Advertisement
E-Paper

শতাব্দী প্রাচীন পুজো দেখতে ভিড় ধোড়াদহে

শহরের মতো থিমের বা আলোর জেল্লা হয়তো তত নেই। কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন পুজো উন্মাদনার কমতি নেই স্থানীয়দের। তেহট্টের পুরনো পুজোগুলোর মধ্যে ধোড়াদহের চৌধুরী বাড়ির পুজো দেখতে ফি বছর প্রচুর মানুষ ভিড় করেন।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৫ ০২:০৪
চলছে প্রতিমা নির্মাণের কাজ। ধোড়াদহে কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।

চলছে প্রতিমা নির্মাণের কাজ। ধোড়াদহে কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।

শহরের মতো থিমের বা আলোর জেল্লা হয়তো তত নেই। কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন পুজো উন্মাদনার কমতি নেই স্থানীয়দের। তেহট্টের পুরনো পুজোগুলোর মধ্যে ধোড়াদহের চৌধুরী বাড়ির পুজো দেখতে ফি বছর প্রচুর মানুষ ভিড় করেন।

চার শতকের প্রাচীন এই পারিবারিক পুজো হয় নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে। ধোড়াদহ গ্রামে এই পুজো শুরু করেছিলেন দুর্গারাম চৌধুরী যিনি ছিলেন বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম প্রতাপাদিত্যের দেওয়ান।

শোনা যায়, ১৬১২ সালে জাহাঙ্গির বাংলাদেশের বারো ভুঁইয়াদের আক্রমণ করেন। আক্রমণে ওসমান খাঁর মৃত্যু হয় ও মুসা খাঁ আত্মসমর্থন করায় নিজের নাবালক পুত্রের জন্য চিন্তিত হন যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য। বিচলিত প্রতাপাদিত্য পুত্রকে নিরাপত্তার ভার দেওয়ান দুর্গারাম চৌধুরীকে দেন। নাবালক পুত্রকে নিয়ে যশোর ছেড়ে দুর্গারাম পালিয়ে আসেন অবিভক্ত বাংলার ধোড়াদহে। বন জঙ্গলে ভরা ধোড়াদহে জনবসতি ছিল না। সেখানে কিছুদিন আত্মগোপন করেন। পরে খবর আসে প্রতাপাদিত্য জাহাঙ্গিরের বশ্যতা স্বীকার করেছেন। যুদ্ধ থামলে দুর্গারাম প্রতাপাদিত্যের ছেলেকে ফিরিয়ে দেন। পুরস্কার হিসেবে প্রতাপাদিত্য দুর্গারামকে পাঁচটি মহল দান করেন। যার অন্যতম ছিল ধোড়াদহ। আত্মগোপনের সময় দুর্গারাম মানত করেছিলেন মায়ের পুজো দেবেন বলে। সেই মতো পাবনার পাট চুকিয়ে পাকাপাকি ভাবে চলে আসেন ধোড়াদহে। ওই বছরই জঙ্গল কেটে আটচালের ঘরে পুজোর আয়োজন করেন। দুর্গারামের পর দায়িত্ব পড়ে পুত্র বিশ্বেশ্বর চৌধুরীর হাতে। দেবী এখানে ‘বুড়িমা’ নামে পরিচিত।

১৭৫৩ সালে বুড়িমা চালা ঘর থেকে উঠে আসেন পাকা ঠাকুরদালানে। প্রকাণ্ড মণ্ডপের চিকের আড়াল থেকে মেয়েরা প্রতিমা দর্শন করতেন। পুজোর ক’টা দিন গ্রামের হাজার মানুষের পাত পড়ত ওই বাড়িতে। সেই পুজো আজও পুরনো রীতি মেনেই হয় বলে জানালেন চৌধুরী পরিবারের সদস্য পুস্পেন চৌধুরী। এখানে মা সাবেকি। দু’টি হাত বড় যা সামনে দেখা যায়। বাকি হাত পিছনে থাকে। ডাকের সাজের একচালা প্রতিমা। মায়ের সঙ্গে মঙ্গলচণ্ডী, শালগ্রাম ও বানেশ্বর শিব পূজিত হন। নবমীতে মাছের ভোগের চল এখনও রয়েছে। তখন শালগ্রামকে বেদী থেকে নামিয়ে রাখা হয়। দশমীতে পান্তা ও কচুশাকের ভোগ হয়। আগে পুজোর প্রতিদিন পাঁঠা বলি দেওয়া হলেও এখন শুধুমাত্র সন্ধি পুজোর সময় পাঁঠা বলি হয়।

১৬১২ সালে বুড়িমার পুজো শুরুর প্রায় পঞ্চাশ বছর পর দুর্গারামের দুই পুত্র বীশ্বেশ্বর ও রামেশ্বর চৌধুরীর মনোমালিন্যে রামেশ্বর পাশেই আর একটি (ছোটমার) পুজো শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে পুজোই ব্যক্তি সীমানা অতিক্রম করে সর্বজনীন হয়ে উঠেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy