Advertisement
E-Paper

৩৪ বছর বনাম ৩৪ মাস, চাপানউতোরেই ভোট যুদ্ধ

বিগত ৩৪ বছরের বাম জমানা আর গত ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূলের গত ৩৪ মাস-এই চাপানউতোরের মধ্যেই আজ, সোমবার কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের ভোট। তৃণমূলের আঁতুড়ঘর বলে চিহ্নিত কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে রয়েছে চণ্ডীপুর, পটাশপুর, কাঁথি উত্তর, ভগবানপুর, খেজুরি, কাঁথি দক্ষিণ আর রামনগর-এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র। তবে ২০০৯ সালের লোকসভা নিবার্চনের সময় এই সাতটি বিধানসভার মধ্যে কাঁথি দক্ষিণ, আর ভগবানপুর এই দুটি বিধানসভা কেন্দ্র বাদে বাকি পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রই সিপিএম বা বামফ্রন্টের দখলে ছিল।

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০১:৫৬
নির্ধারিত কেন্দ্রে যাওয়ার অপেক্ষায় রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। কাঁথিতে সোহম গুহর তোলা ছবি।

নির্ধারিত কেন্দ্রে যাওয়ার অপেক্ষায় রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। কাঁথিতে সোহম গুহর তোলা ছবি।

বিগত ৩৪ বছরের বাম জমানা আর গত ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূলের গত ৩৪ মাস-এই চাপানউতোরের মধ্যেই আজ, সোমবার কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের ভোট।

তৃণমূলের আঁতুড়ঘর বলে চিহ্নিত কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে রয়েছে চণ্ডীপুর, পটাশপুর, কাঁথি উত্তর, ভগবানপুর, খেজুরি, কাঁথি দক্ষিণ আর রামনগর-এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র। তবে ২০০৯ সালের লোকসভা নিবার্চনের সময় এই সাতটি বিধানসভার মধ্যে কাঁথি দক্ষিণ, আর ভগবানপুর এই দুটি বিধানসভা কেন্দ্র বাদে বাকি পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রই সিপিএম বা বামফ্রন্টের দখলে ছিল। গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল, কংগ্রেস ও এসইউসি জোটের হয়ে তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী ৫৩.৯৬ শতাংশ ভোট পেয়ে সিপিএম প্রার্থী প্রশান্ত প্রধানকে পরাজিত করেছিলেন। তৃণমূলের দখলে থাকা তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র বাদে বামফ্রন্টের দখলে থাকা খেজুরি, চণ্ডীপুর, পটাশপুর, কাঁথি উত্তর কেন্দ্রেও সিপিএম প্রার্থী প্রশান্ত প্রধানের চেয়ে বেশী লিড পেয়েছিলেন। এমনকী সিপিএমের লালদুর্গ হিসেবে চিহ্নিত খেজুরিতেও শিশির অধিকারী সিপিএমের প্রশান্ত প্রধানের চেয়ে ১৫৩১টি বেশী ভোট পেয়ে লিড পেয়েছিলেন।

সেই জয়যাত্রা অব্যাহত ছিল ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের নিজেদের দখলে থাকা দুটি ও বামেদের দখলে থাকা পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রেই সিপিএমকে সাফ করে সবেতেই জয়ী হয় তৃণমূল। ২০১২ সালের পঞ্চায়েত নিবার্চনে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের সবকটি গ্রামপঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি জিতে নেয় তৃণমূল।

এ বার বিধানসভা নির্বাচনে তাই শিশির অধিকারীর জয় নিয়ে তাই নিশ্চিত তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, গত লোকসভা ভোটে সাংসদ হয়ে শিশির অধিকারী কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের উন্নয়নে যে সদর্থক ভূমিকা পালন করেছেন তাতে জোড়াফুলের জয় সময়ের অপেক্ষা। তৃণমূল সরকারের উন্নয়ন যজ্ঞের অন্যতম কাণ্ডারি শিশিরবাবু। কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন্দু অধিকারী বলেন, “গত ৩৪ বছরে সিপিএমের দুর্নীতির অবসান হয়েছে। নিবার্চনে কাঁথিতে বিরোধী দলগুলি স্থানীয় প্রার্থী না পেয়ে অন্য জেলা থেকে বহিরাগত প্রার্থী এনে দাঁড় করিয়েছে। শিশিরবাবুর জয়, গতবারের তুলনায় তাঁর জয়ের মার্জিনকে দ্বিগুণ করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।”

তবে ক্ষমতায় আসার পর গত ৩৪ মাস ধরে তৃণমূলের টেট দুর্নীতি, সারদা কাণ্ডে ঘিরে যে অস্বচ্ছ ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, তাতে মানুষ আর ভরসা না পেয়ে সিপিএমকেই সমর্থন করবেন বলে বামেদের আশা। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূলের সন্ত্রাসে খেজুরি, ভগবানপুর ও কাঁথি-৩ ব্লকের কিছু এলাকার বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকরা ঘর ছাড়া। এমনকী সিপিএম-সহ কোন বিরোধী দলই দেওয়াল লিখন থেকে প্রকাশ্যে নিবার্চনী প্রচার কিছুই করতে পারেনি। দিন কয়েক আগে বাম প্রার্থী তাপস সিংহের উপর আক্রমণের অভিযোগও উঠেছে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য চক্রধর মেইকাপ বলেন, “বিরোধীদের ঠিক করে নিবার্চনী প্রচারই করতে দেয়নি। সুষ্ঠুভাবে ভোট হবে কি না সন্দেহ। তবে অবাধ নির্বাচন হলে মানুষ সিপিএমকেই ভোট দেবেন।”

এলাকায় কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি আগের মতো নেই। তবে জোর লড়াইয়ে রয়েছে এই দলও। তাদের মত, গত লোকসভা নির্বাচনে শিশির অধিকারী গতবার জোটের প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন। এ বার সেই জোট নেই। তাই কমবে জয়ের আশাও। মোদী হাওয়ায় পাল তুলেছে এলাকায় বিজেপি নেতৃত্বও। গত লোকসভা ভোটে কাঁথি কেন্দ্রে বিজেপি ২.৮৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। দলের দাবি, এ বার ঘাসফুলের জায়গায় ফুটবে পদ্মফুল। বিজেপি কর্মীদের দাবি, আজকের তরুণ প্রজন্ম রাজ্যের এই পরিবর্তনে খুশি নয়। তাই এর পরও তৃণমূল সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ করবে তারা। নরেন্দ্র মোদীকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে যুব সমাজ।

এমন পরিস্থিতিতে হাল ছাড়তে নারাজ সব পক্ষই। চাপানউতোর চলছেই বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়েই। আর আজ তারই প্রতিফলনের সাক্ষী থাকবে কাঁথি।

subrata guha kanthi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy