Advertisement
০২ মে ২০২৪

বিধি ভেঙে লেখা দেওয়াল মুছল কমিশন

হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে রামচন্দ্রপুর বাজারের বাস স্টপেজের ধারে সরকারি জায়গার উপর রয়েছে লোহার সাটার লাগানো একটি ঘর। ওই ঘরের উপরের দিকে দেওয়ালে রয়েছে শাসকদল তৃণমূলের প্রার্থীর সমর্থনে প্রতীক-সহ প্রার্থীর নামে দেওয়াল লিখন। কাছেই সড়কের ধারে বাঁশের কাঠামোয় টাঙানো ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় ও তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর ছবি-সহ তৃণমূলের হোর্ডিং। ওই দেওয়াল লিখন ও হোর্ডিং থেকে একশো ফুট দূরেই সড়কের ধারে সরকারি জায়গার উপর একটি দেওয়ালে রয়েছে এসইউসি প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখন।

রামচন্দ্রপুরে তমলুকের এসইউসি প্রার্থীর সমর্থনে লেখা দেওয়াল মুছে দিচ্ছেন কমিশনের লোকেরা।

রামচন্দ্রপুরে তমলুকের এসইউসি প্রার্থীর সমর্থনে লেখা দেওয়াল মুছে দিচ্ছেন কমিশনের লোকেরা।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪৬
Share: Save:

হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে রামচন্দ্রপুর বাজারের বাস স্টপেজের ধারে সরকারি জায়গার উপর রয়েছে লোহার সাটার লাগানো একটি ঘর। ওই ঘরের উপরের দিকে দেওয়ালে রয়েছে শাসকদল তৃণমূলের প্রার্থীর সমর্থনে প্রতীক-সহ প্রার্থীর নামে দেওয়াল লিখন। কাছেই সড়কের ধারে বাঁশের কাঠামোয় টাঙানো ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় ও তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর ছবি-সহ তৃণমূলের হোর্ডিং। ওই দেওয়াল লিখন ও হোর্ডিং থেকে একশো ফুট দূরেই সড়কের ধারে সরকারি জায়গার উপর একটি দেওয়ালে রয়েছে এসইউসি প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখন।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ তমলুক বিধানসভা এলাকার অধীন ওই বাজারে গিয়ে থামল শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের এমসিসি (মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট) সেলের গাড়ি। গাড়ি থেকে নামলেন ওই ব্লকের এমসিসি অফিসার-ইন-চার্জ ব্রহ্মানন্দ চিতি-সহ সেলের কর্মীরা। দলে ছিলেন সরকারি আধিকারিক-কর্মী-পুলিশ-ক্যামেরাম্যান সহ ১১ জন। প্রথমে হাতে থাকা নথিপত্র মিলিয়ে ব্রহ্মানন্দবাবু দেখলেন, সরকারি জায়গায় ওই সব দেওয়াল লিখন মোছা ও হোরডিং সরানোর জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছিল ১ এপ্রিল। নোটিস দেওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা পার হয়েছে কি না মিলিয়ে দেখার পরে সিদ্ধান্ত নিলেন সরকারি জায়গায় ওই সব দেওয়াল মোছা হবে।

দেওয়াল মুছতে আর হোরডিং সরানোর জন্য এমসিসি দলের সঙ্গে থাকা কর্মীরা বালতি ভর্তি চুন গোলা জল আর মই, তার কাটার যন্ত্র নিয়ে নেমে এলেন গাড়ি থেকে। এ সময় বাজারের মধ্যে থাকা গুটি কয়েক লোক এগিয়ে এসে জানতে চাইলেন ব্যাপরটা কি? এমসিসি সেলের এক অফিসার তাঁদের বোঝালেন সরকারি জায়গার উপর দেওয়াল লিখন, ব্যানার, হোরডিং-সহ প্রচার সামগ্রী থাকা রাখা যাবে না। থাকলে তা নোটিস দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে। না হলে কমিশনের তরফে সরিয়ে দেওয়া হবে।

এরপরেই ওই লোকজনের সামনেই তৃণমূলের দেওয়াল লিখন মুছতে শুরু করেন এমসিসি দলের কর্মীরা। প্রথমে দেওয়াল লিখন ও তারপর তা মোছার কাজ ক্যামেরা বন্দি করা হয়। এ সময় কয়েক জন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থক এসে দাঁড়িয়ে দেখলেন তাঁদের প্রার্থীর দেওয়াল লিখন মোছা হচ্ছে। তাঁদের নিজেদের মধ্যে বলতে শোনা যায়, ‘নোটিস দেওয়ার পরে গতকালই খুলতে বলেছিলাম। তখন শুনলি না!’ তাঁরা তৃণমূল সমর্থক বলে জানালেও নাম জানতে চাইলেন না।

রামচন্দ্রপুরে তমলুকের তৃণমূলের প্রার্থীর সমর্থনে

লেখা দেওয়াল মুছে দিচ্ছেন কমিশনের লোকেরা।

দেওয়াল লিখন ও পাশেই থাকা হোর্ডিং খুলে গাড়িতে তোলার পরেই এমসিসি দলের কর্মীরা কাছেই আরেক’টি দেওয়ালে থাকা এসইউসি প্রার্থীর সমর্থনে দু’টি দেওয়াল লিখন মোছে। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে রামচন্দ্রপুর বাজারে এমসিসি দল কাজ করার পর, বিকেল চারটে নাগাদ গাড়ি চলল সেখান থেকে প্রায় দু’ কিলোমিটার দূরে বুড়ারি বাজারের কাছে। সেখানে একটি রাস্তার মোড়ে সেখানে সড়কের ধারে সরকারি জায়গায় নয়ানজুলির উপরে টাঙানো ছিল তৃণমূল প্রার্থীর ছবি-সহ ব্যানার। আর পাশেই রাস্তার উপর একটি শিরিস গাছে টাঙানো ছিল নরেন্দ্র মোদীর ছবি-সহ বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে ব্যানার।

এমসিসি দলের আধিকারিক ওই নয়ানজুলির পাশে থাকা একটি বাড়ির গৃহকর্তার কাছে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন ওই নয়ানজুলি সরকারি জায়গায়। তৃণমূলের ওই হোর্ডিং নিয়ে তথ্য নথিভুক্ত করেন এমসিসি দল। কিন্তু, পাশে থাকা শিরিস গাছটি রয়েছে তাঁর নিজস্ব জায়গায় রয়েছে বলে দাবি করেন ওই গৃহকর্তা। সে সময় এমসিসি দলের আধিকারিক জানতে চান বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে ব্যানার লাগানোর জন্য তাঁর অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা। গৃহকর্তা বলেন, “ওই ব্যানার লাগানোর জন্য অনুমতি নেয়নি। তবে আমার আপত্তি ছিল না।”

এরপর এমসিসি দলের গাড়ি এল বিডিও অফিসের কাছে। চিয়াড়া গ্রামে সেখানে সরকারি জায়গার উপর থাকা একটি দোকান ঘরের দু’দিকের দেওয়ালে তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখন মোছার কাজ করে সেখানে তখন দু’জন গ্রামবাসী ছাড়া কেউ ছিলেন না। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ এমসিসি দল পৌঁছায় হলদিয়া-মেচেদা সড়কের উপর নোনাকুড়ি-কাকটিয়া বাজারে। সেখানে রাস্তার ধারে একটি বাড়ির সামনে সরকারি জায়গার উপর থাকা একটি লোহার সিড়ির গায়ে লাগানো ছিল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ছবি ও দলের প্রতীক-সহ একটি ব্যানার। এমসিসি দলের আধিকারিকের নির্দেশে কর্মীরা ব্যানার খুলে গাড়িতে ভরেন। কাছেই সরকারি জায়গায় একটি দেওয়ালের দু’দিকে এসইউসি প্রার্থীর দেওয়াল লিখনের মধ্যে সড়কের দিকের একটি লেখা মোছা রয়েছে।

বটগাছে লাগানো তৃণমূল প্রার্থীর হোরডিং খোলার সময় এমসিসি দল এসেছে জানতে পেরেই কাছেই এসইউসি অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন দলের নোনাকুড়ি লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রদীপ দাস-সহ কয়েক জন কর্মী। এমসিসি দলের আধিকারিককে প্রদীপবাবু বলেন, “নোটিস পাওয়ার পরেই আমরা এখানে দেওয়াল মুছে দিয়েছি।” ওই আধিকারিক তখন অন্যটিও মোছার ব্যবস্থা করতে বলেন। এসইউসি নেতা তা মোছার প্রতিশ্রুতিও দেন।

ইতিমধ্যে ঘড়িতে বিকেল পাঁচটা। আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটার সাথে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর তারই সঙ্গে শেষ হল এমসিসি দলের অভিযান।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ananda mondal tamluk wall writing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE