Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বধূকে নিগ্রহ, অভিযুক্তদের ছেড়ে দিল পুলিশ

সম্পত্তির কিছুটা অংশ দিতে হবে ক্লাব আর গ্রাম কমিটিকে। সদস্যদের এটাই দাবি (বা বলা ভাল আব্দার) ছিল। তাই নিয়ে ক্লাব লাগোয়া বাড়ির দম্পতির সঙ্গে বিবাদ। সেই বিবাদের জেরেই ওই বাড়ির বধূকে গাছে বেঁধে মারধর ও চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্থানীয় ক্লাব এবং গ্রাম কমিটির কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে।

অমিত কর মহাপাত্র
সুতাহাটা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০৩:০৪
Share: Save:

সম্পত্তির কিছুটা অংশ দিতে হবে ক্লাব আর গ্রাম কমিটিকে। সদস্যদের এটাই দাবি (বা বলা ভাল আব্দার) ছিল। তাই নিয়ে ক্লাব লাগোয়া বাড়ির দম্পতির সঙ্গে বিবাদ।

সেই বিবাদের জেরেই ওই বাড়ির বধূকে গাছে বেঁধে মারধর ও চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্থানীয় ক্লাব এবং গ্রাম কমিটির কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটার গোবিন্দপুর গ্রামে শনিবারের ওই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। অভিযোগ, ঘটনার পর পুলিশ গ্রামে গিয়ে মহিলাকে উদ্ধার করলেও হামলাকারীদের না ধরে উল্টে দু’পক্ষকে থানায় ডেকে পাঠায় মীমাংসার জন্য। শেষমেশ রবিবার সুতাহাটা থানায় ক্লাব ও গ্রাম কমিটির পাঁচ সদস্য ও তাঁদের স্ত্রীদের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন বছর পঁয়তাল্লিশের ওই নিগৃহীতা।

সুতাহাটা থানার পুলিশ মীমাংসা বৈঠকের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আর অভিযুক্তদের ধরার প্রসঙ্গে এএসপি (হলদিয়া) অমিতাভ মাইতির বক্তব্য, “ওই মহিলার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। যথাযথ পদক্ষেপই করা হবে।” যদিও ঘটনা হল, পুলিশ কাউকেই ধরেনি। বরং ফের হামলার ভয়ে স্বামী ও মেয়েদের নিয়ে গ্রামছাড়া হতে হয়েছে নিগৃহীতা বধূকেই।

গোবিন্দপুর গ্রামে ওই বধূর মামাবাড়ি। নিঃসন্তান মামা-মামির মৃত্যুর পরে পরিবার-সহ মামাবাড়িতেই থাকেন ওই বধূ। তাঁর তিন মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেজ ও ছোট মেয়ে নাবালিকা। বধূর অভিযোগ, তাঁর পুত্র না থাকায় মামার বাড়ির সম্পত্তির একটা অংশ দাবি করেছিল স্থানীয় ক্লাব। শীতলা মন্দিরের জন্য সম্পত্তির ভাগ চেয়েছিল গ্রাম কমিটিও। তিনি রাজি না হওয়ায় পরিবারের উপর নির্যাতন শুরু। গ্রাম কমিটি ও ক্লাবের সদস্যরা কখনও সালিশি বসিয়ে হুমকি দেয়, কখনও বা মারধর করা হয় বধূর স্বামীকে। ২৫, ২৭ জুন ওই পরিবারের উপর হামলা হয় বলেও অভিযোগ। তার পর থেকে বধূটির স্বামী গ্রামছাড়া। ১ জুলাই ক্লাব ও গ্রাম কমিটির পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে হলদিয়া এসিজেএম কোর্টে খুনের চেষ্টা, শ্লীলতাহানি, বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ জানান বধূ।

সেই মামলা তুলতে রাজি না হওয়াতেই শনিবার ক্লাব ও গ্রাম কমিটির পাঁচ সদস্য ও তাঁদের স্ত্রীরা বধূকে নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ।

ওই বধূ জানান, শনিবার সকালে তিনি বাড়ির কাজ করছিলেন। মেজো মেয়ে পড়তে গিয়েছিল। বাড়িতে ছিল ১০ বছরের ছোট মেয়ে। বধূর অভিযোগ, “যে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে কোর্টে অভিযোগ করেছিলাম, হঠাৎই তারা আমার উপর চড়াও হয়। ওদের স্ত্রীরাও সঙ্গে ছিল। ওরা আমার ছোট মেয়েকে একটা ঘরে বন্ধ করে দিয়ে টানতে টানতে আমাকে নিয়ে যায় ক্লাবের সামনে।” একটি গাছে তাঁরই পরনের শাড়ি খুলে তাঁকে বেঁধে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। কেটে নেওয়া হয় মাথার চুল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েক জন মোবাইলে নিগ্রহের ছবি তুলে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।

সেই সময় টিউশন থেকে ফেরে ওই বধূর মেজো মেয়ে। রেহাই পায়নি সে-ও। দশম শ্রেণির ছাত্রী, ওই কিশোরী বলে, “ওরা আমার গায়ে হাত তোলে। হুমকি দিয়ে বলে, ক্লাবঘরে তুলে নিয়ে গিয়ে আমাকে বেইজ্জত করবে। আর সেই ছবি তুলে ইন্টারনেটে দেবে।” ইতিমধ্যে ঘরবন্দি ছোট মেয়ে বাবাকে ফোন করে। বধূর স্বামী যোগাযোগ করেন সুতাহাটা থানায়। গ্রামে এসে পুলিশ ওই বধূকে উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠায়। দু’পক্ষকে বিকেলে থানায় আসতে বলে। ওই বধূর অভিযোগ, “থানায় গিয়ে সব জানালেও পুলিশ গুরুত্ব দিতে চায়নি। উল্টে বলে, দুই মেয়েকে নিয়ে থাকি, থানা-পুলিশ করলে বিপদ বাড়বে। ভয়ে বাড়িও ফিরতে পারছি না।”

মারধর, চুল কাটার অভিযোগ অস্বীকার করলেও অভিযুক্ত ক্লাব সদস্যরা মেনে নিয়েছেন যে, মামলা তোলার জন্য ওই বধূকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। অভিযুক্তদের অন্যতম অরুণ মাইতি, তরুণ মাইতি ও তাঁদের স্ত্রী সোনালি, অপর্ণাদের দাবি, “ওই মহিলা মিথ্যা মামলা করেছিলেন। তা তুলে নেওয়া নিয়ে আলোচনা করতে গ্রাম কমিটির সভা ডাকা হলেও উনি আসেননি। থানার সালিশিতেও মামলা তুলতে রাজি হননি।”

গোবিন্দপুর গ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি পাঁচুগোপাল মাইতির অভিযোগ, “ওই মহিলার স্বামী নানা দুষ্কর্মে জড়িত। মহিলাও তাতে মদত দেন। তাই গ্রামবাসীরা ওই পরিবারের উপর অসন্তুষ্ট।” তাঁরও দাবি, আদালতে মিথ্যা মামলা করেছিলেন ওই বধূ। শনিবার সকালে সে নিয়েই কথা বলতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন স্থানীয়রা। তখন দু’পক্ষে বচসা হয়। তার বেশি কিছু হয়নি। এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি তুষার মণ্ডল বলেন, “দলীয় ভাবে জেনেছি, স্বামীর চাপে উনি মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তবে, এ সব ঘটনা কাঙ্ক্ষিত নয়।”

নিগৃহীতার সঙ্গে কথা বলেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা, সিপিএমের অনুপমা ভৌমিক। তিনি বলেন, “অমানবিক ঘটনা। আমি চাই ওই বধূ দ্রুত বাড়ি ফিরে আসুন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amit kar mahapatra sutahata gobindopur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE