বিভিন্ন পত্রিকার শারদ সংখ্যা। —নিজস্ব চিত্র।
পরিবর্তনই সময়ের নিয়ম। আগে যেভাবে দুর্গোত্সব পালিত হত, এখন সেই ধরন বদলে গিয়েছে অনেকটাই। তেমনই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাল্টে যাচ্ছে লিটল ম্যাগাজিনগুলোও।
পুজোর আবহে ‘শারদীয় পত্রিকা’ যেন বাঙালি সংস্কৃতিরই একটি অঙ্গ। বেশ কয়েক দশক আগে সাহিত্যে পুজো সংখ্যা প্রকাশের চল শুরু হয়। একটা সময় এটা ছিল কলকাতা কেন্দ্রিক। আস্তে আস্তে তা ছড়িয়ে পড়ে জেলায়। দুই মেদিনীপুর থেকে তিনশোরও বেশি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে প্রায় দেড়শোটি পত্রিকার ‘শারদীয় সংখ্যা’ও প্রকাশ হয়। গোড়ার দিকে এই পত্রিকাগুলোয় নানা রকম লেখা থাকত। তবে এখন বইগুলিতে থাকছে মূলতঃ বিষয় নির্ভর লেখা। কালার-ডিজিটাল প্রচ্ছদ হচ্ছে। দুষ্প্রাপ্য লেখা-চিঠি প্রকাশিত হচ্ছে। জেলার সম্ভাবনাময় লেখকদের লেখা তো থাকছেই, সঙ্গে জেলার বাইরের লেখক, প্রখ্যাত লেখকদের লেখা সংগ্রহ করেও ছাপা হচ্ছে। সব মিলিয়ে লিটল ম্যাগাজিনগুলোর ‘শারদীয় সংখ্যা’র হাত ধরেই যেন অন্য মাত্রা পাচ্ছে জেলার সাহিত্য- সংস্কৃতি।
মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন অ্যাকাডেমির সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠীর কথায়, “পুজোর সময় লিটল ম্যাগাজিনগুলোর যে সংখ্যা প্রকাশিত হয়, সেগুলোকে বিশেষ সংখ্যা বলাই ভাল। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লিটল ম্যাগাজিনও এখন সংরক্ষণযোগ্য হতে চাইছে। তাই পুজোর সময় প্রকাশিত অনেক সংখ্যাই হচ্ছে বিশেষ বিষয় নির্ভর।” তাঁর মতে, আগের থেকে লিটল ম্যাগাজিনের ছাপার অক্ষর হচ্ছে আরও ঝরঝকে, রয়েছে নজরকাড়া প্রচ্ছদও। এ বছর পুজোয় দুই মেদিনীপুর থেকে প্রায় দেড়শোটি পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। কোনওটির বিষয় লোকসংস্কৃতি, কোনওটির মেদিনীপুরের আবৃত্তির কবিতা।
সাধারণত, মহালয়ার সময় থেকেই লিটল ম্যাগাজিনগুলোর পুজো সংখ্যা প্রকাশ হতে শুরু করে। চলে কালী পুজো পর্যন্ত। রবিবার যেমন ‘নয়ন’ পত্রিকার পুজো সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। এই পত্রিকাটির সম্পাদক বিদ্যুত্ পাল জানান, এই বইয়ের বিশেষত্ব হল ছোটদের লেখা। রগড়ার ‘ফুড়ুত্’ পত্রিকারও পুজো সংখ্যা সেজেছে ছোটদের সাহিত্য, গল্প, ছড়া, কবিতায়। মেদিনীপুর থেকে প্রকাশিত ‘জ্বলদর্চি’র পুজোর সংখ্যার বিষয় বিশ্ববোধ। এ বার পুজো সংখ্যায় কলম ধরেছেন সমরেশ মজুমদার, নবনীতা দেব সেন, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু বড়ুয়া, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শিলাজিত্, রূপম ইসলাম, যোগেন চৌধুরী প্রমুখ। ঘাটাল থেকে প্রকাশিত ‘কবিতা শিলাই’ এর পুজো সংখ্যার বিষয় মেদিনীপুরের আবৃত্তির কবিতা। হলদিয়া থেকে প্রকাশিত ‘ভাষাচিত্র’র পুজো সংখ্যার বিষয় সাহিত্য ও চিত্রকলা। সবং থেকে প্রকাশিত ‘কথামেঘ’ পত্রিকার পুজো সংখ্যা সেজেছে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ছড়ায়। মহালয়ায় প্রকাশিত হয়েছে গোপীবল্লভপুরের লিটল ম্যাগ ‘আমাদের মেঠোপথ’-এর শারদ সংখ্যা। কৃষ্ণ সত্পথী সম্পাদিত এই পত্রিকায় নানা স্বাদের গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটদের ছড়া ঠাঁই পেয়েছে।
পুজো সংখ্যায় একে অপরকে টক্কর দেওয়ারও একটা চেষ্টা থাকে। যেমন চেষ্টা থাকে থিম পুজোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে। আসলে সকলেই চান, ভিড়ের মধ্যে নিজের সম্পাদিত পত্রিকাকে একটু আলাদা ভাবে দেখাতে। চেনাতে। তাই পুজোর মাস কয়েক আগে থেকেই শুরু হয় ভাবনা- পরিকল্পনা। লেখা সংগ্রহের কাজ। এক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকের কথায়, “অবাণিজ্যিক পত্রিকা প্রকাশ করতে গেলে কিছু আর্থিক সমস্যা দেখা দেয়ই। তবে ছোট পত্রিকার সঙ্গে জড়িয়ে থাকার আনন্দই আলাদা। আর পুজোর সময় পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে না পারলে মনই ভাল থাকে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy