Advertisement
০৪ মে ২০২৪
ধৃত বেড়ে ৮

বাড়িতে শ্রীনু হত্যার ছক, জালে সুদ কারবারি

‘অপারেশন শ্রীনু’-র ছকে ফাঁক না রাখতে দফায় দফায় বৈঠক করেছিল আততায়ীরা। সর্বশেষ বৈঠকটি যার বাড়িতে হয়েছিল, খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা সেই জন ফ্রান্সিসকে এ বার গ্রেফতার করল পুলিশ। এর ফলে, রেলমাফিয়া

মেদিনীপুর আদালতে ধৃত জন ফ্রান্সিস। — নিজস্ব চিত্র

মেদিনীপুর আদালতে ধৃত জন ফ্রান্সিস। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৬
Share: Save:

‘অপারেশন শ্রীনু’-র ছকে ফাঁক না রাখতে দফায় দফায় বৈঠক করেছিল আততায়ীরা। সর্বশেষ বৈঠকটি যার বাড়িতে হয়েছিল, খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা সেই জন ফ্রান্সিসকে এ বার গ্রেফতার করল পুলিশ। এর ফলে, রেলমাফিয়া শ্রীনু নায়ডু ও তার সঙ্গী ধর্মা রাওকে খুনের ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৮ জন।

শুক্রবার রাতে রেলশহরের সিএমই গেট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বছর বত্রিশের ফ্রান্সিসকে। শনিবার ধৃতকে মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করে চারদিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “৮ জানুয়ারি জন ফ্রান্সিসের বাড়িতে শেষ বৈঠকেই ঠিক হয়, শ্রীনুকে প্রাণে মারতে হবে। কী ভাবে মারতে হবে, সেই পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করা হয়।” ভারতীদেবী জানান, সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে ফ্রান্সিসকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ধৃতদের মধ্যে শঙ্কর রাওকে ঘটনার মূল চক্রী বললেও শুক্রবার পুলিশ সুপার ভারতীদেবীর দাবি ছিল, এই ঘটনার আরও ‘বড় মাথা’ জড়িত। তবে কি সেই ‘মাথা’র হদিস পেতেই ধরা হল ফ্রান্সিসকে? পুলিশ সুপারের জবাব, “তদন্তে কিছু সূত্র উঠে এসেছে। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তদন্তকারীরা মনে করছেন, ফ্রান্সিসকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জরুরি তথ্য জানা যাবে। ঠিক কারা ফ্রান্সিসের বাড়িতে বৈঠকে ছিল, তাও জানা যাবে। এ দিন আদালতে সরকারপক্ষের আইনজীবী দেবপ্রসাদ চন্দ্রও বলেন, “ফ্রান্সিসের বাড়িতে বৈঠকে খুনের ছক চূড়ান্ত হয়। ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সাউথ ডেভেলপমেন্ট এলাকায় ভাড়ার রেল কোয়ার্টারে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকে ফ্রান্সিস। পুলিশের দাবি, এই কোয়ার্টারেই শ্রীনু খুনের চূড়ান্ত ছক কষা হয়। তবে এ দিন কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা গেল, তালা ঝুলছে। প্রতিবেশীরা জানালেন, সুদের কারবারের পাশাপাশি গৃহশিক্ষকতাও করে ফ্রান্সিস। সিএমই গেটের কাছে ফ্রান্সিসের পুরনো বাড়ি। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী। এ দিন ওই বাড়িতে দেখা মিলল ফ্রান্সিসের মা সন্ধ্যা ও ছোট বোন রানির। সন্ধ্যাদেবী বলেন, ‘‘ছেলে কুসঙ্গে পড়েছিল। নিয়মিত মদ্যপান করত। তবে ও যে মানুষ খুন করতে পারে, সেটা মানতে পারছি না।’’

গত বুধবার খড়্গপুরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কার্যালয়েই আততায়ীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল রেলশহরের ‘ডন’। ঘটনার পরে তৃণমূল নেতৃত্ব শহরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপ ঘোষের দিকে আঙুল তুললেও শ্রীনুর পরিজনেরা কাঠগড়ায় তুলছিলেন রেলশহরের পুরনো ‘ত্রাস’ বাসব রামবাবুকে।

এ দিন অবশ্য শ্রীনুর স্ত্রী, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পূজা বলেন, ‘‘আমার স্বামীকে খুন করার ক্ষেত্রে রামবাবুর পাশাপাশি দিলীপ ঘোষও জড়িত। বিধানসভা ভোটের সময় রামবাবু তো বিজেপি-র হয়েই কাজ করেছিল।’’ অভিযোগ নস্যাৎ করে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘পূজা নায়ডুকে দিয়ে এটা বলাতে পুলিশ সুপারের চার দিন সময় লেগেছে। প্রথমে তো পূজা বলেছিলেন ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।’’ দিলীপবাবুর আরও দাবি, বিধানসভা ভোটের সময় রামবাবু বিদেশে ছিলেন।

শ্রীনু হত্যার প্রেক্ষিতে এ দিন খড়্গপুরে এসেছিল সিআইডি-র হোমিসাইড শাখার একটি দল। সাব-ইন্সপেক্টর কৌশিক বসাকের নেতৃত্বে চার জনের দলটি খড়্গপুর টাউন থানায় গিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেয়। পরে সিআইডি আধিকারিকরা দু’টি গাড়িতে পৌঁছন নিউ সেটলমেন্ট এলাকায়। এখানেই খুন হয়েছে শ্রীনু। তবে সিআইডি কর্তারা ঘটনাস্থলে যাননি। আশপাশ ঘুরে ফিরে যান। সিআইডি সূত্রে জানানো হয়েছে, ঘটনার তদন্তভার তারা নেয়নি। তাহলে খোঁজ নেওয়া কেন? এক সিআইডি কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘বড়সড় অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা তথ্য সংগ্রহ করি। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE