Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বিয়ে রোখার হ্যাটট্রিক, এ বার বাধা মামুদপুরে

নবম শ্রেণিতে পাশ করতে পারেনি মেয়ে। তার আর পড়াশুনো হবে না। তাই বছর পঁচিশের এক গৃহশিক্ষকের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলেন তার মা।বিয়ে হওয়ার কথা মাঘের শেষে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১৫
Share: Save:

নবম শ্রেণিতে পাশ করতে পারেনি মেয়ে। তার আর পড়াশুনো হবে না। তাই বছর পঁচিশের এক গৃহশিক্ষকের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলেন তার মা।

বিয়ে হওয়ার কথা মাঘের শেষে।

কিন্তু খবর কানে উঠেছিল কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের। শুক্রবার হরিহরপাড়ার মামুদপুরে দীপান্বিতা দাসের বাড়িতে গিয়ে হাজির হল ববিতা খাতুন, টুম্পা মাঝি, আশাপূর্ণা বিশ্বাসেরা। তাদের কেউ রুকুনপুর হাইস্কুলের ছাত্রী, কেউ পড়ে চোঁয়া হাইস্কুলে। সঙ্গে নাবালিকা বিয়ে নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থার কর্মী জাকিরুন বিবি।

দীপান্বিতা রুকুনপুর হাইস্কুলেরই ছাত্রী ছিল। ডাকাডাকি করতেই তাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসেন তার মা ফুলেশ্বরী দাস। তাঁর সোজা কথা— ‘‘ও মেয়ের মাথায় কিচ্ছু নেই। শুধু-শুধু খরচ। এক বছর ফেল মানে নতুন করে স্কুলে ভর্তি। মাধ্যমিক পাশ করাতে খরচ দ্বিগুণ। তাই ভাল পাত্র দেখে বিয়ে ঠিক করেছি। দেনা পাওনার চাপ নেই। আর, বিয়ে তো দিতেই হবে— আগে আর পরে!’’

পিছনেই বেরিয়ে এসেছিলেন তাঁর শাশুড়ি, দীপান্বিতার ঠাকুমা। তিনি ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, ‘‘আমার বিয়ে হয়েছে সেই কোন ছোটবেলায়। কী ক্ষতিটা হয়েছে? ও তো সেই তুলনায় অনেক বড়। ওর বিয়েতে আপত্তি করতে এলে ছাড়া হবে না!’’ তাঁর চিৎকারে দাসপাড়ার লোক জড়়ো হতে থাকে। তাঁদের একটা বড় অংশ সমর্থনও করতে থাকে পরিবারটিকে।

যোদ্ধারা তাতে আদৌ ঘাবড়ায়নি। বরং দীপান্বিতাকে এক পাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে তারা বলে— ১৬ বছরে লুকিয়ে বিয়ে করলে পুলিশ তাকে ধরবেই। তার পরে আদালত ঘুরে তার গতি হবে হোমে। যত দিন না ১৮ বছর হচ্ছে, সেখানেই থাকতে হবে। সে কথা দীপান্বিতা তার মা-কে গিয়ে তিনি কিছুটা ঘাবড়ে যান। তার পরে বলেন, ‘‘আমরা গরিব। যদি কেউ মেয়ের পড়ার আর বিয়ের দায়িত্ব নেয় তবে এই বিয়ে বন্ধ করে দেব।’’

মেয়েরা জানায়, তারা সাধ্য মতো সাহায্য করবে। জাকিরুন বিবি বলেন, ‘‘দীপান্বিতাকে আবার স্কুলে পড়ানোর খরচ আমরা দেব। রুকুনপুর হাইস্কু‌লে কথাও বলেছি।’’ গত কয়েক দিনে এই নিয়ে তিনটি বিয়ের পরিকল্পনায় বাধা দিল কন্যাশ্রী যোদ্ধারা। হরিহরপাড়ার ভারপ্রাপ্ত বিডিও উদয়কুমার পালিত বলেন, ‘‘এ দিন বাধার মুখে পড়েও ওরা পিছু হটেনি। শনিবারই আমরা দীপান্বিতাকে তার নিজের স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করব। ওর পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব আমাদের।’’

দীপান্বিতার বাবা প্রবীর দাস তাঁত বোনার কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার একটা ছেলেও আছে। সব দিক ভেবে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েগুলোর বক্তব্যও ফেলে দেওয়ার মতো নয়।’’

আর দীপান্বিতা বলে, ‘‘পরীক্ষায় পাশ করতে না পারার পর থেকেই আমার মা বলতে শুরু করেছিল, তোর আর পড়ার দরকার নেই। বিয়ে দিয়ে দেব। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল না। আবার স্কুলে যাব, এটা ভেবেই খুব ভাল লাগছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanyashree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE