Advertisement
E-Paper

বৃষ্টির ঘাটতি, সময়ে ধান রোয়া নিয়ে সংশয়

সময়সীমা শেষ হতে আর সাত দিন বাকি। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আমন ধান রোয়ার লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক পূরণ হয়েছে। তাই কৃষি দফতরের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আমন ধান রোয়ার কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন দুই জেলার কৃষি দফতরের আধিকারিকরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪৪
জলের অভাবে দাসপুরে শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের চারা।  —নিজস্ব চিত্র।

জলের অভাবে দাসপুরে শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের চারা। —নিজস্ব চিত্র।

সময়সীমা শেষ হতে আর সাত দিন বাকি।

চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আমন ধান রোয়ার লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক পূরণ হয়েছে। তাই কৃষি দফতরের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আমন ধান রোয়ার কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন দুই জেলার কৃষি দফতরের আধিকারিকরা। যদিও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কৃষি দফতরের দাবি, অগস্ট মাসের প্রথম চারদিনেই জেলায় ভারী বৃস্টিপাত হয়েছে, তাতে কাঁথি, এগরা মহকুমা এলাকায় আমন রোয়ার কাজে সুবিধা হয়েছে। সময়ের মধ্যে ধান রোয়া কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে পশ্চিমেও।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা প্রণবেশ বেরা বলেন, “গত বছরের থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক জমিতে আমন ধান চাষের কাজ হয়েছে। তবে গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে ধান রোয়ার কাজে গতি এসেছে। আশা করা হচ্ছে, অগস্ট মাসের মধ্যে ধান রোয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।” পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা কৃষি দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “এখনও হাতে সাত দিন সময় রয়েছে। তবে ভারী বৃষ্টি না হলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।”

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০০ -১৬০০ মিলিমিটার। গতবছর ৩১ জুলাই পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৮৩৩.৯ মিলিমিটার। আর চলতি বছরে ওই একই সময় পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭৮৬.০৭ মিলিমিটার। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে প্রায় ৪৮ মিলিমিটার কম। এমনিতেই এ বছর বৃষ্টির অভাবে ধানের বীজতলা তৈরিতে দেরি হয়েছে। কৃষি দফতরের মতে, বর্ষায় আমন ধান রোয়ার নির্ধারিত সময় ১৫ জুলাই-১৫ অগস্ট। চলতি বছরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর। কিন্তু গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত জেলায় আমন ধান রোয়ার কাজ হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র অর্ধেক জমিতে আমন ধান রোয়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সময়সীমার বাকি সাত দিনে ধান রোয়ার কাজ কতটা শেষ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কোলাঘাটের উত্তর জিয়াদা গ্রামের কৃষক প্রশান্ত পড়িয়া বলেন, “বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে মাঠের জলের অভাবে ধান রোয়ার কাজে দেরি হয়েছে। মাঝে কয়েকদিন ভারী বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে ধান রোয়ার কাজ করা গেলেও এখনও দেড় বিঘা জমির বেশ কিছুটা অংশে কাজ বাকি আছে।”

গত জুলাই মাস পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ২৮ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। জেলার মোট চাষযোগ্য ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ২১৮ হেক্টর জমির মধ্যে ৫ লক্ষ ৪৪ হাজার ৯৮৪ হেক্টর জমিতেই এবার খারিফ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় এ বার অধিকাংশ জমিতে শ্যালো পাম্পের জল দিয়ে চাষের কাজ চলছে। এমনিতে বিঘা প্রতি ধান চাষে ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু শ্যালোর জলে চাষ করতে গিয়ে চাষের খরচও বাড়ছে। জেলার চারটি মহকুমায় এখনও পর্যন্ত ৪৪ শতাংশ জমিতে ধান রোয়ার কাজ হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের চারার বৃদ্ধি কমে গিয়েছে। ১৫ অগস্টের মধ্যে জেলায় বাকি প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে ধান রোয়ার কাজ কতটা করা যাবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষি দফতর।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত জেলার ঝাড়গ্রাম মহকুমায় ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমির ৪৫ শতাংশ, মেদিনীপুর সদর মহকুমায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৮৪৪ হেক্টরের মধ্যে মাত্র ৪৮ শতাংশ, খড়্গপুর মহকুমায় ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৯২৩ হেক্টরের মধ্যে মাত্র ৩৭ শতাংশ জমিতে ধান রোয়ার কাজ হয়েছে। ঘাটাল মহকুমায় ৫৯ হাজার ৬৩২ হেক্টর জমির মধ্যে ধান রোয়ার কাজ হয়েছে ৩৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, ভারী বৃষ্টি না হলে বাকি জমিতে ধান রোয়ার কাজে সমস্যা বাড়বে। ফলে উৎপাদন কমার আশঙ্কাও রয়েছে। দাসপুরের চাষি প্রভাত সামন্তের কথায়, “ভারী বৃষ্টি না হলে ধান রোয়ার কাজে সমস্যা হচ্ছে। ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যদিও পূর্ব মেদিনীপুরে অগস্ট মাসের প্রথম চার দিনে জেলায় প্রায় ১৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে গতি এসেছে ধান রোয়ার কাজে। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় জলের সমস্যা মিটেছে। ফলে জোর কদমে ধান রোয়ার কাজ চলছে।” তবে তিনি বলেন, “এ বার ধান রোয়ার কাজ কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। ৩১ অগস্ট পর্যন্ত ধান রোয়ার কাজ হতে পারে। সেক্ষেত্রে উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বে না।”

rain paddy tamluk ghatal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy