শালবনির ঘটনায় সতর্ক ভাবে এগোতে চাইছে পুলিশ। জমিদাতা কয়েকজনের হাতে জিন্দল-কর্মী প্রহৃত হওয়ার ঘটনায় বুধবার পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া পরিস্কার মাহাতোকে দু’দফায় শালবনি থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরিস্কারবাবুকে পুলিশ কর্তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, মারধরের ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়। সকলকেই সংযত থাকতে হবে।
মঙ্গলবার সকালে প্রহৃত হন জিন্দলদের এক কর্মী। ওই দিন সন্ধ্যায় শালবনি থানায় ডেকে পাঠানো হয় পরিস্কারবাবুকে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ডেপুটি পুলিশ সুপার (অপারেশন) সৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, আইসি মিহির দে। ফের বুধবার সকালে তাঁকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। এ দিন সকালে অবশ্য আইসি’ই তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশের এক সূত্রে খবর, জমিদাতাদের কী কী দাবি রয়েছে, আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচিই বা কী, এ সবই পরিস্কারবাবুর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়। পুলিশ-কর্তাদের সব প্রশ্নেরই উত্তর দেন জমিদাতা পরিবারের এই সদস্য।
থানায় ডেকে পুলিশ-কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের কথা মানছেন পরিস্কারবাবু। তিনি বলেন, “থানা থেকে ডাকা হয়েছিল। তাই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একবার শালবনি থানায় গিয়েছিলাম। বুধবার সকালেও একবার থানায় গিয়েছি। আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশের অফিসারেরা আমার কাছে যা যা জানতে চেয়েছেন, জানিয়েছি।” তাঁর কথায়, “ওঁরা ভাল ব্যবহারই করেছেন। বলছিলেন, প্রকল্পের কর্মীকে মারধর করা ঠিক হয়নি। সকলকে সংযত থাকতে হবে। আমিও বলেছি, আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ভাবেই হচ্ছে। আগামী দিনেও হবে। আমরা অশান্তি চাই না।”
পুলিশ অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “ঠিক জিজ্ঞাসাবাদ নয়। এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশদে জানতেই ওই গ্রামবাসীকে থানায় ডাকা হয়েছিল। এটা সাধারণ ব্যাপার!” কেন এখনও জিন্দল-কর্মীকে মারধরের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হল না? জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “একজনকে ধাক্কাধাক্কি করা হয়েছে। তিনিই বিষয়টি জানিয়েছেন। আমরা দেখছি।”
জেলা পুলিশের এক সূত্রে খবর, শালবনির ঘটনা নিয়ে তড়িঘড়ি কোনও পদক্ষেপ করতে চাইছেন না পুলিশ-কর্তারা। বরং এমন ঘটনা যাতে আর না-ঘটে, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। পদক্ষেপ নেওয়ার আগে পুলিশকে ভাবাচ্ছে সাম্প্রতিক অতীত অভিজ্ঞতাই। কেমন? শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত এই ইস্পাত প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস হয় ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও। শিলান্যাস অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথেই ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে কলাইচণ্ডী খালের কাছে মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। জখম হয়েছিলেন কয়েকজন পুলিশকর্মী। মাইন বিস্ফোরণে অভিযুক্তদের খোঁজে লালগড়ে হানা দেয় পুলিশ। তখন নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে। এরপরই জঙ্গলমহলে আন্দোলন শুরু হয়। ছত্রধর মাহাতোদের নেতৃত্বে জনগণের কমিটি গড়ে ওঠে। বাকিটা ইতিহাস।
দিন কয়েক আগে হুগলির ভদ্রেশ্বরে এক চটকল-কর্তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর পরপরই পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত কারখানা এলাকায় ঢোকার মুখে প্রকল্পেরই এককর্মী প্রহৃত হওয়ার ঘটনায় অবশ্য শিল্পমহলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। প্রকল্পের আরও অনেক কর্মীই ‘নিরাপত্তার অভাব’ বোধ করছেন।
বস্তুত, কারখানা চালু এবং কাজের দাবিতে ইতিমধ্যে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেছেন জমিদাতাদের একাংশ। গত এক সপ্তাহে জিন্দলদের প্রকল্প এলাকার সামনে দু’-দু’বার বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy