মোদী-হাওয়ায় ভর করে সমর্থন আগের থেকে বাড়বে, তা আঁচ করেছিলেন দলের জেলা নেতৃত্ব। তবে, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় যে সমর্থন এই হারে বাড়বে, তা বিজেপি সমর্থকদের কাছে অনেকটা অপ্রত্যাশিত ছিল। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের দিকে আসা এই জনসমর্থনকে ধরে রাখতে তৎপর দলের জেলা নেতৃত্ব। দলীয় নেতৃত্বের মতে, মোদী-হাওয়ায় ভর করে সমর্থন পাওয়া যতটা ‘সহজ’ হয়েছে, সাংগঠনিক দিক থেকে এই সমর্থন ধরে রাখা বেশি ‘কঠিন’ হবে। পরিস্থিতি দেখে বুধবার বিজেপির জেলা কার্যকরী কমিটির বৈঠকে একগুচ্ছ সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে ছিলেন দলের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে তুষারবাবু বলেন, “আরও বেশি মানুষ যাতে আমাদের দিকে আসেন, তার চেষ্টা করতে হবে। বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্তও হয়েছে।”
দলের এক সূত্রে খবর, শুরুতেই ব্লকস্তরে সংগঠন গড়া হবে। এখন অনেক ব্লকে দলের অফিসও নেই। পরিকাঠামো গঠনে প্রয়োজনে জেলা থেকে সব রকম সাহায্য করা হবে। পরবর্তী সময়ে বুথ-ভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলার উপরও জোর দেওয়া হবে। কারণ, বিজেপি নেতৃত্ব বুঝেছেন, বুথ-ভিত্তিক সংগঠন না থাকলে শাসকদলের সঙ্গে টক্কর দেওয়া কঠিন। লোকসভা ভোটের ফলকে বিধানসভা কেন্দ্রওয়াড়ি হিসেবে ধরলে জেলার ১৯টি আসনের মধ্যে যেখানে খাতা খুলতে পারেনি বামেরা, অর্থাৎ একটি আসনের দখলও তাদের হাতে নেই, সেখানে খড়্গপুর সদরের মতো আসনে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। মেদিনীপুরে বিজেপি ১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ঘাটাল এবং ঝাড়গ্রামে যথাক্রমে ৭ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ। মেদিনীপুর-এগরার মতো শহরাঞ্চলে বিজেপির ভোট অনেকটাই বেড়েছে। তুলনায় গ্রামাঞ্চলে অবশ্য ততটা বাড়েনি। দলের জেলা নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, গ্রামাঞ্চলে তৃণমূল সন্ত্রাস করেছে। তা না হলে ভোট আরও বাড়ত। বিজেপির জেলা সভাপতি বলেন, “মানুষ যেখানে পেরেছেন, আমাদের ভোট দিয়েছেন। কেশিয়াড়ির মতো এলাকায় আমরা এক-একটি বুথে ১৫০-২০০টি ভোট পেয়েছি। মানুষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।”
অন্য দিকে, পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে বিজেপিতে যোগদানের জন্য ইতিমধ্যে জেলায় বহু আবেদন এসেছে। তালিকায় রয়েছেন বাম নেতা-কর্মী-সমর্থকেরাও। নেতৃত্ব অবশ্য এ ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি কাউকে সদস্যপদ দিচ্ছেন না। যাঁরা আবেদন করছেন, আপাতত তাঁদের এই ফর্ম দেওয়া হচ্ছে। আবেদনকারীকে ফর্মপূরণ করে জমা দিতে হবে। লিখতে হবে নিজের নাম, মোবাইল নম্বর, এবং তিনি যে বুথের ভোটার, সেই বুথের নম্বর। ফর্মপূরণ করে আবেদনকারী স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে জমা দেবেন। স্থানীয় নেতৃত্ব ওই ফর্মেই মন্তব্য করবেন। পরে ফর্ম জেলায় পাঠিয়ে দেবেন। এরপর জেলা নেতৃত্ব সব দিক খতিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ঠিক করবেন, প্রাথমিক সদস্যপদ দেওয়ার পর আবেদনকারীকে ঠিক কি দায়িত্ব দেওয়া হবে। বিজেপি নেতৃত্ব মানছেন, জনসমর্থনকে সাংগঠনিক বাঁধনে আনতে হলে সেই ক্ষেত্রে উপযুক্ত নেতা-কর্মী তৈরি করতে হবে। সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে ‘নতুন মুখ’ও আনতে হবে। যাঁদের নিজ নিজ এলাকায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে। তুষারবাবু বলেন, “লোকসভার ফল পর্যালোচনা করে আমরা সংগঠন সাজানোর কাজ শুরু করছি। অনেকেই দলের যোগদান করতে চেয়ে আবেদন করছে। তালিকায় একাধিক দলের কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। আমরা সমস্ত আবেদনই খতিয়ে দেখছি।” বিজেপির লক্ষ্য, জনসমর্থন ধরে রেখে আগামী বছর খড়্গপুর পুরসভা দখল করা। সেই জন্য ইতিমধ্যে ২৫
জন নেতাকে নিয়ে জেলাস্তরে একটি দল গঠন করা হয়েছে। এই দলের সদস্যরা ব্লকে যাবেন। প্রয়োজনে সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসের কাজও করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy