Advertisement
E-Paper

স্কুল ছেড়ে দোকান সামলাচ্ছে শিশুরাই

শিশু শ্রমিক নয়, স্কুল ছাত্র। শৈশব সুরক্ষিত করতে এমনই পরিকল্পনা নিয়েছে দেশের সরকার। তাই শ্রম দফতর প্রতিটি জেলায় বেশ কিছু স্কুল চালায়। প্রাথমিক স্তরের এই স্কুলগুলিতে কিছু দিন লেখাপড়ার পর শিশু শ্রমিকরা ফিরে যাবে মূল স্রোতের স্কুলে, এটাই প্রত্যাশা।

অভিজিত্‌ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০১
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র শিশুশ্রমিক স্কুল। ঘাটালের কোন্নগরে।—নিজস্ব চিত্র।

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র শিশুশ্রমিক স্কুল। ঘাটালের কোন্নগরে।—নিজস্ব চিত্র।

শিশু শ্রমিক নয়, স্কুল ছাত্র। শৈশব সুরক্ষিত করতে এমনই পরিকল্পনা নিয়েছে দেশের সরকার। তাই শ্রম দফতর প্রতিটি জেলায় বেশ কিছু স্কুল চালায়। প্রাথমিক স্তরের এই স্কুলগুলিতে কিছু দিন লেখাপড়ার পর শিশু শ্রমিকরা ফিরে যাবে মূল স্রোতের স্কুলে, এটাই প্রত্যাশা।

বাস্তবে কী ঘটছে?

প্রশাসন সূত্রে খবর, ঠোঙা বাঁধা, জরির কাজ, বাজারে দোকান চালানোর মতো নানা কাজ থেকে অনেক শিশুকে শ্রমিক বিদ্যালয়ে আনা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তারা রয়ে গিয়েছে খাতায় কলমে। অধিকাংশ দিনই তারা স্কুলে আসে না। কেউ মাসে দশ দিন, কেউ বা তারও কম দিন স্কুলে যায়। এই ছবি গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার। স্কুলছুটদের ফের স্কুলে ভর্তি করার প্রবণতাও কমছে।

কেন এমন হচ্ছে? শিশু শ্রমিক বিদ্যালয়গুলিতে পড়ার পাশাপাশি জরির কাজ, দর্জির কাজ-সহ নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতি মাসে দেড়শো টাকা করে ভাতাও দেওয়া হয়। তাহলে কেন শিশুরা স্কুলে আসছে না? ঘাটাল ও দাসপুরের ধর্মার শিশু শ্রমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিশোরকুমার সামন্ত, শ্যামসুন্দর দোলই, শ্যামলী জানারা বলেন, “কোনও ছাত্র না এলে আমরা তার বাড়িতে গিয়ে স্কুলে আসতে বলি। তাতে কাজ হয়। কিন্তু দু’চারদিন পর ফের অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ফের তার বাড়ি যাই। এভাবেই চলছে।”

শিক্ষকদের একাংশের মতে, ভাতার টাকা অনিয়মিত আসাও শিশুদের আগ্রহ হারানোর কারণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার শিশু শ্রমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কথায়, “আমরা সময় মতো বেতনও পাই না। ছাত্র-ছাত্রীরাও নিয়ম করে ভাতা পায় না। নিয়ম করে টাকাটা পাওয়া গেলে হয়তো স্কুলে উপস্থিতির হার বাড়ত।” ছাত্রদের সঙ্গে কথা বললেও সেই ছবিটাই স্পষ্ট হয়। সৌরভ মায়ের কান্না দেখতে না পেরে ঠোঙা বাঁধে। সুরজিত্‌ মায়ের সঙ্গে গেঁড়ি-গুগলি তুলে বসে বাজারে। দীনেশ জরির কাজ করে। সবই সংসারে দুটি বাড়তি টাকার জন্য।

যে শিশুরা এখনও বিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে পা-ই রাখতে পারেনি, তাদের সংখ্যাও কম নয়। ঘাটালের সহ শ্রম কমিশনার দীপনারায়ণ জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেই মোট ৪২টি শিশু শ্রমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে ঘাটাল মহকুমায় ১২টি বিদ্যালয় রয়েছে। জেলায় ওই বিদ্যালয়গুলিতে মোট ছাত্রের সংখ্যা ১৮২০ জন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার শ্রম দফতরের এক অফিসার বলেন, “ঠিক মতো গণনা করলে জেলায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও বেশি দাঁড়াবে।”

প্রশাসন সূত্রে খবর, শিশু শ্রম রোধ করতে ১৯৮৬ সালে কেন্দ্রীয় শ্রম দফতর শ্রম আইন চালু করেছিল। ১৯৮৭ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে শিশু শ্রমিক বিদ্যালয় চালু হয়। সম্প্রতি শিক্ষার অধিকার আইনও চালু হয়েছে। কিন্তু তাতেও স্কুলে ফেরানো যাচ্ছে না বহু শিশুকে। ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুকে দিয়ে কাজ করালে মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সংস্থান রয়েছে। জেলার এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, “যাঁরা শিশুদের দিয়ে কাজ করান, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করে শাস্তির ব্যবস্থা করলেই শিশুশ্রম অনেকটা বন্ধ করা সম্ভব হবে।” তা হলে সরকার তা করছে না? নজরদারি করার মতো যথেষ্ট কর্মী নেই, এমনই কারণ দর্শালেন তিনি।

জেলার বাজার-হাট, বাস-ট্রেন, সর্বত্র চোখ মেললেই নজরে পড়ে শিশু শ্রমিকদর। কেবল সরকারি কর্তারাই কেন নজর করে উঠতে পারেন না, শিশু দিবসে সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

iswar chandra child labour school shop keeping avijit chakraborty ghatal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy