Advertisement
০৮ মে ২০২৪

রাত জেগে বিকিকিনি স্টেশন বাজারে

রাত ৯টা থেকে শুরু হয় বেচাকেনা। চলে সারা রাত। সব্জি কেনাবেচা মিটতে মিটতে হয়ে যায় ভোর তিনটে। গাড়ি ভর্তি সব্জি নিয়ে গন্তব্যে রওনা দেয় ক্রেতা। শিয়ালদার কোলে মার্কেটের পর রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম সব্জি বাজার হিসেবে গণ্য পাঁশকুড়া রেলস্টেশনের সংলগ্ন বাজারের এটাই নিত্য দিনের ছবি।

ভোরেও জমজমাট পাঁশকুড়া স্টেশন বাজার।

ভোরেও জমজমাট পাঁশকুড়া স্টেশন বাজার।

আনন্দ মণ্ডল
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫০
Share: Save:

রাত ৯টা থেকে শুরু হয় বেচাকেনা। চলে সারা রাত। সব্জি কেনাবেচা মিটতে মিটতে হয়ে যায় ভোর তিনটে। গাড়ি ভর্তি সব্জি নিয়ে গন্তব্যে রওনা দেয় ক্রেতা। শিয়ালদার কোলে মার্কেটের পর রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম সব্জি বাজার হিসেবে গণ্য পাঁশকুড়া রেলস্টেশনের সংলগ্ন বাজারের এটাই নিত্য দিনের ছবি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁশকুড়ায় কাঁসাই নদীর দুই তীরে উর্বর জমিতে ধান ছাড়াও একসময় সরিষা, তিল ও পাটের চাষ হত। পরবর্তীকালে সব্জি চাষের রেওয়াজ শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে সব্জি ফলন থেকে অনেকেই আর্থিক দিক থেকে লাভবান হতে শুরু করেন। ফলে আশির দশক থেকে পাঁশকুড়ার এই সব্জি চাষকে কেন্দ্র করে পাঁশকুড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বাজারে বিক্রির রমরমা শুরু হয়। পাঁশকুড়া ব্লক ছাড়াও পাশের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার দাসপুর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, খড়গপুর মহকুমার ডেবরা, খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার কৃষকদের সব্জির বেচাকেনার অন্যতম গন্তব্য এই বাজার। এই সব্জি বাজারে পাইকারি সব্জি বেচাকেনার জন্য প্রায় ৪০০ জনের বেশি আড়তদার রয়েছেন। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা সদর, মহকুমা ও ব্লকের বাজারগুলি থেকে ব্যবসায়ীরা ট্রেনে ও লরিতে চেপে পাঁশকুড়া স্টেশনের পাশে এই সব্জি বাজারে আসেন। সব্জির পাইকারি ও খুচরো বেচাকেনার জন্য মেদিনীপুর ছাড়াও হাওড়া, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বাজার থেকে আসা সব্জি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন রাত থেকে ভিড় জমান এই বাজারে। সব্জি ব্যবসায়ীরা লরিতে চেপে সড়ক পথে এখানে আসেন সব্জি কিনতে। কেনাকাটার পর তা ট্রেনে করে ও লরিতে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া বিভিন্ন বাজারগুলিতে।

আর এই সব্জি বাজারকে ঘিরে রেল দফতর পণ্য মাসুল থেকে আয় করার পাশাপাশি বাজারে যাওয়া-আসা করা ব্যবসায়ী-খুচরো ক্রেতাদের টিকিট থেকে আয় করে। পাঁশকুড়া স্টেশনের পাশে তমলুকগামী যে পাকা রাস্তার দু’ধারে এই সব্জি বাজার চলে গিয়েছে তা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন। ওই রাস্তা ব্যবহারের জন্য বাজারে আসা ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে জেলা পরিষদের তরফে অর্থ আদায় করা হয়। বাজারকে ঘিরে স্টেশনবাজার এলাকায় খাবার হোটেল থেকে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দোকান গড়ে উঠেছে বেশ কয়েক বছর আগেই। চাষের সার, কীটনাশক থেকে পোশাক, বিভিন্ন গৃহস্থালি সামগ্রীর দোকান মিলিয়ে কয়েক’শ ব্যবসায়ী রয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পাঁশকুড়া সব্জি বাজারের বিকল্প হিসেবে ক্রমশ জোরদার হচ্ছে পাশের হাওড়া জেলার ধূলাগড় সব্জি বাজার। ইতিমধ্যে কিছু ব্যবসায়ী ফল ব্যবসার দিকে ঝঁুকছেন। ফলে আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। পাঁশকুড়া স্টেশন বাজার কৃষি পণ্য ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মানিক দে বলেন, “ধুলাগড়ে সব্জি বাজারের জন্য পাঁশকুড়া সব্জি বাজারে ব্যবসার পরিমাণ আগের চেয়ে অনেকটাই কমে গিয়েছে। এখন অনেক ব্যবসায়ী গাড়ি নিয়ে সড়কপথে ধূলাগড়ে যাচ্ছেন। ফলে এখানে সব্জি বাজারে আসা ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমেছে।”

প্রায় শেষের পথে সরকারি কিষান মান্ডি।

জানা গিয়েছে, ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাঁশকুড়ার স্টেশন লাগোয়া সব্জি বাজার জমজমাটভাবে চলেছে। কিন্তু ২০০৬ সালে জেলা পরিষদের যে রাস্তার উপর এই সব্জি বাজার বসে তা সংস্কারের সময় এখানে ব্যবসায়ীদের আসতে অসুবিধা হত। সেই সময় অনেকেই ধূলাগড় সব্জি বাজারে যেতে শুরু করেন। পাঁশকুড়া স্টেশনবাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে পাঁশকুড়া সব্জি বাজার ও সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন সমস্যায় কারণেই অন্যান্য জেলার সব্জি ব্যবসায়ীরা আর এখানে আসতে চাইছেন না। যেমন, স্টেশন থেকে তমলুকগামী পাকা রাস্তার উপর বসা এই বাজারে ব্যবসায়ীদের নিয়ে আসা গাড়ি রাখার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, সরু রাস্তার উপর বসা এই বাজারে বর্ষাকালে একটু বৃষ্টি হলেই গোটা এলাকায় জল জমে চলাফেরা দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। সেই সমস্যা সমাধানেও তেমন কোনও উদ্যোগ করা হয়নি।

এ দিকে পাঁশকুড়ায় সব্জি চাষের ব্যাপকতা ও স্টেশনসংলগ্ন সব্জিবাজারের গুরুত্ব দেখে রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর পাঁশকুড়া রেলস্টেশন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঘাটালগামী সড়কের ধারে কৃষি খামারের জায়গায় কিষান মাণ্ডি বা কৃষক বাজার তৈরি করেছে। প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ওই কৃষক বাজার তৈরির কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হলেও এখন তার ভবিষ্যত্‌ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ ব্যবসায়ীরা। তবে এই কৃষক বাজারের সম্ভাবনা নিয়ে অবশ্য আশাবাদী পুরপ্রধান জাকিউর রহমান খান। পুরপ্রধান বলেন, “পাঁশকুড়া স্টেশন বাজার এলাকায় যে সব্জি বাজার বসে সেখানে পাইকারি ও খুচরো বেচাকেনা চলে। তবে নবনির্মিত কিষান মান্ডিতে পাইকারি সব্জি বাজার চালু করার জন্য পরিকল্পনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে স্টেশন বাজারের কাছে খুচরো সব্জি বাজার চালু থাকবে।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ananda mondal panskura station market amar shohor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE