বিমল গুরুঙ্গ।— ফাইল চিত্র।
এত দিন রাজ্যের সঙ্গে কোনও কথাই বলতে চাননি বিমল গুরুঙ্গ। কিন্তু বন্ধের ৫৭ দিনের মাথায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে তাঁর দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বুঝিয়ে দিল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সরকারি ভাবে আলোচনার ডাক আশা করছে তারা।
বুধবার মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নানা সময়ে পাহাড়ের সমস্যা মেটানোর জন্য আলোচনার কথা বলছেন। কিন্তু এখনও অবধি সরকারি ভাবে রাজ্যের কেউ মোর্চার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’’ এর পরেই মোর্চার সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে আন্তরিক নন।
আচমকা মোর্চা সুর বদলাল কেন? মোর্চার অন্দরের খবর, লাগাতার বন্ধের জেরে পাহাড়ের ঘরে-ঘরে খাদ্যসঙ্কট তীব্র হচ্ছে। পাহাড়ের স্কুলগুলিতে পড়াশোনা বন্ধ। কোনওক্রমে শুধু উঁচু শ্রেণির ক্লাস শুরু করা সম্ভব হয়েছে শিলিগুড়িতে। তাতে অভিভাবকেরা ক্ষিপ্ত ও বিরক্ত। পাহাড়ের তিন মহকুমায় মোর্চার যুব সদস্যরা টানা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের অনেকেরই শারীরিক অবস্থা ভাল নয়।
এত দিন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে মুখরক্ষার সূত্র আশা করছিল মোর্চা। কিন্তু বারবার দিল্লির দরবারে গিয়ে ধর্না দেওয়া সত্ত্বেও বিশেষ কোনও আশ্বাস মেলেনি। বরং দার্জিলিঙের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া মোর্চাকে বলে দিয়েছেন, আগে বন্ধ তুলতে হবে, তার পরে আলোচনা সম্ভব। সেই আলোচনায় যে রাজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, সে কথাও কেন্দ্র বুঝিয়ে দিয়েছে গুরুঙ্গদের। আন্তর্জাতিক সীমান্তে থাকা পাহাড়ের আবেগকে মর্যাদা দিলেও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কেন্দ্র যে রাজ্যের সম্মতি ছাড়া এতটুকুও এগোবে না, তা মোর্চা নেতৃত্ব বুঝে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ‘ম্যানমেড’ কেন, ব্যাখ্যা সেচমন্ত্রীর
গত সোমবার তাই বিমল গুরুঙ্গ জানান, গোর্খাল্যান্ড নিয়ে কেন্দ্র আলোচনায় ডাকলে তাঁরা বন্ধ তুলে নেবেন। ঠিক ২৪ ঘণ্টা পরে আবার আলোচনায় বসার ডাক দেন মমতা। এ বার বিধানসভা থেকে। এই অবস্থায় যে পুরনো দাবিতে অনড় থাকা সম্ভব নয়, সেটা বুঝেই সুর বদলেছেন রোশন গিরিরা। কারণ, জনমানসে এই বিপুল ক্ষোভের আঁচ পাচ্ছে মোর্চা।
বুধবার রাতে দার্জিলিঙের চকবাজারে মোর্চার টাউন কমিটির অফিসে কে বা কারা পেট্রোল বোমা ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। নানা মামলায় অভিযুক্ত বেশ কয়েক জন নেতার খোঁজে পুলিশ তল্লাশি অভিযান বাড়িয়েছে।
রোশন এ দিন রাজ্যের বিরুদ্ধে এই সংক্রান্ত কিছু অভিযোগও এনেছেন। যা থেকে মনে হয় মোর্চা কতটা চাপে রয়েছে, বলছেন অনেকেই। রোশন জানান, বন্ধ ৫৭ দিনে পড়লেও আলোচনার পথ না খুঁজে রাজ্য মোর্চার কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করতেই ব্যস্ত। তাঁর এই কথার প্রতিবাদ করে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘রাজ্য পাহাড় সমস্যা মেটাতে কতটা আগ্রহী, সেটা ২২ জুন সর্বদল বৈঠকে মোর্চাকে ডাকা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওঁরাই আসেননি।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওঁরা সরাসরি বলুন রাজ্যের সঙ্গে বসতে চাই। ওঁরা যে পাহাড়ে শান্তি চান, সেটাও বন্ধ তুলে বুঝিয়ে দিন। তা হলেই তো আলোচনা
শুরু হয়ে যাবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী বারবার আলোচনার ডাক দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ-প্রশাসনের কঠোর অবস্থান যে বদলাবে না, সেটাও বারবারই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু’মাস ধরে বন্ধ চলায় অনেক সরকারি কর্মীই অফিসে যাচ্ছেন না। দু’মাস ধরে তাঁদের বেতন কাটা হচ্ছে পূর্ব ঘোষণামাফিক। পরপর কয়েক জন মোর্চা নেতা-নেত্রী এবং তাঁদের সহযোগী নেপালের নাগরিককে পাকড়াও করা হয়েছে। পুলিশের জালে পড়েছেন গুরুঙ্গ-ঘনিষ্ঠ নরবুজি লামা।
মোর্চার এক প্রবীণ নেতা জানান, এই পরিস্থিতিতে স্পষ্টতই কোণঠাসা গুরুঙ্গরা। তাই কিছুটা ক্ষোভ উগড়ে দিলেও রাজ্যের সঙ্গে
আলোচনার দরজা খুলতে রোশনকে সামনে ঠেলে দিলেন গুরুঙ্গ। আর নিজে আড়ালে অপেক্ষা করে রইলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy