Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বাম-কংগ্রেসের দুর্গেও ধাক্কা বিজেপির

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে বিজেপি ভোট পেয়েছিল ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৫৯০টি। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ভোট আরও কমে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৬৬৭টি। এ বার মোদী ঝড়ে একটি লোকসভা কেন্দ্র থেকেই সেই রেকর্ড ভেঙে দিল বিজেপি। জেলার তিনটি লোকসভা মিলিয়ে তাদের ভোট প্রাপ্তি ৩ লক্ষ ৯৭ হাজার ১৬৬টি!

নরেন্দ্র মোদীকে শুভেচ্ছা। মেদিনীপুর বটতলাচকে। —নিজস্ব চিত্র।

নরেন্দ্র মোদীকে শুভেচ্ছা। মেদিনীপুর বটতলাচকে। —নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০১:১৫
Share: Save:

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে বিজেপি ভোট পেয়েছিল ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৫৯০টি।

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ভোট আরও কমে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৬৬৭টি।

এ বার মোদী ঝড়ে একটি লোকসভা কেন্দ্র থেকেই সেই রেকর্ড ভেঙে দিল বিজেপি। জেলার তিনটি লোকসভা মিলিয়ে তাদের ভোট প্রাপ্তি ৩ লক্ষ ৯৭ হাজার ১৬৬টি!

বিধানসভা কেন্দ্রের নিরিখে দেখলে খড়্গপুর সদর বিধানসভায় ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। ১৩৮১৮টি। শতাংশের হারে তা মাত্র ১১.৭৩ শতাংশ। ২০০৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৯৩০৩ এ। শতাংশের হারে যা ৬.৭৯। এবার আবার সেই খড়্গপুরে কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামফ্রন্টকে পিছিয়ে ফেলে বিধানসভায় সর্বোচ্চ ভোট নিজেদের বাক্সেও নিয়েও এলো বিজেপি! বিজেপি-র পরেই থাকা তৃণমূল যেখানে ৪০ হাজার ১৩৫টি ভোট পেয়েছে, সেখানে বিজেপি পেল ৫১ হাজার ১৫২টি ভোট! পুরসভা ও বিধানসভা কংগ্রেসের দখলে থাকলেও কংগ্রেস ভোট পেয়েছে মাত্র ২১ হাজার ৩১৬টি। জেলা জুড়েও কংগ্রেসের ভোটচিত্রে করুণ দশা। জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস ভোট পেয়েছে মাত্র ২ লক্ষ ১২ হাজার ৩৪৪টি। অর্থাৎ বিজেপি-র থেকেও ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮২২ ভোটে পিছিয়ে! বিজেপি নেতারা অবশ্য মানছেন, জঙ্গলমহলেও মোদি ম্যাজিকই করেছে। তাই এই সাফল্য।

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

২০০৪ সালে বিজেপি-র সঙ্গে তৃণমূলের জোট ছিল। ফলে আলাদাভাবে বিজেপি-র ভোট বোঝার উপায় নেই। আবার ২০০৯ সালে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট ছিল। এখানেও কংগ্রেস বা তৃণমূলের আলাদা করে ভোট বোঝার উপায় নেই। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচন - এই দু’টি থেকেই বোঝা যায়, জেলায় বিজেপি-র ভোট কত। দু’টি পরিসংখ্যান থেকেই পরিষ্কার যে বিজেপি-র ভোট ছিল একেবারেই তলানিতে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি ভোট পেয়েছিল মাত্র ৪.৯৯ শতাংশ, ঝাড়গ্রাম থেকে পেয়েছিল ৪.৭৮ শতাংশ ও ঘাটাল লোকসভা থেকে পেয়েছিল ২.৯৯ শতাংশ। আর ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি খড়্গপুর সদর থেকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিল। শতাংশের হারে ৬.৭৯ শতাংশ। বাকি সব ক্ষেত্রেই কোথাও ১.৩০ শতাংশ তো কোথাও ৪-৫ শতাংশ। সেখানে এবার ঘাটালে ভোট পেয়েছে ৬.৯৪ শতাংশ, ঝাড়গ্রামে ৯.৭৪ শতাংশ আর মেদিনীপুরে ১৪.২৯ শতাংশ! যা অভাবনীয়।

বিগত দিনের ফল থেকে বিজেপি নেতৃত্ব আদৌ আশা করেননি যে এ জেলায় দলের আদৌ কোনদিন সাফল্য আসতে পারে। সংগঠনের হাল এতটাই খারাপ যে, শহরাঞ্চল ছাড়া বিজেপি নেতাদের দেখা যেত না। শহরে পুরসভা নির্বাচনে প্রতিন্দ্বন্দ্বীতা করলেও তেমন ফল করতেও দেখা যায়নি। সেদিক দিয়ে কংগ্রেসের হাল জেলায় অনেক ভাল। দু’জন বিধায়ক রয়েছেন, একাধিক কাউন্সিলর রয়েছে। তবু কংগ্রেসকে এক ধাক্কা অনেকটাই পিছিয়ে দিয়ে জেলায় তৃতীয় শক্তি হিসাবে উঠে এলো বিজেপি। বিজেপি নেতৃত্বের কথায়, এ বার সংগঠনের দিকে নজর দিলে সরাসরি দু’নম্বর জায়গাতেই থাকবে তাঁরা। এমনকি আগামি ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলা থেকেও বেশ কয়েকটি আসনও জিতে নেবে। বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আর আমাদের পিছনে তাকানোর জায়গা নেই। এবার সংগঠনকে আরও মজবুত করে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ, এবারের নির্বাচনে মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা বিজেপিকেই চান। আগামি বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফলের লক্ষ্যেই গ্রামেগঞ্জে সংগঠনের বিস্তার ঘটাতে হবে।” তাই বিজেপি-র সাফল্য তুলে ধরতে আপাতত, সর্বত্রই জোর কদমে চলছে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। মোড়ে মোড়ে মাইক বাজছে, ঝুলছে বিজেপি-র পতাকাও। কখনও বিজেপি নেতাদের বক্তব্যও শোনানো হচ্ছে মাইকে। এক বিজেপি নেতার কথায়, “এই হাওয়াটাকেই কাজে লাগাতে হবে। তাই আর দেরি না করে এখান থেকেই সংগঠনের কাজ শুরু করে দিতে হবে। মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে হবে।”

বিজেপি-র এই সাফল্যের জন্যই কংগ্রেস, সিপিএম নিজেদের গড়ও ধরে রাখতে পারেনি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নারায়ণগড় থেকে শুরু করে সুশান্ত ঘোষের গড়বেতা হাতছাড়া হয়েছে। কম ভোটে হলেও হাতছাড়া হয়েছে মানস ভুঁইয়ার গড় সবংও। আর প্রবীন জ্ঞানসিংহ সোহনপালের খড়্গপুর সদরে ৩৪.৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে বিজেপি। বিজেপি-র এই সাফল্যে অবশ্য সব দলই গভীর দুশ্চিন্তাতেই রয়েছে। সেই সূযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে এগোতে চাইছে বিজেপিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sumon ghosh bjp cpm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE