কল্যাণীতে দাদা-বোনকে মারধরের ঘটনায় এখনও ধরা পড়ল না কেউ। তবে, হামলাকারী যুবকদের মধ্যে কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। নদিয়ার কল্যাণী শহর ঘেঁষা তালতলা এলাকার ছ’জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় নিয়ে পুলিশকর্তারা মুখ খুলতে না চাইলেও শোনা যাচ্ছে, তাঁরা স্থানীয় একটি তৃণমূল সমর্থক ক্লাবের সদস্য। কল্যাণী শহরের তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সাত-আট জন যুবক মদ্যপ অবস্থায় ওখানে গোলমাল করছিল বলে শুনেছি। এর সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই। আমরাও চাই পুলিশ তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিক।”
শুক্রবার বিকেলে নদিয়ার কল্যাণী শহরের চিত্তরঞ্জন পার্কের বাড়ি থেকে হাঁটতে-হাঁটতে গ্রাম কাঁচড়াপাড়া পঞ্চায়েতের তালতলা এলাকায় খালের ধারে ছবি তুলতে গিয়েছিলেন এক চিত্র-সাংবাদিক। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বোন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে গবেষণারত ওই তরুণী একটি মানবাধিকার সংগঠনের বীজপুর শাখার নেত্রী। সেতুর কাছে জটলা করে বসে থাকা কয়েকজন যুবক তরুণীকে উদ্দেশ করে কটূক্তি করায় গণ্ডগোল বাঁধে। অভিযোগ, তরুণীকে চড়-থাপ্পড় মেরে শ্লীলতাহানি করা হয়। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন তাঁর দাদা। ক্যামেরা কেড়ে তাঁকে কিছু দূরে একটা পাট ক্ষেতের মধ্যে টেনে নিয়ে গিয়ে চার যুবক মারধর করেন বলে অভিযোগ। বেগতিক বুঝে কল্যাণী থানার একজন পরিচিত পুলিশ আধিকারিককে ফোন করেন ওই তরুণী।
পুলিশ এসে দাদা-বোনকে উদ্ধার করে। আশপাশ থেকে পরিচিতরাও ছুটে আসে। জখম যুবককে কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডান চোখের নীচে আর ডান পায়ে চোট পেয়েছেন তিনি। শনিবার অবশ্য চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে।
এ দিকে, সেদিনের ঘটনার পর থেকেই কানে প্রচণ্ড ব্যাথা তরুণীর। তবে, শারীরিক যন্ত্রণার চেয়েও নিগ্রহের ঘটনায় মানসিক ভাবে বেশি বিপর্যস্ত তিনি।
শুক্রবারই থানায় মারধর, শ্লীলতাহানি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তরুণী। রাতে হাসপাতালে গিয়ে তাঁর দাদার সঙ্গে কথা বলেছিল পুলিশ। শনিবার তিন বার ওই তরুণীকে ফোন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। থানায় ডাকাও হয়েছিল ওই তরুণীকে। তিনি অবশ্য যাননি। পরে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সেদিন খোওয়া যাওয়া ক্যামেরার ব্যাগ নিয়ে চিত্র-সাংবাদিকের বাড়িতে যায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে ব্যাগটি পাওয়া গিয়েছে দাবি করে ভিতরে ক্যামেরা, এটিএম কার্ড ঠিক আছে কি না দেখিয়ে নেয় তারা।
তরুণীর অভিযোগ, “এখনও কাউকে ধরতে পারল না পুলিশ। অথচ, তদন্তের নামে দাদা-বোনের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। আমার নিজের দাদা কি না, জানতে চাইছে ফোনে। বারবার ফোন করে অকারণ হেনস্থা করছে ওরা।”
পুলিশ হেনস্থার অভিযোগ মানেনি। কল্যাণীর এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, “তদন্তের স্বার্থে যোগাযোগ করতে হচ্ছে পরিবারের সঙ্গে। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করে ছ’জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পৃথক ভাবে তদন্তকারী দলও গড়া হয়েছে।”
এদিকে, বিকেলবেলা প্রকাশ্য রাস্তায় দাদা-বোনকে মারধর ও নিগ্রহের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে কল্যাণী শহর ও সংলগ্ন এলাকায়। দাদার সঙ্গে বেড়াতে বেড়িয়ে যে ভাবে কটূক্তি শুনতে হচ্ছে, তাতে শঙ্কিত এলাকাবাসী। অভিযোগ, নজরদারি নেই বলে ওই খালপাড়ে মদ্যপ যুবকের উপদ্রব দিন দিন বাড়ছে। কল্যাণীর পুরপ্রধান তৃণমূলের নীলিমেশ রায়চৌধুরি বলেন, “ঘটনাটি আমি শুনেছি। ওটা পঞ্চায়েত এলাকায় ঘটেছে। তবে, এই ধরনের ঘটনা কখনও কাঙ্ক্ষিত নয়।”ওই তরুণী যে সংগঠনের নেত্রী, তারা নিন্দনীয় এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার বিকালে একটি মিছিল করে ওই এলাকায়। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সীমান্ত রেল স্টেশনের কাছ থেকে ওই মিছিল শুরু হয়ে এলাকায় ঘোরে। শেষে সীমান্ত ও চরবীরপাড়া গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পথসভা করা হয়। সংগঠনের তরফে জয়গোপাল দে বলেন, “মিছিলে এত সাড়া পাব তা আগে বুঝতে পারিনি। আমাদের সংগঠনের সদস্যরা ছাড়াও এলাকার মানুষ এই মিছিলে সামিল হয়েছিলেন। আমরা দাবি করেছি দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ওদের চিকিৎসার খরচও প্রশাসনকে নিতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy