Advertisement
০৫ মে ২০২৪

শান্তির ভোটে সন্ত্রাসের নালিশ ঘাটালে

দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া আপাত শান্ত ভাবেই মিটল ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের ভোট। প্রায় প্রতি বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশও ছিল চোখে পড়ার মতো। গোটা এলাকায় টহলও ছিল নজরকাড়া। যদিও কংগ্রেস-বামেরা রিগিংয়ের অভিযোগ তুলে লোকসভা এলাকার একাধিক বিধানসভার কিছু বুথে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি তুলেছে। দিনের শেষে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৮২.৬৭ শতাংশ।

অভিযোগ জানাতে পিংলা বিডিও অফিসে লোধা-শবর সম্প্রদায়ের মহিলারা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

অভিযোগ জানাতে পিংলা বিডিও অফিসে লোধা-শবর সম্প্রদায়ের মহিলারা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

অভিজিৎ চক্রবর্তী ও দেবমাল্য বাগচি
ঘাটাল ও পিংলা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০২:১৪
Share: Save:

দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া আপাত শান্ত ভাবেই মিটল ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের ভোট। প্রায় প্রতি বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশও ছিল চোখে পড়ার মতো। গোটা এলাকায় টহলও ছিল নজরকাড়া। যদিও কংগ্রেস-বামেরা রিগিংয়ের অভিযোগ তুলে লোকসভা এলাকার একাধিক বিধানসভার কিছু বুথে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি তুলেছে। দিনের শেষে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৮২.৬৭ শতাংশ।

এ দিন ঘাটাল, দাসপুর, সোনাখালি ও পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা এলাকায় ঘুরে আর তেমন কোনও বড় ঘটনা চোখে পড়েনি। দাসপুর বিধানসভার দাসপুর-১ নম্বর ব্লকের রাজনগর তফসিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি বুথে (২৬৮, ২৬৯) ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ওঠে। ভোটারদের অভিযোগ ছিল, বুথ দিতে আসার পথে বাধা দিচ্ছিল তৃণমূল সমর্থকরা। ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ফাঁকা এলাকা। বিদ্যালয় চত্বরের কাছেই ৩০-৪০ জন যুবকের একাধিক জটলা। কিন্তু ওই এলাকারই অন্যান্য বুথে ভোটারদের লম্বা লাইন। বিস্কুট খেতে খেতে এক পুলিশ অফিসার বলেন, “কিছুই হয়নি। সব ঠিকঠাক চলছে।” এরপর সাংবাদিকরাই খবর দেন পুলিশে। ঘটনাস্থলে আসেন দাসপুর থানার ওসি শ্যামল দাস। এরপর তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয় এলাকায় রুট মার্চ। একই ছবি দেখা গিয়েছে দাসপুরের সরবেড়িয়া পঞ্চায়েতের পোষ্টাঙ্কা বুথ, শোলাগেড়িয়া, মোহনপুর, দেওয়ানচক, ইরপাড়া, বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন বুথে। পিংলার দক্ষিণমহল্লার মৌশাবক্স প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (১৮৯ নম্বর) বুথে ভোট দিতে যাওয়া সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ দিন তৃণমূলের পক্ষে থেকেও বড়াগেড়িয়া, দাংড়ায় দলের পোলিং এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ ওঠে।

ছাপ্পা ভোটের খবর শুনে এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়ে আক্রান্ত হন সিপিএমের কুঠিঘাট লোকাল কমিটির সম্পাদক আবদুস সামাদ। অভিযোগের তির তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের দিকে। গুরুতর জখম অবস্থায় আবদুস সামাদ ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষই অভিযোগ জানিয়েছে।তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ এলাকায় রটে যায় মোহনপুর পঞ্চায়েতের বিভিন্ন বুথে ছাপ্পা ভোট করছে তৃণমূল। এলাকা পরিদর্শনে বেরোন আবদুস সামাদ। অভিযোগ শোলাগেড়িয়া এলাকার একটি বুথের সামনে যেতেই তাঁর উপর চড়াও হয় তৃণমূল সমর্থকরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনীর সেনাদের সামনেই আমাদের দলের সদস্যকে এভাবে মারল তৃণমূল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের ঘাটাল ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ মাজি বলেন, “সিপিএমের সমর্থকরাই আমাদের মারধর করে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে জখম হয়েছেন আমাদের দলের পাঁচ কর্মীও।”

পিংলার ধনেশ্বরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আকনাগেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি বুথে ঠাকুমাকে নিয়ে গিয়ে ভোট দেওয়ানোর অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, পিংলার মুণ্ডমারি উষানন্দ বিদ্যাপীঠের বুথে একইভাবে ছেলের দেখানো বোতাম টিপেই বাবা আকবর আলি ভোট দিলেন বলে অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী কোনও অসমর্থ ভোটার নিজে ভোট দিতে অক্ষম হলে বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসারেরা তাকে সাহায্য করতে পারেন। পিংলার মুণ্ডমারি উষানন্দ বিদ্যাপীঠের বুথের সেক্টর অফিসার দিব্যেন্দু প্রামাণিক বলেন, “এসব দেখার দায়িত্ব প্রিসাইডিং অফিসারের।”

তবে ঘাটাল লোকসভা এলাকার কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া এ দিন দলীয় অফিসে বসে সাংবদিকদের বলেন, “ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে তৃণমূলের সন্ত্রাসের আতঙ্কে অনেকেই তৃণমূলকে ভোট দিতে বাধ্য হয়েছেন। সব তথ্য রয়েছে। ঠিক সময়েই তা আমরা প্রকাশ করব।” বাম প্রার্থী সন্তোষ রাণাও বলেন,“মানুষ ভয়েই শাসক দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। ঘাটাল, দাসপুরের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় একাধিক বুথ দখল, বাম কর্মীদের মারধর, বুথ থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাই আমরা বেশ কিছু বুথে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানাব।”

যদিও বাম এবং কংগ্রেসের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিন সকাল সকালই ঘাটালে তৃণমূলের দলীয় অফিসে এসে পৌঁছে যান দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, সৌমেন মহাপাত্ররা। তৃণমূলের শঙ্কর দোলই বলেন, “ঘাটাল, দাসপুর-সহ সব বিধানসভা এলাকায় শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট হয়েছে। দু’এক জায়গায় বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। সব বুথে বিরোধীরা এজেন্ট না দিতে পারলে আমরা কী করব?” এ দিক দেব বলেন, “আমি চেয়েছিলাম মানুষ নিজের ভোট নিজেই দিক। এটা হয়েছে। আমি খুশি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE