বর্ষের ওই ছাত্র ভবানীপুর থানায় ‘সিনিয়র’ ৪০ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।

পড়ুয়াদের বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।

পড়ুয়াদের বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:২৮
Share: Save:

হলদিয়ায় লক্ষ্মণ শেঠের মেডিক্যাল কলেজ আইকেয়ার-এর (ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ) প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে কলেজ হস্টেলে র‌্যাগিং, মারধরের চেষ্টার অভিযোগে নাম জড়াল দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের। সোমবার বিকেলে প্রথম বর্ষের ওই ছাত্র ভবানীপুর থানায় ‘সিনিয়র’ ৪০ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সন্ধেয় কলেজের তরফে ‘বহিরাগতেরা হস্টেলে ঢুকে ছাত্রদের মারধর, ভাঙচুর করা হয়েছে’ এই মর্মে অভিযোগ দায়ের হয়।

অভিযুক্ত পড়ুয়াদের পাল্টা দাবি, প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রকে র‌্যাগিং কিংবা মারধরের চেষ্টা করা হয়নি। ওই পড়ুয়ার বাবা আদালতের বিচারক। বিচারক-বাবার প্রভাব খাটিয়ে ওই পড়ুয়াই র‌্যাগিং, মারধরের নাটক ফেঁদেছেন। এক ধাপ এগিয়ে তাঁরা বলছেন, ওই পড়ুয়াকে হস্টেলের ভিতরে ক্রিকেট খেলতে নিষেধ করা হয়েছিল, সেই আক্রোশে বিচারক-বাবার উপস্থিতিতে পুলিশ, সঙ্গে থাকা বহিরাগতেরা তাঁদের সাত-আটজনকে যথেচ্ছ পিটিয়েছে। হস্টেলেও ভাঙচুর করেছে। নিরাপত্তা চেয়ে সোমবার সকাল থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে কলেজের মেন বিল্ডিংয়ের সামনে অবস্থানে বসেছেন তাঁরা।

কলেজের অধ্যক্ষ বাঁশরি গোস্বামী বলেন, “কী হয়েছে তা জানতে তদন্ত কমিটি গড়েছি। কারা ভাঙচুর করেছে তদন্তে দেখা হবে।” একই সঙ্গে তিনি জানান, তাঁর কাছে আগে কেউ-কখনও র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ করেননি। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “এক ছাত্র অজ্ঞাত পরিচয় কিছু ছাত্রের নামে অভিযোগ করেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষও অজ্ঞাত পরিচয় লোকজনের নামে মারধর, ভাঙচুরের অভিযোগ করেছে। দু’টি অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়েছে।” কিন্তু, পুলিশের বিরুদ্ধেই তো মারধরের অভিযোগ রয়েছে? পুলিশ সুপারের জবাব, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। পুলিশ শুধু পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়েছিল।”

অভিযোগকারী প্রথম বর্ষের ছাত্রের কথায়, দাদারা আগেও তাঁকে ‘র‌্যাগিং’ করেছে। মাস দেড়েক আগে দাদারা তাঁকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখে নানা অঙ্গভঙ্গি করতে বলেছিল। অশ্লীল প্রশ্ন করেছিল। সোমবার ওই ছাত্র বলেন, “বিষয়টি আগেই কলেজ কর্তৃপক্ষকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলাম।” তাঁর কথায়, রবিবার রাতে জনা চল্লিশেক ‘সিনিয়র দাদা’ লাঠি, রড নিয়ে হঠাৎই তাঁর ঘরে হানা দেয়। বলে, ‘বেরিয়ে আয়, দেখে নিচ্ছি।’ দরজায় লাথি মারে। সঙ্গে সঙ্গে বাবাকে ফোন করি।

তাঁর বিচারক-বাবাও বলছেন, “ছেলেকে র‌্যাগিং করা হত। ছেলের ফোন পেয়ে নিজস্ব রক্ষী আর চালককে নিয়ে হস্টেলে যাই। ছেলেকে নিয়ে রাতে ফিরি।” মারধর বা ভাঙচুরের অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর দাবি, “অভিবাবক হিসাবে ছেলে আনতে গিয়েছিলাম। মারধর করতে যাব কেন?” অভিযোগকারী ছাত্রের কথায়, “বাবা হস্টেল থেকে না নিয়ে এলে খুন করে ফেলত।”

সোমবার কলেজে গিয়ে দেখা গেল, পড়ুয়ারা অবস্থান বিক্ষোভ করছেন। হস্টেলের জানালার কাঁচ ভাঙা পড়ে। জানা গেল, প্রথম বর্ষের ছাত্রেরা হস্টেল আপাতত ছেড়েছেন। কেন? অবস্থানরত পড়ুয়াদের একাংশ জানান, বহিরাগতেরা হস্টেলে আক্রমণ চালিয়েছে। তাই ওরা ভয়ে আপাতত হস্টেল ছেড়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

icare medical college haldia ragging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE