Advertisement
১৯ মে ২০২৪
প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা

সরকারি অফিসে দুষ্কৃতী হানা, লুঠ ৫১ হাজার

ঠুনকো নিরাপত্তা বলয়। জেলা পুলিশ সুপারের অফিস থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নিবন্ধকের অফিসে ডাকাতির ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে শহরের নিরাপত্তা। জেলা নিবন্ধকের অফিসে একতলায় রয়েছে জেলা নিবন্ধকের কার্যালয়। ওই ভবনের দোতলায় জেলা সেচ দফতরের কার্যালয় ও তিন তলায় জেলা সিআইডি কার্যালয়, মহকুমা ক্ষুদ্র সেচ দফতর ও একটি বেসরকারি প্রশিক্ষণ সংস্থার কার্যালয় রয়েছে। রাতে ভবনের নিরাপত্তা রক্ষায় তিন জন নৈশ প্রহরীও থাকেন।

তছনছ জেলা নিবন্ধকের কার্যালয়ের আলমারি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

তছনছ জেলা নিবন্ধকের কার্যালয়ের আলমারি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

ঠুনকো নিরাপত্তা বলয়। জেলা পুলিশ সুপারের অফিস থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নিবন্ধকের অফিসে ডাকাতির ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে শহরের নিরাপত্তা।

জেলা নিবন্ধকের অফিসে একতলায় রয়েছে জেলা নিবন্ধকের কার্যালয়। ওই ভবনের দোতলায় জেলা সেচ দফতরের কার্যালয় ও তিন তলায় জেলা সিআইডি কার্যালয়, মহকুমা ক্ষুদ্র সেচ দফতর ও একটি বেসরকারি প্রশিক্ষণ সংস্থার কার্যালয় রয়েছে। রাতে ভবনের নিরাপত্তা রক্ষায় তিন জন নৈশ প্রহরীও থাকেন। এহেন নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেও কীভাবে দুষ্কৃতীরা নৈশরক্ষীকে বেঁধে রেখে ৫১ হাজার টাকা লুঠ করে পালাল, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। প্রশাসনিক ভবনেই এ ধরনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কাগ্রস্ত শহরের বাসিন্দারা।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন রাতে ওই অফিস ভবনে থাকা নৈশপ্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাতে তমলুকে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নিবন্ধকের অফিসে চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। অফিসের প্রবেশ পথের একটি দরজার তালা ভেঙে ও একটি কাঠের দরজার ছিটকিনি ভেঙে তাঁরা অফিসে ঢোকে। ভবনের নৈশরক্ষীকে বেঁধে রেখে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে ভবনের একতলায় জেলা নিবন্ধকের অফিসের বেশকয়েকটি আলমারির তালা ভেঙে লকারে রাখা প্রায় ৫১ হাজার টাকা লুঠ করে পালায় বলে অভিযোগ। অফিসের পাশেই এক চায়ের দোকানদার অফিসের ভিতরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় থাকা নৈশরক্ষীর চিত্‌কার শুনে তাঁদের উদ্ধার করেন। তমলুক থানার পুলিশ-সহ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ওই অফিসে তদন্তে যান। জেলা পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “জেলা নিবন্ধকের অফিসে কিছু টাকা খৌওয়া যাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত চলছে।”

শুক্রবার সকালে তমলুক শহরের মানিকতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে আধ কিলোমিটার দূরে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে থাকা জেলা নিবন্ধকের ওই অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের নৈশরক্ষী ভক্তিপদ মাইতি পুলিশের কাছে বৃহস্পতিবার রাতে দুষ্কৃতীদের হামলার বিবরণ দিচ্ছেন। ভবনের একতলার পুরো এলাকা নিয়ে রয়েছে ওই অফিস। অফিসের প্রবেশ পথে লোহার গ্রিলের দরজার পরে রয়েছে আরও একটি কাঠের দরজা। ওই কাঠের দরজা পেরিয়ে অফিসের ভিতরে মেঝেতে বিছানা পেতে ঘুমিয়েছিল অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত নৈশরক্ষী ভক্তিপদ মাইতি। ভক্তিপদবাবুর অভিযোগ, “রাত ১টা নাগাদ কাঠের দরজার ছিটকিনি ভেঙে দুষ্কৃতীরা ঢোকার চেষ্টা করার সময় আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে যায়। সেই সময় আমি তাঁদের কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই মুখে কাপড় ঢাকা জনা দশেক দুষ্কতী দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ে।”

তাঁর আরও অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা আমাকে কোনও কথা বললে কেটে ফেলার হুমকি দেয়। এরপরেই আমার কাছে থাকা মোবাইল কেড়ে নেয়। মাফলার দিয়ে পিছমোড়া করে আমার দু’হাত বেঁধে দেয়, দড়ি দিয়ে আমার দু’পা বেঁধে দেয়, একটি জামা ছিড়ে আমার মুখে বেঁধে দেয়। এরপর আমাকে পিছমোড়া করে বিছানার উপর ফেলে রাখে।” ভক্তিপদবাবু জানান, অফিসের মধ্যে একের পর এক আলমারি ভাঙার শব্দ পাচ্ছিলাম। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে ভিতরে আলমারি ভেঙে টাকা নেওয়ার পরে দুষ্কৃতীরা চলে যায়। চলে যাওয়ার সময় ভিতরে থাকা দু’টি সাইকেল নিয়ে তাঁরা চলে যায়। এরপর আমি কোনওমতে মুখের কাপড় সরিয়ে চিত্‌কার করি।

পুলিশ ও অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা অফিসের ভিতরে থাকা জেলা নিবন্ধক অফিসারের ঘরে থাকা আলমারি ভেঙে আলমারির তালার চাবির গোছা নিয়ে একাধিক আলমারি খোলে। পাশাপাশি, কিছু আলমারির তালাও ভাঙে তাঁরা। সবমিলিয়ে, অফিসের ভিতরে থাকা প্রায় ২০টি আলমারি খোলা হয়, অফিসের টেবিলে থাকা ড্রয়ার ও অফিসের রেকর্ড রুমে থাকা একটি লকারে রাখা প্রায় ৫১ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা নিবন্ধক বংশীবদন সাহা বলেন, “বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ পাওয়া ৫০ হাজার ৯৫৭ টাকা নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এরআগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। অফিসে স্থায়ী নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের জন্য উর্ধ্বতন জানানো হবে।”

হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে ও জেলা পুলিশের সদর দফতরের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে থাকা ওই অফিস ভবনে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে পাঁচটি অফিস রয়েছে। ভবনের তিনটি তলায় মিলিয়ে রয়েছেন তিন জন নিরাপত্তারক্ষীও। দুষ্কৃতীরা দু’ঘণ্টা ধরে ওই ভবনের একতলায় তাণ্ডব চালানোর পরও কেন উপরের দু’টি তলার নিরাপত্তা রক্ষীরা তা টের পেলেন না, প্রশ্ন উঠছে সেবিষয়েও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

security tamluk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE