Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বাড়তি টাকা চেয়ে কাঠগড়ায় স্কুল

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি শুরু হতেই মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু স্কুলে সরকারি নির্দেশিকা না মেনে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যে সরব হয়েছে ছাত্র ও শিক্ষক সংগঠনগুলি। সম্প্রতি লালগোলার একটি স্কুলে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। বিষয়টি স্থানীয় বিডিওকে জানানো হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৫ ০০:৪৩
Share: Save:

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি শুরু হতেই মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু স্কুলে সরকারি নির্দেশিকা না মেনে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যে সরব হয়েছে ছাত্র ও শিক্ষক সংগঠনগুলি। সম্প্রতি লালগোলার একটি স্কুলে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। বিষয়টি স্থানীয় বিডিওকে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ওই স্কুলে যান লালগোলার সিপিএমের যুব শাখার জোনাল সদস্য সাইফুল ইসলাম। তিনি গিয়ে দেখেন, রীতিমতো রসিদ কেটে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় করা হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাহিন সারাফি সে অভিযোগ মেনেছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘স্কুলের উন্নয়নের জন্যে বাড়তি টাকা দিতে কেউ আপত্তি করছেন না। ১.৯৪ লক্ষ টাকা বিদ্যুতের লোড এক্সটেনসনের জন্য জমা দিতে হবে। স্কুল সে টাকা পাবে কোথায়?’’ সে কারণেই পরিচালন সমিতির সঙ্গে কথা বলে কলা বিভাগের জন্য ৭০০ ও বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৭৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বিডিও স্বপ্নজিৎ সাহা বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষককে বলেছি, দরিদ্র মেধাবী পড়ুয়াদের কাছ থেকে ভর্তি ফি যেন না নেওয়া হয়।’’

ভর্তির জন্য এ ভাবে বাড়তি টাকা আদায় যে বেআইনি তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে জেলা শিক্ষা দফতর। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, একাদশ শেণিতে ভর্তির জন্য খেলাধুলো, পরীক্ষা, উন্নয়ন ফি মিলিয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে ২৪০ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না, এটাই নিয়ম। একাদশে রেজিস্ট্রেশনের জন্য নেওয়া যাবে ৮০ টাকা। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পূরবী দে বিশ্বাস সাফ জানিয়েছেন, রাজ্য শিক্ষা দফতরের এই নির্দেশের বাইরে একটি পয়সাও কোনও স্কুল আদায় করতে পারবে না। স্কুল পরিচালন সমিতিও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ও সর্বশিক্ষা মিশন স্কুলগুলিকে উন্নয়নের জন্য প্রচুর টাকা দিচ্ছে। আরও অর্থের দরকার হলে শিক্ষা দফতরকে তা জানানো হোক।’’ এরপরে এমনটা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সহকারি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পঙ্কজ পাল জানান, কোনও স্কুল বাড়তি পয়সা নিতে পারে না। বরং দুঃস্থ কোনও ছেলেমেয়ে স্কুলে গেলে তাকে বিনা পয়সায় ভর্তি করতে হবে।

স্কুলগুলি যে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিনিময়ে ছাত্রদের থেকে বাড়তি পয়সা আদায় করছে তা মানছেন জেলার শিক্ষক সংগঠনগুলিও। এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত জানান, স্কুলগুলির এমন কিছু খরচ আছে যা সরকার থেকে দেওয়া হয় না। তার জন্যে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়তি নিলেও তা-ও মানা যায়। তবে সে টাকা স্কুলের উন্নয়নে সৎ ভাবে ব্যয় হওয়া চাই। তিনি বলেন, ‘‘একে তো বইয়ের দাম বেশি। তার উপরে স্কুলের আর্থিক চাপ অনেকের কাছেই বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’

পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি মহাফুজ আলম ডালিমের মত, বহু স্কুল প্রতিবারই বাড়তি পয়সা আদায় করে। তা রুখতে শিক্ষা দফতরকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেননি তৃণমূল শিক্ষা সেলের জেলা চেয়ারম্যান শেখ ফুরকানও। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানের কটাক্ষ, ‘‘কেউ দেখার নেই বলে স্কুলগুলিতেও তোলাবাজি শুরু হয়েছে।’’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অরিন্দম ঘোষের দাবি, স্কুলগুলির পরিচালন সমিতি সিপিএম ও কংগ্রেসের দখলে রয়েছে বলেই এমনটা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE