শীতের মিঠে রোদে পিঠ সেঁকে বসে আছেন তিনি, একা নন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে ওঁরা অনেকে। নদীর কোলে মন্দিরের আমবাগানে ঈশ্বরের মেলা বসেছে যেন। আয়োজন, আর পাঁচটা আটপৌরে বনভোজনের মতোই সকালের চা থেকে আধ-বেলার লুচি তরকারি, শেষ বেলার ভোগ। বনভোজনের ধারাতেই চাঁদা তুলেই মজাটুকু ভাগ করে নেওয়া। ভক্তদের গৃহদেবতাদের সমাবেশে খোল কর্তালে সে বনভোজনের মজার খামতি নেই।
কৃষ্ণ স্বয়ং সখা পরিবেষ্ঠিত হয়ে হাসি-ঠাট্টায় মজে থাকতেন বলে উল্লেখ রয়েছে শ্রীমদ্ভাগবতে। সেখানে, বৃন্দাবনে সখাদের সঙ্গে বনে গরু চরাতে গিয়ে কিশোর শ্রীকৃষ্ণ কীভাবে গাছের পাতায় পাত পেরে দুধ-দই সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতেন সে বর্ণনা রয়েছে। সেই রীতি বুঝি এখনও চলেছে।
নবদ্বীপের প্রাচীন হরিসভা মন্দিরের নাটুয়া গৌর এ বার বনভোজনে গিয়েছিলেন নবদ্বীপ লাগোয়া বর্ধমান শ্রীরামপুরের গোপীনাথ মন্দিরে। দিনটা ছিল ২৫ পৌষ। এসটিকেকে রোডের ধারে বাগান ঘেরা এই মন্দিরটিও ইতিহাস প্রসিদ্ধ। কথিত আছে চৈতন্যদেব নবদ্বীপ থেকে কয়েক ক্রোশ দূরে যখন বিদ্যানগরে গঙ্গাদাস পণ্ডিতের টোলে পড়তে যেতেন, তখন পথে বিশ্রাম নিতেন এখানেই।
সে মন্দিরেই এ বার নবদ্বীপ থেকে প্রায় একশো কুড়ি জন ভক্ত বনভোজনে নিয়ে গিয়েছিলেন দেবতাকে। হরিসভা মন্দির থেকে যাত্রা করে ‘পিকনিক স্পটে’ পৌঁছে। গরম বালি থেকে সদ্য ভেজে তোলা মুড়ির সঙ্গে ততধিক গরম বেগুনি আর কড়া কফি। দেবতার বাল্যভোগে অবশ্য ছিল ফল-মিষ্টি। তবে দুপুরের ভোজে ভক্ত-ভগবান যেন একাকার। ছিল সাদা অন্নের সঙ্গে বেতো শাক, সোনামুগের ডাল, আলুর চিপস্, ফুলকপির বড়া, এঁচোড়ের রসা, পোস্ত পনির, টম্যাটো আমসত্ত্ব খেজুরের চাটনি, পাঁপড় ভাজা আর রাজভোগ।
রান্না খাওয়ার ফাঁকে দিনভর কীর্তনে কখনও নরোত্তম দাসের পদ তো কখনও জগৎবন্ধু সুন্দরের পদ। বনভোজনে খরচ পড়ল মাথা পিছু ১২৫ টাকা।
এ শীতে দেবতাদের প্রথম বনভোজন হয়েছিল পোড়ামাতলার শ্যামসুন্দর মন্দিরে। পয়লা পৌষ এই মন্দিরের পিকনিকে জড়ো হয়েছিল চল্লিশটি গোপাল বিগ্রহ। গোপালের এই বনভোজনে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় তিনশো ভক্ত— হাবড়া থেকে আসানসোল, বর্ধমান থেকে বার্নপুরের মতো জায়গা থেকে গোপাল বিগ্রহ নিয়ে পয়লা পৌষে আসেন ভক্ত এবং মন্দিরের সেবাইতরা। শ্যামমন্দিরের পিকনিকে সকালের জলখাবারে ছিল ঘুগনি, মুড়ি এবং মিষ্টি। অফুরন্ত চা। দুপুরের মেনুতে খিচুড়ি, শীষ পালংয়ের চচ্চড়ি, আলুর দম, বেগুনি, চাটনি, পাঁপড়, লুচি, নলেন গুড়ের পায়েস এবং মিষ্টি।
মন্দিরের গোস্বামী মা অপর্ণা দেবী জানান, “আগে বনভোজনের পদে পুষ্পান্ন রাখা হতো। কিন্তু শীতে সকলে দেখি খিচুড়ি পছন্দ করেন, তাই এখন শুধু খিচুড়িই হয়। তবে জলখাবারে লুচি, কড়াইশুঁটির কচুরি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাখা হয়। এক এক বছর সবাই মিলে এক এক রকম পদ ঠিক করা হয়।” দূরের অনেকেই নিজদের বিগ্রহ নিয়ে আগের রাতে চলে আসেন। কেউ আবার দিনের দিন সটান চলে আসেন পিকনিক স্পটে।
তার পর, মানুষ আর ঈশ্বর, চেটেপুটে খান বনভোজনের হারানো হারানো স্বাদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy