শহিদ বেদিতে ফুল দিচ্ছেন মুকুল রায়। মঙ্গলবার দিল্লিতে নিজের বাসভবনে। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা
একুশের শহিদ দিবসে লাখো মানুষের ভিড়ে যখন গোটা কলকাতার দখল নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন পনেরোশো কিলোমিটার দূরে প্রায় নির্জনে সাজানো হয়েছিল আর একটি শহিদ বেদি। আর মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে মালা দিলেন এমন এক জন, যাকে ছাড়া এত দিন কলকাতায় তৃণমূলের শহিদ দিবসের কথা ভাবাই যেত না।
মুকুল রায়। এই প্রথম একুশের তৃণমূলী মঞ্চে অনুপস্থিত। তৃণমূলের রাজনীতিতে কোণঠাসা মুকুল দিল্লিতে নিজের সাউথ অ্যাভিনিউয়ের বাসভবনে হাতে গোনা কয়েকজন সমর্থককে নিয়ে শহিদ দিবস পালন করলেন। তুললেন পুরনো স্লোগান।
কলকাতার প্রত্যেকটি একুশের অনুষ্ঠানে এত দিন আয়োজনের সাংগঠনিক রাশ থাকত তাঁর হাতেই। এমনকী গত দু’বছর ধরে কলকাতায় একুশের সভা পরিচালনাও করেছেন তিনি। তবে আজ দুপুরে কোনও জনসভা নয়, একেবারে নিজের বাংলোয় আর পাঁচটা ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মতোই শহিদ বেদি বানিয়ে মালা দিয়েছেন মুকুল। তবে দিনভর টেলিভিশনে চোখ রেখে তাঁর নজর ছিল কলকাতার ধর্মতলার দিকে।
এই প্রথম তিনি একুশের দলীয় মঞ্চে থাকলেন না। অনুভূতিটা ঠিক কেমন? প্রশ্ন শুনে যেন কিছুটা উদাস তৃণমূলের দীর্ঘ দিনের সেনাপতি। মুখে যদিও বলছেন, ‘‘এ সব তো জীবনে হতেই পারে। পার্ট অব দ্য গেম। এ নিয়ে ভাবি না।’’ তার পর স্মৃতিচারণ।
‘‘আমার পাশেই সেই ২১শে জুলাই গুলি খেয়েছিল কেশব বৈরাগি। উত্তর দিনাজপুরে তাঁর বাড়িতে দেহ নিয়ে আমিই পৌঁছেছিলাম। মমতাদিরও সে দিন জীবন সংশয় হয়ে গিয়েছিল।’’ মুকুল বোঝাতে চাইলেন, মমতার সঙ্গে তাঁর যতই দূরত্ব তৈরি হোক না কেন, ৯৩ সালের শহিদ রক্তের প্রশ্নে তিনি একই ভাবে অনুগত। বাংলোর কোনায় বেদিতে মালা দেওয়ার পর মুকুল বলেন, ‘‘যে কোনও কারণেই হোক আমি আজ কলকাতায় নেই। সংসদ শুরু হয়েছে, তাই দিল্লিতে এসেছি। শহিদদের স্মৃতিকে এখানেই শ্রদ্ধা জানালাম।’’
মুখে বলছেন বটে, কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ যে অনেকটাই অনিশ্চয়তার গর্ভে, সেটা নিজেও টের পাচ্ছেন। বিজেপি, কংগ্রেস, কিংবা সিপিএম প্রত্যেকেই চাইছে তিনি তৃণমূলে ভাঙন ধরান। কিন্তু মুকুল রায়কে দলে নেওয়ার পরিকল্পনা বিজেপি বা কংগ্রেসের নেই। ফলে অনেকেই মনে করছেন, পৃথক দল বা মঞ্চ তৈরি করা ছাড়া মুকুলের সামনে অন্য রাস্তাগুলি ক্রমেই বন্ধ হয়ে আসছে। আর নতুন দল গঠন করে কতটা লাভ হবে বা আদৌ হবে কিনা, এখন সেই জলই মাপছেন মুকুল। মরিয়া হয়ে চাইছেন সংখ্যালঘুদের সমর্থন। দিল্লির বাড়িতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্থানীয় কিছু মানুষকে ডেকে ইদের অনুষ্ঠান করেছেন তিনি। বুধবার দেখা করবেন দিল্লির জামা মসজিদের শাহি ইমামের সঙ্গে। অনেকেই মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে মুকুল রায়ের কিছু প্রভাব রয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বও মুকুল রায়কে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের মুসলিম মনকে মমতার থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টাও করেছেন বলে খবর। সিপিএমে গৌতম দেবের মতো নেতারাও তাকিয়ে রয়েছেন মুকুলের ভবিষ্যতের পদক্ষেপের দিকে। তবে শেষ পর্যন্ত এ সব চেষ্টা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে কেউই নিশ্চিত নন।
নিজের রাজনৈতিক জীবনের এই অনিশ্চয়তা আর টানাপড়েনের মধ্যেই আজ শহিদ বেদিতে সে দিনের নিহত কর্মীদের নামের তালিকা টাঙিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মুকুল।
শহিদ দিবসেও যদিও কটাক্ষ থেমে থাকেনি। তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্য, ‘শহিদের’ তালিকায় এ বছর দু’টি নাম জুড়ে গেল। এরা দলের ‘রাজনৈতিক শহিদ’— মদন মিত্র ও মুকুল রায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy