Advertisement
১৯ মে ২০২৪
প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা

মেডিক্যাল থেকে উধাও সদ্যোজাত-সহ মা

হাসপাতালের শয্যা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছেন মা এবং তাঁর সদ্যোজাত সন্তান। মেদিনীপুর মেডিক্যালের এই ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তা। গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন সবংয়ের খেলনার বাসিন্দা মালতি হেমব্রম।

নিরাপত্তার বালাই নেই ফিমেল সার্জিকাল ওয়ার্ডে। —নিজস্ব চিত্র।

নিরাপত্তার বালাই নেই ফিমেল সার্জিকাল ওয়ার্ডে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪০
Share: Save:

হাসপাতালের শয্যা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছেন মা এবং তাঁর সদ্যোজাত সন্তান। মেদিনীপুর মেডিক্যালের এই ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তা।

গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন সবংয়ের খেলনার বাসিন্দা মালতি হেমব্রম। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। বুধবার সকালে মালতিদেবীর স্বামী রবীন হেমব্রম হাসপাতালে এসে দেখেন, স্ত্রী ও মেয়ে নেই। দিশাহারা রবীনবাবু বাড়ি ফিরে গিয়ে পড়শিদের সব জানান। তারপর শুক্রবার তিন প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়ে মেদিনীপুরে আসেন তিনি। যান কোতোয়ালি থানায়। তবে থানা থেকে তাঁদের জানানো হয়, হাসপাতালের তরফে বুধবার ‘নিখোঁজ ডায়েরি’ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। এ প্রসঙ্গে মেডিক্যালের সুপার যুগল করের বক্তব্য, “ওই প্রসূতি ছুটির আগেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমরা পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।”

এ ভাবে সদ্যোজাত মেয়ে ও স্ত্রী উধাও হয়ে যাওয়ায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত পেশায় দিনমজুর রবীনবাবুও। এ দিন তিনি বলেন, “মেয়ে হওয়ার পরে কয়েকদিন মেদিনীপুরে ছিলাম। আমার কাছে যা টাকা-পয়সা ছিল সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। টাকা আনতেই গত মঙ্গলবার বাড়ি যাই। বুধবার ফিরে এসে দেখি, হাসপাতালে স্ত্রী নেই, বাচ্চাও নেই।” তিনি জানান, নার্সদের জিজ্ঞেস করতে ওঁরা বলেন, ‘কতজন আসেন, কতজন যান, সবাইকে কি নজরে রাখা সম্ভব! না বলে চলে গেলে আমরা কী করব!’

এই ঘটনার পর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। কী ভাবে কর্তব্যরত নার্স-কর্মী এমনকী নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে মা এবং তাঁর সদ্যোজাত সন্তান হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে গেলেন, সেই প্রশ্নও উঠছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য সাফাই, সব রোগীর উপর সমান নজর রাখা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা আছে। এ বার নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। অবশ্য এই আশ্বাস নতুন কিছু নয়। আগেও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি।

গত ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় মালতিদেবীর। খবর পেয়ে এই গৃহবধূর বাড়িতে আসেন খেলনা এলাকার আশাকর্মী বীথিকা ব্রহ্ম দাসপাল। তিনি মালতিদেবীকে সবংয়ের এক নার্সিং হোমে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন। শারীরিক পরিস্থিতি দেখে এই গৃহবধূকে নার্সিং হোম থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন রাতেই মেডিক্যালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন মালতিদেবী। এই নিয়ে তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেন তিনি। আগেই তাঁর দু’টি মেয়ে হয়েছে। বড় মেয়ের নাম আশা, বয়স সাত বছর। মেজো মেয়ে চার বছরের বৈশাখী।

ওই দিন মালতিদেবীর সঙ্গে মেদিনীপুরে এসেছিলেন রবীনবাবু এবং তাঁর এক আত্মীয়। পরদিন আত্মীয় বাড়ি ফিরে যান। স্ত্রীর দেখভাল করার জন্য হাসপাতালে থেকে যান রবিনবাবু। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। রবীনবাবুর সঙ্গে শুক্রবার মেদিনীপুরে এসেছিলেন গৌতম চিনি, মদনমোহন নায়েক এবং মধুসূদন বেরা নামে তাঁরই তিন প্রতিবেশী। গৌতমবাবু, মদনমোহনবাবুদের কথায়, “মেদিনীপুরের মতো হাসপাতাল থেকে এ ভাবে কেউ উধাও হয়ে যাবে, ভাবতেই পারছি না। রোগীদের উপর নজর রাখার দায়িত্ব কার? তিন দিন হয়ে গেল মা-মেয়ের খোঁজ মিলছে না। আমরা সকলেই উদ্বেগে আছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

medinipur security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE