Advertisement
E-Paper

বৃদ্ধ খুনের তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ

এক বৃদ্ধের রহস্য-মৃত্যুর তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে মেদিনীপুরে। রণেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী নামে ওই বৃদ্ধের পরিজনদের অভিযোগ, ঘটনার কিনারা করতে পুলিশ যথেষ্ট সচেষ্ট নয়। তাই চার মাস পরেও কোনও সূত্র মেলেনি। নিহতের পরিবারের তরফে স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে সব জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে জেলা পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪৬
রণেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী

রণেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী

এক বৃদ্ধের রহস্য-মৃত্যুর তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে মেদিনীপুরে। রণেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী নামে ওই বৃদ্ধের পরিজনদের অভিযোগ, ঘটনার কিনারা করতে পুলিশ যথেষ্ট সচেষ্ট নয়। তাই চার মাস পরেও কোনও সূত্র মেলেনি। নিহতের পরিবারের তরফে স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে সব জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে জেলা পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরেও পুলিশ উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ।

তদন্তের ক্ষেত্রে উদ্যোগের অভাব রয়েছে বলে অবশ্য মানতে চায়নি পুলিশ। তবে সুনির্দিষ্ট সূত্র যে মেলেনি, তা মানছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, “তদন্ত চলছে। আমরা সব দিকই খতিয়ে দেখছি।”

রোজকার মতোই গত ২৪ মার্চ সকালে বাজার করতে বেরিয়েছিলেন মেদিনীপুরের বিধানগরের বাসিন্দা ৮০ বছরের রণেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী। আর বাড়ি ফেরেননি অ্যালঝাইমারে আক্রান্ত ওই বৃদ্ধ। ২৪ তারিখই মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন রণেন্দ্রবাবুর ছেলে রতিশুভ্র। তল্লাশি শুরু হয়। ২৬ মার্চ শহর সংলগ্ন গোপগড়ের জঙ্গলে দেহ মেলে ওই বৃদ্ধের। পরিজনেরা তা শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা যায়, বৃদ্ধের গলায় ধারালো অস্ত্রের দাগ রয়েছে। দু’টি চোখের মণিও তুলে নেওয়া হয়েছে। তা দেখে পুলিশের ধারণা, ওই বৃদ্ধকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু কেন তাঁকে খুন করা হল, কারাই বা করল, চার মাসেও তার কিনারা হয়নি। এখানেই উঠছে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ।

বৃদ্ধের পরিবারের বক্তব্য, পুলিশ উদ্যোগী হলে ঘটনার কিনারা করা যেত। ইতিমধ্যে রণেন্দ্রবাবুর জামাই মুম্বই প্রবাসী তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ-প্রশাসনের উপর মহলে যোগাযোগ করেন। স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে সব জানান তিনি। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “ঘটনা জেনেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়।” তারপরেও তদন্তে গতি আসেনি বলে অভিযোগ। বৃদ্ধের ছেলে রতিশুভ্র জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়ে পুলিশ একবারই বাড়িতে এসেছিল। তিনি বেশ কয়েক বার থানায় গিয়েছেন। পুলিশ প্রতিবারই বলেছে, কোনও সূত্র মেলেনি।

রণেন্দ্রবাবুর পরিজনদের অনুমান, এই খুনের ক্ষেত্রে কর্নিয়া পাচার চক্রের যোগ থাকতে পারে। কারণ, বৃদ্ধের দু’টি চোখের মণি তুলে নেওয়া হয়েছিল। পুলিশ এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, মৃতদেহ থেকে কর্নিয়া সংগ্রহের জন্য যে ধরনের পরিবেশ প্রয়োজন, এক জনকে জঙ্গলে খুন করলে তা পাওয়া সম্ভব নয়। পুলিশের দাবি, দীর্ঘক্ষণ জঙ্গলে পড়ে থাকায় মৃতদেহে পচন ধরেছিল। ঘটেছিল পোকামাকড়ের সংক্রমণ। তাতেই চোখের মণি দু’টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খুনের কারণ নিয়ে ধন্দের মধ্যেই একটি ফোন ঘটনাটি আরও রহস্যময় করে তোলে। গত ১৩ জুন সকালে এক অপরিচিতের ফোন পান রতিশুভ্র। ফোনের ওপারের ব্যক্তি নিজের নাম বলেন দীপক অধিকারী, বাড়ি মালদহের ইংরেজবাজারে। নিজেকে বায়ুসেনার কর্মী বলেও জানান তিনি। ওই ব্যক্তির দাবি ছিল, রণেন্দ্রবাবুকে তিনি মালদহ বাসস্ট্যান্ডে ঘুরতে দেখেছেন। কিছু টাকা পাঠালে তাঁকে মেদিনীপুর ফেরানোর ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও জানান দীপক।

কিন্তু ততদিনে তো রণেন্দ্রবাবু মারা গিয়েছেন! তাহলে?

ফোনের কথা পুলিশকে জানান রতিশুভ্র। যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, তা-ও দেন। কিন্তু পুলিশ ফোন-রহস্যেরও কিনারা করতে পারেনি। রতিশুভ্রবাবুর কথায়, “মার্চে বাবা মারা গিয়েছেন। আর জুনে একজন মালদহ থেকে ফোন করে দাবি করল, বাবা নাকি ওখানে আছেন। ওই ব্যক্তি কী ভাবে আমার নম্বর পেল, সেটাও তো প্রশ্ন।”

পুলিশ বারবারই তদন্তে কোনও সূত্র না পাওয়ার কথা বলছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “সুনির্দিষ্ট কোনও সূত্রেরই খোঁজ মিলছে না। তাই ঘটনার কিনারা করা যাচ্ছে না।”

ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

complain of inactivity police investigation murder ranendrakumar chakraborty mednipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy