Advertisement
২০ মে ২০২৪

রেলের নিরাপত্তা খুঁটিয়ে দেখলেন জিএম

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা-সহ পরিকাঠামো গত নানা খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখলেন ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার রাধে শ্যাম। শুক্রবার সকাল ন’টা নাগাদ ডিভিশনের সদর কার্যালয় খড়্গপুরে এসে পৌঁছন তিনি। এরপর তিনি যান নিমপুড়া রেল ইয়ার্ডে।

জিএমকে (বাঁদিক থেকে দ্বিতীয়)) ঘিরে নালিশ জানাচ্ছেন রেলকর্মী আবাসনের মহিলা বাসিন্দারা। শুক্রবার ঝাড়গ্রাম স্টেশন চত্বরে। — নিজস্ব চিত্র।

জিএমকে (বাঁদিক থেকে দ্বিতীয়)) ঘিরে নালিশ জানাচ্ছেন রেলকর্মী আবাসনের মহিলা বাসিন্দারা। শুক্রবার ঝাড়গ্রাম স্টেশন চত্বরে। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০২
Share: Save:

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা-সহ পরিকাঠামো গত নানা খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখলেন ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার রাধে শ্যাম। শুক্রবার সকাল ন’টা নাগাদ ডিভিশনের সদর কার্যালয় খড়্গপুরে এসে পৌঁছন তিনি। এরপর তিনি যান নিমপুড়া রেল ইয়ার্ডে। সেখানে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। সেখান থেকে কলাইকুণ্ডা, ঝাড়গ্রাম, ঘাটশিলা হয়ে টাটানগর শাখার রাখা মাইনস পৌঁছন। গোটা যাত্রাপথে ট্রেনের গতি পরীক্ষা, রেলওয়ে ক্রসিং, ক্যাটারিং পরিষেবা, সিগন্যালিং সিস্টেম-সহ নানা জিনিস সরেজমিনে পরীক্ষা করেন জিএম।

ইন্ট্রিগ্রেটেড সিকিউরুটি সিস্টেমের আওতায় খড়্গপুর স্টেশনে সম্প্রতি ৫৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সম্প্রতি কাজ শেষ হওয়া দুটি সম্প্রসারিত (১-এ এবং ২-এ) প্ল্যাটফর্মের কাজও খতিয়ে দেখেন তিনি। ওই প্লাটফর্ম দুটিকে নয় কামরা থেকে বাড়িয়ে বারো কামরার উপযুক্ত করা হয়েছে। সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ খড়্গপুরে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাধে শ্যাম। সেখানে তিনি বলেন, “ডিভিশনের কাজে সন্তুষ্ট। আশা করব, আগামী দিনেও ডিভিশন একই ভাবে কাজ করে যাবে যাবে।” এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন খড়্গপুরের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

দক্ষিণ পূর্ব রেলের সামগ্রিক নিরাপত্তার বিষয়ে জেনারেল ম্যানেজারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “রেল যাত্রীদের সুরক্ষার ব্যাপারে যত্নবান। খড়্গপুরে-সহ ১০টি স্টেশনে ইন্ট্রিগ্রেটেড সিকিউরুটি সিস্টেম চালুর প্রস্তাব রয়েছে। খড়্গপুরে শুক্রবার তা চালু হল। এর ফলে শুধু নিরাপত্তা নয়, পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও নজরদারি চালানো যাবে।” এরপর তিনি জানান, জঙ্গলমহলের ট্রেন চালুর পর থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভারতীয় রেলে ১৭ হাজার রেল সুরক্ষা বাহিনী নিয়োগ হয়েছে। তাঁর আশা, দক্ষিণ পূর্ব রেলও সেখান থেকে কিছু বাহিনী পাবে। তা হলে নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে বলে তাঁর আশা। খড়্গপুর স্টেশনে ওয়াইফাই চালুরও আশ্বাস দেন তিনি।

রেল এলাকায় কাজ করতে পারছে না পুরসভা। রেলশহরে এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এর জেরে পুরসভা আইনি পথে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাধে শ্যাম বলেন, “ওটা পুরসভার ব্যাপার।”

তবে এ দিন ঝাড়গ্রাম স্টেশন পরিদর্শনে এসে রেলকর্মী আবাসনের মহিলা বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন রাধে শ্যাম। এ দিন দুপুরে স্টেশন সংলগ্ন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ারের অফিস পরিদর্শন করে ফেরার সময় মাঝ রাস্তায় জিএমকে ঘিরে ধরেন এক দল মহিলা। উষা সিংহ, তুলসী সর্দার, কামিনী মাহাতো, আরতি সরেন, রিঙ্কু মাহাতোরা রেল-কর্মীদের পরিজন। তাঁদের অভিযোগ, জিএম পরিদর্শনে আসবেন বলে স্টেশনের দক্ষিণপ্রান্তে এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ারের দফতর যাওয়ার রাস্তার ধারে থাকা কর্মী আবাসনগুলিকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ স্টেশনের উত্তরপ্রান্তে চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে বাছুরডোবা স্টেশন পাড়া সংলগ্ন ৩৫টি কর্মী আবাসনের বেহাল অবস্থা। প্রাচীর বিহীন ভাঙাচোরা ওই আবাসনের ঘরগুলি থাকার অযোগ্য। বৃষ্টি হলেই ফুটো ছাদ দিয়ে ঘরে জল ঢোকে। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তাঁদের দিনযাপন করতে হয়।

উষাদেবী, তুলসীদেবীরা জিএমকে নালিশ করে বলেন, “বাস্তব পরিস্থিতি দেখতে হলে আমাদের কোয়ার্টারগুলি দেখুন। আপনি তো প্ল্যাটফর্মের উল্টো দিকের রেলচত্বরে গেলেনই না!”

আচমকা কর্মীদের পরিজনের এই আচরণে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন খড়্গপুরের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ পদস্থ রেল কর্তারা। জিএম অবশ্য মহিলাদের আশ্বস্ত করেন। ওই মহিলাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ করার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়ে ফিরে যান রাধে শ্যাম। বেহাল আবাসনগুলি জিএম পরিদর্শন না-করায় হতাশ আরতিদেবী, কামিনীদেবীরা পরে বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এলে স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকা সাজিয়ে গুছিয়ে তাঁদের দেখানো হয়। একপ্রান্তে থাকা কোয়ার্টারগুলির হাল ফেরানোর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয় না।”

এ দিন দুপুর একটা নাগাদ বিশেষ ট্রেনে ঝাড়গ্রাম পৌঁছন জিএম। এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে সিগন্যাল সংক্রান্ত দোতলা প্যানেল রুমটি পরিদর্শন করার পরে প্রথম শ্রেণির মহিলা ও পুরুষ যাত্রী প্রতীক্ষালয় দু’টিও ঘুরে দেখেন তিনি। এরপর স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-জনপ্রতিনিধি এবং রেল যাত্রী সংগঠনের প্রতিনিধিদের অভাব-অভিযোগ শোনেন জিএম। লিখিত দাবি-সনদও নেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলি হল, দিল্লি ও পুরীগামী এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ, ঝাড়গ্রাম থেকে সরাসরি হাওড়া যাওয়ার লোকাল ট্রেন ফের চালু করা, স্টেশনের উত্তরপ্রান্তে বন্ধ টিকিট ঘরটি সব সময়ের জন্য চালু করা, সাঁত্রাগাছি-ঝাড়গ্রাম প্যাসেঞ্জার, মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম জঙ্গলমহল প্যাসেঞ্জার, হাওড়া-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন রোজ চালানো, তৎকাল টিকিটের দালালচক্র বন্ধ করা ইত্যাদি। দাবি ও অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন জিএম।

তিনি জানান, দিল্লি ও পুরীগামী ট্রেনের স্টপেজের জন্য সব মহল থেকেই দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে উপযুক্ত সমীক্ষা করে রেল বোর্ডকে অবহিত করা হবে। ঝাড়গ্রামে মেন রেল ক্রসিংয়ে উড়ালপুলের কাজ মার্চের আগে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। ট্রেনের ভিতর মধ্যাহ্নভোজ সেরে দুপুর দু’টো নাগাদ ঘাটশিলার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। ঘাটশিলা ঢোকার মুখে ঝাড়খণ্ডের একটি গ্রামে স্থানীয় সাংসদ বিদ্যুৎবরণ মাহাতোর নেতৃত্বে কিছু মানুষ ঘাটশিলার কাছে হল্ট স্টেশনের দাবি জানান। তাঁদের দাবিও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rail safety gm jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE