মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রকল্পের শিলা-ফলক। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
ঘটা করে শিলান্যাস হয়েছিল। আশ্বাস ছিল, যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু হবে।দেখতে দেখতে বছর ঘুরল। অথচ, এখনও মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রস্তাবিত ‘মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র’ গড়ার কাজ শুরুই হল না।
ঠিক এক বছর আগে, ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ এই কেন্দ্রের শিলান্যাস করেছিলেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তারপর আর কাজ বিশেষ এগোয়নি। কেন এক বছরেও কাজ শুরু হল না? প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি হাসপাতাল সুপার যুগল করের কাছে। তবে, মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতির আশ্বাস, “এ বার কাজ শুরু হবে।” তাঁর কথায়, “কাজ শুরুর আগে কিছু প্রক্রিয়া থাকে। সেই প্রক্রিয়াগুলো চলছে। ফলে, প্রস্তাবিত কেন্দ্র তৈরির কাজ পুরোপুরি থমকে রয়েছে, তা ঠিক নয়। সুপারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওঁকে প্রক্রিয়াগুলো দ্রুত শেষ করার কথা বলেছি।” আগামী সপ্তাহেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকে প্রস্তাবিত কেন্দ্র নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মেদিনীপুরের বিধায়ক।
মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যার সাফল্যের ক্ষেত্রে কিছু মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গ দেশের অনেক রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে। কিন্তু, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-সহ বহু সংস্থার মতে, চূড়ান্ত সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এ রাজ্যকে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভাব-অনুযোগ রয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালে শিশু ও মহিলা বিভাগের পরিষেবা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। শিশু ও মহিলা বিভাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় নানা সমস্যা হয়। তার উপর স্থানাভাবে এক শয্যায় একাধিক প্রসূতিকে রাখা হয়। চিকিৎসায় গাফিলতিতে প্রসূতি বা সদ্যোজাতের মৃত্যুর অভিযোগও এখানে নতুন নয়। মাস খানেক আগেও শিশু-মৃত্যু নিয়ে শোরগোল পড়েছিল মেডিক্যালে।
এই পরিস্থিতিতে একই ছাদের তলায় শিশু ও মহিলা বিভাগকে নিয়ে আসার উদ্যোগ শুরু হয়। মঞ্জুর হয় প্রকল্প। নতুন ভবন তৈরির জন্য প্রায় ১৮০০ বর্গমিটার জায়গা প্রয়োজন ছিল। হাসপাতাল চত্বরেই প্রস্তাবিত কেন্দ্রের জন্য জমি চিহ্নিত করা হয়। আপাতত, চারতলা ভবন তৈরি হওয়ার কথা। এ জন্য বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। অর্থ সাহায্য করেছে ‘ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশন’ (এআরএইচএম)। নতুন ভবনে শতাধিক শয্যা থাকবে। সঙ্গে কয়েকটি বিভাগও থাকবে। বছর দেড়েক আগেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে এসএনসিইউ চালু হয়েছে। এখানে ১২টি শয্যা রয়েছে। এর ফলে ‘সঙ্কটজনক’ শিশুদের বিশেষ নজরে রাখা যায়। নতুন ভবন হলে শয্যা সংখ্যা বাড়বে।
পশ্চিম মেদিনীপুরে গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামো ততটা উন্নত নয়। সামান্য কিছু হলেও ব্লক হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে শিশু এবং মায়েদের জেলা সদরে ‘রেফার’ করা হয়। অনেক শিশু আবার অপুষ্টিতে ভুগে। রাজ্যে শিশু মৃত্যুর অন্তত ৫৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অপুষ্টিই অন্যতম কারণ। মেদিনীপুর মেডিক্যালে দিনে গড়ে দু’জন শিশুর মৃত্যু হয়। ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) চালুর পরে এই পরিস্থিতি। আগে গড়ে দিনে তিন জন শিশুর মৃত্যু হত। শিশু মৃত্যু ঘিরে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অত্যধিক কম ওজন, ফুসফুসে সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে শিশু মৃত্যু হয়। চেষ্টা করেও কম ওজনের শিশুকে বাঁচানো যায় না। মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক আধিকারিক বলেন, “এই জেলায় ‘মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র’ খুব জরুরি। তাহলে একই ছাদের তলায় শিশু ও মহিলা বিভাগগুলো চলে আসবে। এতে রোগীর পরিবারের লোকেদের সুবিধে হবে।”
এই সুবিধার কথা ভেবেই নতুন কেন্দ্রের পরিকল্পনা। ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ প্রস্তাবিত নতুন কেন্দ্রের শিলান্যাস হয়। হাসপাতাল চত্বরে সেই ফলকে এখন ধুলো জমেছে। গত এক বছরে একটি ইটও গাঁথা হয়নি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, যেখানে নতুন কেন্দ্র হবে, সেখানে পুরনো কয়েকটি ঘর আছে। কাজ শুরুর আগে ঘরগুলো ভাঙা দরকার। এ জন্য রাজ্যের অনুমতি চেয়ে পদক্ষেপ করা হয়েছে। কতদিনে কাজ শুরু হয়, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy