টাকা এসে গিয়েছে। কিন্তু এখনও কাজ শুরু করা যায়নি। কাজ শুরু হতে আরও মাস দু’য়েক লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। কারণ, সাংসদেরা প্রকল্প রিপোর্ট জমা দিতেই দেরি করেছেন। ফলে আর্থিক বছরের মধ্যেই নিয়ম মেনে কাজ করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সাংসদ তহবিলের পরিস্থিতিটা এমনই। যদিও জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “সাংসদ তহবিলের প্রথম কিস্তির টাকাও এসে গিয়েছে। সাংসদেরা কিছু প্রকল্প জমাও দিয়েছেন। দ্রুত গতিতে যাতে কাজ শুরু করা যায় সে জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় তিন জন সাংসদ রয়েছেন। তিন জনই তৃণমূলের। এঁদের মধ্যে দু’জন আবার তারকা সাংসদ। একজন ঘাটালের সাংসদ দেব অর্থাৎ দীপক অধিকারী। অন্য জন মেদিনীপুরের সাংসদ সন্ধ্যা রায়। আর রয়েছেন ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেন। তিন জনেরই সাংসদ তহবিলের প্রথম কিস্তির টাকা ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে। আড়াই কোটি করে তিনজনের সাড়ে ৭ কোটি টাকা। খরচের হিসাব দিলে ফের বাকি সাড়ে ৭ কোটি টাকা মিলবে। একটি আর্থিক বছরে একজন সাংসদ এলাকার উন্নয়নের জন্য সাংসদ তহবিল থেকে ৫ কোটি টাকা পান। মে মাসে ভোট শেষ হলে গেলেও নিজেদের এলাকার কোন কাজ আগে করা হবে সে ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ না নিতে পারায় প্রকল্প রিপোর্টও জমা দিতে পারেননি সাংসদেরা। সম্প্রতি অবশ্য দু’জন সাংসদের প্রকল্প রিপোর্ট জমা পড়েছে। দেব অর্থাৎ দীপক অধিকারী ৪ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকার প্রকল্প রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সন্ধ্যা রায় দিয়েছেন ৪ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকার। সাংসদ উমা সরেনের প্রকল্প রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। নির্বাচনের মাস বাদ দিলেও চার মাস অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তার বাইরেও নানা ঝক্কি রয়েছে। প্রকল্প রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট লাইন ডিপার্টমেন্টকে তা পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট লাইন ডিপার্টমেন্ট তা ভেটিং করে ফের জমা দেবেন জেলাশাসকের কাছে। জেলাশাসক অনুমোদন দেওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করতে হয়। ফলে সঠিক প্রক্রিয়া মেনে কাজ শুরু করতেই কিছুটা সময় লেগে যায়। এই বিষয়গুলি যদিও কারও অজানা নয়। তা সত্ত্বেও সাংসদেরা প্রকল্প রিপোর্ট জমা দিতে দেরি করায় সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সব এলাকার দাবি মেনে প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে। যে এলাকায় কাজ কম হবে সেই এলাকার নেতৃত্বের গোঁসা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সবাইর মতামত নিতে, সবার চাহিদা পূরণ করতে দেরি হয়ে গিয়েছে। আর সবার মন রাখতে গিয়ে জটিলতাও দেখা দিয়েছে। কিছু একটা করতে হবে, এমন ভাবনা থেকে কাজ করায় অগভীর নলকূপ, গভীর নলকূপ থেকে শুরু করে এলাকার স্কুলের ক্লাসরুম তৈরির মতো বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকল্প জমা পড়েছে। ঘাটালের সাংসদ দেবের কথায় ধরা যাক। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ১০টি প্রস্রাবাগার, ১০টি বাথরুম, ১০টি পায়খানা করতে ৮ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। ঘাটাল পুরসভার ১ থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১টি করে ৭টি অগভীর নলকূপ তৈরির প্রকল্প তৈরি করেছেন সাড়ে ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে। এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, “সাধারণত সাংসদ তহবিলের অর্থে এলাকার বড় কাজ করলেই ভাল হয়। যে কাজের জন্য অন্য খাতের অর্থ মেলে না। তাতে স্থায়ী কাজ হত। দ্রুত গতিতেও কাজ সম্পন্ন করা যেত। ছোট্ট ছোট্ট প্রকল্প তৈরি করায় কাজ রূপায়ণেও সমস্যা দেখা দেবে।”
কিছু ক্ষেত্রে বড় প্রকল্প ধরা হয়নি এমন নয়। মেদিনীপুরের সাংসদ সন্ধ্যা রায় মোহনপুরে স্লুইস গেট তৈরির জন্য ২২ লক্ষ টাকার প্রকল্প তৈরি করেছেন, মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ডের উন্নয়নে ২৫ লক্ষ টাকার প্রকল্প তৈরি করেছেন। আবার ছোট্ট প্রকল্পও রয়েছে অন্য ব্লকের মানুষকে খুশি করার জন্য। যেমন কেশিয়াড়িতেই ৯টি অগভীর নলকূপ তৈরির প্রকল্প তৈরি করেছেন ৪৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি কাজ লাইন ডিপার্টমেন্টকে দিয়ে করানো, সঠিকভাবে তা হচ্ছে কিনা দেখভাল করা, খরচের হিসাব নেওয়া— ছোট প্রকল্পের ক্ষেত্রে এ সব করতে সময় লেগে যায়। আর তাতেই খরচের হিসাব দিতে দেরি হয়। আবার খরচের হিসাব না দিলেও দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ মিলবে না। তাই সকলেই যাতে দ্রুত প্রকল্প রিপোর্ট জমা দেন প্রশাসনের পক্ষ তেকে সাংসদদের সেই আবেদনও জানানো হয়েছে। নতুন আর্থিক বছরেই দেখা যাবে, সাংসদেরা সেই আবেদনে কতটা সাড়া দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy