Advertisement
E-Paper

স্বপ্নে ঘোরে জং ধরা চাকা

দিন ফুরিয়ে আসে, চার পাশে ঘন হয়ে থাকা গ্রামীণ বৃত্তটা অবাক বিস্ময় নিয়ে ঘরে ফিরে যায়। তবু প্যাডেল থেকে পা ছোঁয় না মাটি। দিন-রাত অবিরাম সেই সাইকেল-স্মৃতি উস্কে দিল আনন্দবাজার হ্যাঁ, এখন তাঁকে দোকান দিতে হয়েছে। জীবনের তাগিদে। জীবিকার তাগিদে। সাইকেলে কেরামতি দেখিয়ে পেট চলছিল না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই  মুদির দোকান দিয়েছেন জলঙ্গির বিলাসপুরের  মুক্তার হোসেন।

আব্দুল হাসিম

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৬

ইটের একতলা ঘরের সামনে টিনের চালা দেওয়া পাড়ার ছোট্ট মুদির দোকান।

কাপের পর কাপ উড়ে যায় চা। দোকানের বেঞ্চে জমে ওঠে আড্ডা। কোনও কোনও বিকেলে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ফেলে আসা অতীত। জমে ওঠে গল্প। ভারী হয় মন।

হ্যাঁ, এখন তাঁকে দোকান দিতে হয়েছে। জীবনের তাগিদে। জীবিকার তাগিদে। সাইকেলে কেরামতি দেখিয়ে পেট চলছিল না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই মুদির দোকান দিয়েছেন জলঙ্গির বিলাসপুরের মুক্তার হোসেন।

সাইকেল খেলার ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। তার পরে চকচক করে ওঠে চোখ। তিনি বলে চলেন সাইকেলের দিনরাত্রি। মুক্তার সাইকেলে উঠলে হাঁ করে থাকত লোকজন। নিতান্ত এক আটপৌরে মানুষ সাইকেলে উঠলেই হয়ে যেতেন যাদুকর। দু’টো চাকা যেন মুক্তারের কথা শুনত। হাততালিতে ফেটে পড়ত আসর।

মুক্তারের স্ত্রী কালসন বিবি সে কথা জানতেন। হাজার হাজার লোক মুক্তারের যাদু দেখার জন্য মুখিয়ে থাকলেও কালসনের দু’চোখের বিষ ছিল এই সাইকেল। এখনও সাইকেলের কথা উঠলে তিনি রেগে যান। বিরক্ত হয়েই ছুড়ে দে পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘অতশত জেনে কী হবে শুনি? কী এমন কাজ করেছে? হাততালিতে কি আর পেট ভরে? শেষ বয়সে এসে তো দোকানেই বসতে হয়েছে!’’

মুক্তার জানেন, গিন্নির রাগ অমূলক নয়। সাইকেল তাকে খ্যাতি দিয়েছে, অর্থ নয়। সে অনেক দিন আগের কথা, মালদহের একটা গ্রামে এগারো দিন টানা সাইকেল চালিয়েছিলেন তিনি। নাওয়া, খাওয়া, ঘুম সব সেই সাইকেলের উপরেই। গিন্নি আড়াল হতেই মুক্তার ঝাঁপি খুলে বসেন, ‘‘এখন তো যতক্ষণ দর্শক, ততক্ষণ সাইকেল। কিন্তু আমাদের সে কালে এমন ছিল না। তখন রাতে ঘুমোতামও সাইকেলেরই উপরে। এখন সাইকেল দেখলে
কষ্ট হয়।’’

প্রায় দশ বছর হয়ে গেল। সাইকেলের চাকা থেমে গিয়েছে। তিনিও গতি ভুলে দোকানে বসে থাকেন। পঞ্চাশ পেরিয়ে পারিবারিক চাপ, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তাকে ভুলে যেতে হয়েছে চুন দিয়ে আঁকা গোল বৃত্ত।

তাঁর কথায়, ‘‘সাইকেল খেলা অনেকটা ম্যাজিকের মতো। চাকাও ঘুরবে। ম্যাজিকও চলবে। দর্শক যেন অন্য দিকে চোখ ফেরাতে না পারে। লোকে অনেক কিছু বলত জানেন। আমি কিন্তু নিজে শিল্পী ভাবতাম। শিল্পীর কী এত অর্থ নিয়ে ভাবলে চলে নাকি!’’

তিনি জানেন, সাইকেল খেলার সে সব দিন আজ ফুরিয়েছে। আগের মতো গোল দাগ ঘিরে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় হয় না আর। জলঙ্গির নওদাপাড়া এলাকার প্রবীণ তৌহিদ শেখ বলছেন, ‘‘ আগে মাঝে মধ্যেই স্কুলেও সাইকেল খেলা দেখানো হত। গ্রামেও মাঝেমধ্যেই বসত সাইকেল খেলার আসর। এখন সে সব অতীত।’’

শুধু মাঝরাতে হাততালির আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় মুক্তারের। ধড়ফড় করে উঠে পড়েন তিনি। কেউ কোথাও নেই। মরচে পড়া সাইকেলটা কি নড়ে উঠল!

Stuntmen Cycle Cyclist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy