Advertisement
E-Paper

খালি পড়ে দোতলা বাড়ি, ভাড়া ঘরে ভিজছে বই

বহরমপুরের বঙ্কিমচন্দ্র পাঠাগারের আজ এমনই বেহাল দশা। যদিও এমনটা হোযার কথা ছিল না রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই গ্রন্থাগারের।

এ ভাবেই রাখা হয়েছে বই। -নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই রাখা হয়েছে বই। -নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০৭:২০
Share
Save

গোটা তিনেক বালতি। খানকতক মগ। এদিক ওদিক ছড়ানো আরও গোটা কয়েক পাত্র। ছাদ থেকে জল পড়ছে পাত্রগুলিতে। পাত্রগুলির নীচে থাক থাক বই। তার কতকগুলি শুধু মহার্ঘ্যই নয়, দুস্প্রাপ্যও।

বহরমপুরের বঙ্কিমচন্দ্র পাঠাগারের আজ এমনই বেহাল দশা। যদিও এমনটা হোযার কথা ছিল না রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই গ্রন্থাগারের। কারণ, তার জন্য বরাদ্দ আস্ত একটি সরকারি দোতলা বাড়ি। কিন্তু গত ১০ বছরে সেই বাড়ি আজও সম্পূর্ণ হয়নি। সেই জন্য জীর্ণ ভাড়াপ বাড়িতে চলছে এই পাঠাগার। বহু আবেদন নিবেদনের ফল শুণ্য। অথচ এই পাঠাগারে রয়েছে অসংখ্য
দুষ্প্রাপ্য নথিপত্র।

এই পাঠাগার তৈরির ইতিহাসও বেশ চমকপ্রদ। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে সারা বাংলা তখন উত্তাল। সেই উত্তাল সময়ে রাজা-জমিদারদের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারের বাইরে বেরিয়ে আমজনতার নিজস্ব সাধারণ গ্রন্থাগার তৈরির আকাঙ্খা জন্ম নেয়
বহরমপুর শহরে।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সত্তোরোর্দ্ধ সাবিত্রীপ্রসাদ গুপ্ত জানালেন, কৃষ্ণনাথ কলেজের সেই সময়ের কৃতী ছাত্র গুরুদাস সরকার, নিশিকান্ত সান্যাল, সুকুমার ভট্টাচার্য-সহ আরও অনেকে ১৯০৫ সালের ২৬ জুন কলেজের পিছনে অধ্যাপক হরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন মুর্শিদাবাদ জেলার আমজনতার প্রথম গ্রন্থাগার— ‘বঙ্কিমচন্দ্র লাইব্রেরি।’

নিজস্ব ঘরের অভাবে তার পরে উদ্বাস্তুর মতো চার-পাঁচটি ঠিকানা পাল্টে প্রায় ৭০ বছর আগে শহরের গোরাবাজার এলাকার চকবাজারে ভাড়াবাড়িতে ঠাঁয় পায় সেই পাঠাগার। সেই বাড়ির অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে, ঐতিহাসিক গ্রন্থাগারটি প্রায় ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়েছে।

ভাড়াবাড়ির একতলার গ্রন্থাগারের কোথাও বালতি পাতা। কোথাও গামলা, কোথাও মগ। গ্রন্থাগারিক তপন ঘোষ বলেন, ‘‘বৃষ্টি হলে ঘরের ভিতরে জল পড়ে। বালতি, মগ পেতে না রাখলে বইপত্র বাঁচানো যাবে না।’’

পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৭৮০০টি। শিশু ও সাধারণ বিভাগ মিলিয়ে পাঠক সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। গ্রন্থগারিক তপনবাবু জানালেন, সংস্কারের অভাবে লোহার কড়ি-বর্গায় তৈরি শতাব্দী প্রাচীন ভাড়া বাড়িটার পুরোটাই ঝুরঝুর করছে। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

১৯৮২ সালে রাজ্য সরকার বঙ্কিমচন্দ্র পাঠাগারও অধিগ্রহণ করে। এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষক বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ঘোষ পাঠাগারকে কাঠা দুয়েক জমি দান করেন। সেই জমিতে রাজ্য সরকারের গ্রন্থাগার দফতরের অনুদানে একতলা ভবন নির্মান হয়। মন্ত্রী নিমাই মাল ২০০৫ পাঠাগারের শতবর্ষে নতুন ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ওই লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ছিলেন সাবিত্রীপ্রসাদ গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘ওই ভবনের একটি তলায় সব বই-এর জায়গা না হওয়ায় স্থানান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল।’’ সেই জন্য দোতলা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সাবিত্রীপ্রসাদ বলেন, ‘‘রাজ্যসভার আরএসপি-র সাংসদ অবনী রায়‌ের তহবিলের টাকায় দোতলা নির্মানের কাজ শুরু হয়। ছাদ ও দেওয়াল করতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। তার পরে আর কাজ এগোয়নি।’’

মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক প্রবোধ মাহাত বলেন, ‘‘নিজস্ব ভবনের নির্মান কাজ সম্পূর্ণ করতে সরকারের কাছে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। টাকা পেলেই কাজ সম্পূর্ণ করে এই পাঠাগারকে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত করা হবে।’’

Library Bankim chandra Library Baharampur বহরমপুর

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}