চলতি বছরের মধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রস্তাবিত ফ্লাড শেল্টার অর্থাৎ বন্যার সময় ব্যবহৃত আশ্রয় কেন্দ্রগুলির কাজ শেষের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলায় এই ধরনের ৯টি আশ্রয় কেন্দ্র তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রতিটির ক্ষেত্রে খরচ ৫০ লক্ষ টাকা। আগে ১০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়েছিল। সম্প্রতি আরও ২৫ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের জেলা আধিকারিক সত্যব্রত হালদার বলেন, “প্রস্তাবিত সবক’টি ফ্লাড শেল্টার তৈরির কাজই চলছে। চলতি বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।”
একই সঙ্গে জেলায় ১৫টি রিলিজ গোডাউন তৈরির কাজও শুরু হয়। বন্যার সময় ত্রাণ বিলির কাজে এই গুদামগুলি ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি গুদাম তৈরিতে খরচ হবে ১৩ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা। আগেই ৫ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা করে বরাদ্দ হয়েছিল। সম্প্রতি বাকি ৬ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে। ইতিমধ্যে খড়্গপুর-২ এবং সাঁকরাইলে রিলিজ গোডাউন তৈরির কাজ শেষও হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই এই গুদাম দু’টি চালু হবে।
পশ্চিম মেদিনীপুর বন্যাপ্রবণ জেলা হিসেবেই পরিচিত। গত বছরও টানা বৃষ্টি এবং জলাধার থেকে প্রচুর পরিমাণ জল ছাড়ার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে কমবেশি ২৬টি ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলের তোড়ে বেশ কয়েকটি বাঁধ ভাঙায় একের পর এক এলাকায় হু হু করে জল ঢুকে পড়ে। জেলায় কোনও ফ্লাড সেন্টার নেই। ফলে, সেই সময়ে সবমিলিয়ে ১০৪টি ত্রাণ শিবির খুলতে হয়। কোনও শিবির চালু হয় স্থানীয় হাইস্কুলে। কোনও শিবির চালু হয় স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও ডেকে পাঠানো হয়। রাজ্য অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের উদ্ধারকারী দলও কাজ করে। নৌকোয় করে বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছনো হয়। জেলার বন্যাপ্রবণ বলে পরিচিত এলাকাগুলোতে ফ্লাড শেল্টার তৈরির দাবি আগেই ওঠে। পরিস্থিতি দেখে জেলা থেকে রাজ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়। রাজ্য থেকে ৯টি ফ্লাড শেল্টার তৈরির অনুমোদন মেলে। সেই মতো সাঁকরাইলের নেপুরা, দক্ষিণদাড়ি, বিনপুর ২-এর মুড়ানশোল, ঝাড়গ্রামের চিতলবনি, গোপীবল্লভপুর- ১ এর জানাঘাটি, কেশপুরের সুদতপুর, দাঁতন- ১ এর পুন্ড্রা, দাসপুর- ১ এর নিজ নাড়াজোল এবং ঘাটালের দিঘা আনন্দপুরে ফ্লাড শেল্টার তৈরির কাজ শুরু হয়।
বন্যার আগে এলাকায় আগাম সতর্কতা আসার কথা। তবে, অনেক সময়ই তা আসে না। ফলে, জলমগ্ন এলাকার মানুষ নানা সমস্যায় পড়েন। স্থায়ী ফ্লাড শেল্টার তৈরি হলে মানুষের সমস্যা কিছুটা কমবে। অন্তত, জল এড়িয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে হয়রান হতে হবে না। প্রস্তাবিত ৯টি ফ্লাড শেল্টার তৈরির কাজ শেষ হলে সেখানে অন্তত ১,৮০০ জনের থাকার ব্যবস্থা হবে। বন্যা বাদে বছরের অন্য সময়েও এই সব শেল্টার অন্য কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। এ জন্য গোড়া থেকেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। শেল্টারগুলিতে গবাদি পশু রাখার জন্য আলাদা ঘর থাকবে। সঙ্গে থাকবে রান্নাঘর ও শৌচাগারও। এক-একটি শেল্টার তৈরিতে খরচ হবে ৫০ লক্ষ টাকা। আগেই ১০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়েছিল। সম্প্রতি আরও ২৫ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, বরাদ্দ টাকায় কাজ কিছুটা এগোলে বাকি ১৫ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy