লক্ষ্মণ-অপসারণ ও তার অব্যবহিত পরে অনুগামীদের সিংহভাগের দলত্যাগে জেলা সিপিএমের কিছুই যায় আসে না। এমনই মন্তব্য করলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র।
সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে দলের জেলা কার্যালয়ে প্রায় আট ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠক শেষে এই দাবি করেন সূর্যবাবু। তবে স্বীকার না-করলেও পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিএমের সাম্প্রতিক রণকৌশল থেকে ইঙ্গিত লক্ষ্মণ-পর্ব নেতৃত্বের কাছে সত্যিই কতটা ‘চ্যালেঞ্জের’।
কেমন? সিপিএম নেতৃত্ব এখন চাইছেন জেলাজুড়ে যতটা সম্ভব প্রচার-অভিযান করে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে। পাশাপাশি জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে শাখা কমিটি, সর্বত্র নতুন মুখের সংখ্যা বাড়িয়ে দলকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে। সেই লক্ষ্যে, দল ছাড়তে চেয়ে যে সব জেলা কমিটির সদস্য পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে (বহিষ্কৃত জেলা কমিটির সদস্যদের বাদ দিয়ে) আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলবেন জেলা নেতৃত্ব। জানা হবে তাঁদের অসন্তোষের কারণ।
সিপিএমেরই এক সূত্রে খবর, সোমবার সূর্যবাবুর সভায় উপস্থিত ছিলেন কোলাঘাটের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা দলের জেলা কমিটির সদস্য মৃত্যুঞ্জয় ওঝা। মৃত্যুঞ্জয়বাবু গত ২৬ জুলাই লক্ষ্মণ-অনুগামীদের সঙ্গে পদত্যাগপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন। তাঁর এ দিনের উপস্থিতি সেই ‘কথা বলারই’ ফলশ্রুতি কি না, তা নিয়ে জেলা রাজনীতিতে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, এ দিন সূর্যবাবু, জেলার ভারপ্রাপ্ত রাজ্যনেতা রবীন দেবের উপস্থিতিতে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে নতুন মুখ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় কাঁথির বামপ্রার্থী তাপস সিংহ এবং রীতা দত্তকে।
বস্তুত, লক্ষ্মণ শেঠের নেতৃত্বে দলত্যাগী সিপিএম নেতাদের নিয়ে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে নতুন সংগঠন ‘ভারত নির্মাণ মঞ্চ’। সিপিএম ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে চার পাতার প্রচারপত্র বিলির সঙ্গেই মঞ্চের তরফে জেলার সংগঠন গড়তে নানা জায়গায় বৈঠক-কর্মসূচি করা হচ্ছে। মঞ্চের দবি, তাতে ভাল সাড়াও মিলছে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এই খবরে প্রমাদ গুনছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলেরই কিছু নেতার আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে পাল্টা রণকৌশল না-নিলে সংগঠনের জন্য আরও খারাপ দিন অপেক্ষা করছে। তাই লাগাতার প্রচার কর্মসূচির পাশাপাশি নতুন মুখ কিংবা দলত্যাগীদের ফিরিয়ে সংগঠনকে অক্সিজেন দেওয়ার ভাবনা বলে দলের একাংশের ব্যাখ্যা।
বৈঠকে জেলা কমিটির নতুন সাত সদস্যের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও প্রস্তাব গৃহিত হয়। জেলা কমিটির নতুন সদস্য হিসেবে লক্ষ্মীকান্ত সামন্ত, সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, অবিনাশ দাস, শ্যামল মাইতি, নান্টুপদ মাজি, হরপ্রসাদ ত্রিপাঠী, নিমাই মেট্যার নাম উঠে আসে। আবার বৈঠকে দলের নন্দকুমার জোনাল কমিটির সম্পাদক হৃষিকেশ মাজিকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও এ দিন নেওয়া হয়।
এ দিন জেলা কার্যালয়ে সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দফায় দফায় যথাক্রমে জেলা কমিটি, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক পরে তমলুক, তমলুক শহর, তমলুক গ্রামীণ জোনাল কমিটির সদস্যদের নিয়ে সাধারণ সভা হয়। সভা শেষে লক্ষ্মণ শেঠ ও অনুগামীদের দলত্যাগ নিয়ে সাংবাদিক দের প্রশ্নের উত্তরে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “এটা একটা টুকরো ব্যাপার। এতে দলের কোনওরকম ক্ষতি হবে না।” তিনি স্পষ্ট করে দেন, “সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লাল ঝাণ্ডার লড়াই চলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy