বাংলা তার পথ চেয়ে বসে আছে। আর যার জন্য এই প্রতীক্ষা, সেই বর্ষা অপেক্ষা করছে আরও একটা ঘূর্ণাবর্ত কিংবা নিম্নচাপের। এই দুইয়ের কোনও একটার ধাক্কা খেলেই বঙ্গের দরজায় দ্বিধা নিয়ে তার ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার অবসান ঘটতে পারে। গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গে মহাসমারোহে সমাগম ঘটতে পারে বহুপ্রতীক্ষিত বর্ষার।
ভগীরথ হয়ে মৌসুমি বায়ুকে পথ দেখিয়ে টেনে আনছিল এক জন। সেই ঘূর্ণাবর্ত দুর্বল হয়ে গিয়েছে। এ বার আর আকর্ষণ নয়। দরকার একটা জুতসই ধাক্কার। তা হলেই বাংলাদেশ থেকে হুড়মুড় করে বর্ষা ঢুকে পড়বে দক্ষিণবঙ্গে। তিন দিন ধরে নদিয়ার ধার ঘেঁষে বাংলাদেশের উপরে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু।
টানাপড়েনটা চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় ‘আশোবা’ বর্ষাকে বঙ্গমুখী হতে না-দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। শনিবার তার জবাব দেয় ওড়িশা উপকূলে জন্মানো একটি ঘূর্ণাবর্ত। সে মৌসুমি বায়ুকে পশ্চিম ভারত থেকে টেনে এনেছিল পশ্চিমবঙ্গের দিকে। সে-দিনই বৃষ্টি নেমেছিল কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায়। আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছিল, বর্ষা দক্ষিণবঙ্গে ঢোকার অপেক্ষায়। প্রাক্বর্ষার বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই ঘূর্ণাবর্ত শেষ পর্যন্ত জোরদার হয়ে উঠতে না-পারায় শনিবার থেকে মৌসুমি অক্ষরেখা এক জায়গায় থমকে আছে। প্রাক্বর্ষার বৃষ্টি অবশ্য থামেনি।
হাওয়া অফিস মঙ্গলবার জানায়, ওড়িশা উপকূলের ঘূর্ণাবর্তটি এতটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছে যে, সে আর বাংলাদেশ থেকে বর্ষাকে টেনে আনতে পারবে না। তাই পুরোপুরি বর্ষার পরিবেশ তৈরির পরেও দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা এসেছে বলে ঘোষণা করা যাচ্ছে না। এক আবহবিদ এ দিন বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢোকার জন্য দরকার আরও একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বা ঘূর্ণাবর্তের। তার জন্য অবশ্য বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। কারণ, ইতিমধ্যেই ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে একটি নতুন ঘূর্ণাবর্ত তৈরির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে সেটি পুরোপুরি তৈরি হয়ে যওয়ার কথা।’’
‘এল নিনো’ (সমুদ্রে জলস্তরের উষ্ণতা বৃদ্ধি) এ বার বর্ষার পথে কাঁটা হয়ে উঠতে পারে বলে দিল্লির মৌসম ভবন আগেই ঘোষণা করেছিল। তবে এ-পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং উত্তরবঙ্গে যে-পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তাতে এল নিনো বা দুষ্টু ছেলের চেমন কারিকুরি টের পাওয়া যায়নি। অসমে এই সময়ে যতটা বৃষ্টি হওয়া উচিত, ইতিমধ্যেই তার থেকে নয় শতাংশ বেশি বর্ষণ হয়ে গিয়েছে। এতটাই বেশি যে, বন্যার কবলে পড়েছে বেশ কয়েকটি জেলা। আগামী কয়েক দিনও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে অসম ও মেঘালয়ে।
মৌসম ভবন জানাচ্ছে, কেরল, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, গুজরাতেও ইতিমধ্যে ভাল বৃষ্টি হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের এক আবহবিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, আসল বৃষ্টিটা হওয়ার কথা জুলাইয়ে। জুলাই-অগস্টে কতটা বৃষ্টি হল, তার উপরে নির্ভর করে দেশে চাষ-আবাদের হাল। ‘‘জুলাইয়ের অর্ধেক না-পেরোনো পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ নিয়ে হিসেব না-করাই ভাল,’’ বলেছেন ওই আবহবিদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy