Advertisement
E-Paper

আগুন নেভাতে বিজ্ঞপ্তি লাগে না, বার্তা সূর্যের

গালভরা শব্দটি ‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’! এই তত্ত্বের আড়ালে আসলে চেপে বসে আছে নেতাদের আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা! দলের আসন্ন সাংগঠনিক প্লেনামের আগে সিপিএমের অন্দরে ফেরত এল বহুচর্চিত এই বিতর্ক!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৫০
সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে আলোচনায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।

সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে আলোচনায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।

গালভরা শব্দটি ‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’! এই তত্ত্বের আড়ালে আসলে চেপে বসে আছে নেতাদের আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা! দলের আসন্ন সাংগঠনিক প্লেনামের আগে সিপিএমের অন্দরে ফেরত এল বহুচর্চিত এই বিতর্ক! জেলার প্রতিনিধিদের অভিযোগের সুরেই রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও মেনে নিলেন, সামনে এগোতে হলে সংগঠনের মধ্যে কাজকর্মের ধরন বদলাতেই হবে।

প্লেনামের খসড়া সাংগঠনিক দলিল নিয়েই আলিমুদ্দিনে বৃহস্পতিবার প্রথমে রাজ্য কমিটি এবং পরে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে বিতর্ক শুরু হয়েছে। যা চলবে আজ, শুক্রবার পর্যন্ত। বিতর্কে অংশ নিয়ে রাজ্য কমিটির সদস্য থেকে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর নেতা, সকলেই অল্প-বিস্তর প্রশ্ন তুলেছেন গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নামে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে। কয়েক মাস দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে রাজ্য সম্পাদকও তাঁদের সঙ্গে প্রায় একমত হয়েছেন।

বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকের গোড়াতেই এ দিন রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু তাঁর মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও পলিটব্যুরোর সদস্য প্রকাশ কারাটের উপস্থিতিতে সূর্যবাবু উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কোথাও আগুন লেগেছে দেখলেও নেভাতে যাওয়ার আগে সিপিএমের নেতা-কর্মীরা বসে থাকেন নেতৃত্বের তরফে বিজ্ঞপ্তি আসার জন্য! যদি কেউ নিজের বিবেচনায় আগুন নেভাতে এগিয়ে যান, দলের মধ্যেই একাংশ তাঁকে শো-কজ বা সাসপেন্ড করার সুযোগ খুঁজতে বসেন! এমন মানসিকতা নিয়ে যে সুস্থ ভাবে দল চলতে পারে না, নিজের অভিজ্ঞতার নিরিখে সেই বার্তাই দিয়েছেন সূর্যবাবু।

এরই পাশাপাশি রাজ্য সম্পাদকের বার্তা, যে কোনও স্তরেই সাংগঠনিক কর্মসূচির উপরে নেতাদের মাতব্বরি ভাল জিনিস নয়। এই সূত্রে তিনি এ দিন ইয়েচুরি-কারাটদের উপস্থিতিতে ফের দলের কর্মীদের বলেছেন, যে কোনও কর্মসূচিতেই অনেক সময় তাঁকে ডাকা হয় তিনি বিরোধী দলনেতা, এই কারণ দেখিয়ে! এই কারণেই তিনি বিরোধী দলনেতার পদ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দল অনুমতি দেয়নি। তাঁর এই বক্তব্যের সূত্র ধরে উত্তর ২৪ পরগনার নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য আবার পরে বলেন, ওই জেলায় এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই, দু’টো সম্মেলনেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বক্তা করা হয়েছিল সূর্যবাবুকে। তন্ময়বাবুর প্রশ্ন, আর কোনও অন্য মুখ আছে কি, যাঁর সর্বত্র ডাক পড়তে পারে?

বস্তুত, এই প্রশ্ন তুলেই নতুন মুখ সামনে আনার পক্ষে দিনভর সওয়াল করেছেন বহু নেতা। প্রাক্তন সাংসদ শমীক লাহিড়ী যেমন বলেছেন, প্রমোদ দাশগুপ্ত, জ্যোতি বসু, হরকিষেণ সিংহ সুরজিতেরা কারাট-ইয়েচুরি-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের সুযোগ দিয়েছিলেন বলেই তাঁরা এখন নেতা হয়েছেন। তাঁদেরও এখন ঝুঁকি নিয়ে নতুন মুখ সামনে আনতে হবে। মানসিকতা বদলে দলের মধ্যে উজ্জ্বল মুখদের শুধু সাংসদ-বিধায়ক হতে না পাঠিয়ে সংগঠনেও দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন দার্জিলিঙের জীবেশ সরকার। ওই জেলারই নুরুল ইসলাম প্রশ্ন তুলেছেন, ৩৭ বছর আগে সালকিয়া প্লেনামের সব সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। কাগজে-কলমের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় না বলেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়। মইনুল হাসান, মানব মুখোপাধ্যায়, সলিল আচার্যের মতো নেতারাও নতুন ভাবনার পক্ষে সওয়াল করে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার বাড়াবাড়ির বিপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন।

গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা নিয়ে দলের মধ্যে বিস্তর ক্ষোভ আছে জেনেই সম্ভবত এ দিন রাজ্য কমিটিতে সূর্যবাবু বলেছেন, বিধানসভা ভোটের আগে কয়েক মাস রোজ রাস্তায় থাকতে হবে তাঁদের। জানুয়ারি থেকে আবার কলকাতার রাস্তায় নবান্ন অভিযান গোছের কর্মসূচি নাকি জেলায় জেলায় কর্মসূচি নিয়ে রাজ্য অচল করা— কোন পথে যাওয়া উচিত, তা নিয়ে দলেরই মতামত চেয়েছেন রাজ্য সম্পাদক। আবার ১৫ ডিসেম্বর রাজ্য কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। রাসবিহারী পশ্চিম লোকাল কমিটির সম্পাদক মহম্মদ হানিফের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও অনুমোদিত হয়েছে এ দিন।

problems surya kanta mishra message party workers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy