বৃষ্টি থামুক নাই বা থামুক, মিষ্টি ছাড়া আবার ভাইফোঁটা জমে নাকি!
অতএব, ছাতা মাথায় কেউ ছুটলেন মনোহারা আনতে। কেউ বলছেন, ‘অপেক্ষা করতে হলে করব। আমার কিন্তু বাপু ক্ষীর ল্যাংচাই চাই।’ কেউ আবার কাকভেজা হয়ে রাজভোগ, ছানাবড়া কিংবা পান্তুয়া নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বিড়বিড় করছেন, ‘সারা বছর ভাইয়েরা সুগারে ভুগছেন বলে কত দুশ্চিন্তা! এই দিনটাতে সেই তাঁদের জন্যই বাজারের সেরা মিষ্টি না হলে চলে না!’
কথাটা মিথ্যে নয়। কেউ সুগারের সৌজন্যে সারাবছর মিষ্টি মুখে তোলেন না। কিন্তু ভাইফোঁটার দিন সেই তিনিই আস্ত রাজভোগ মুখে পুরে চোখ বন্ধ করে বলেন, ‘সাইজটা একটু ছোট করে দিলেও স্বাদ কিন্তু একই আছে।’ ‘খাব না, খাব না’ বলতে বলতে দু’টো পটলের মোরব্বা, একটা ল্যাংচা এবং খানকয়েক রসগোল্লা সাবাড় করে দিয়েছেন, এমন ভাই কিংবা দাদার সংখ্যাও কিন্তু নেহাত কম নয়।
মিষ্টি বিক্রেতারা বলছেন, ‘‘মিষ্টিপাগল এই লোকগুলো আছেন বলেই না আমরা কখনও মিষ্টির মান নিয়ে আপস করি না। চেষ্টা করি, চেনা মিষ্টির পাশাপাশি আরও নতুন কিছু করতে।’’ নবদ্বীপের মিষ্টি ব্যবসায়ী উৎপল ঘোষ এ বার বিজয়া দশমী উপলক্ষে প্রথম তৈরি করেছেন নতুন মিষ্টি, ক্ষীর ল্যাংচা। এবং শুরুতেই ‘সুপারহিট’। পুজোর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে এই মিষ্টিই নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা।
ভাইফোঁটার বাজারেও সেই ক্ষীর ল্যাংচার বিপুল চাহিদা। কিন্তু রেসিপি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ উৎপলবাবু। ক্ষীর ল্যাংচার দাম ১২ টাকা। কৃষ্ণনগরের বাজার সরপুরিয়া-সরভাজার যুগলবন্দিতে জমজমাট। কৃষ্ণনগরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী তাপস দাস ভাইফোঁটা স্পেশ্যাল হিসেবে তৈরি করেছেন পদ্ম-মিষ্টি। অবিকল পদ্ম ফুলের মতো দেখতে ক্ষীর এবং ছানা দিয়ে তৈরি এই মিষ্টির দাম ২৫ টাকা। সেই সঙ্গে রয়েছে গাজর ১৫ টাকা, পটল ১৫ টাকা, আম ১২ টাকা, কমলালেবু ১০ টাকা, তালশাঁস ২৫ টাকা। সে সব দেখে ভ্রম হয়, ফল না মিষ্টি!
মুর্শিদাবাদে চেনা রসগোল্লা, সন্দেশের পাশাপাশি মনোহরা এবং ছানাবড়ার চাহিদা তুঙ্গে। বহরমপুরের বিজয়গোপাল সাহার দোকানে ছানাবড়া ১০ ও ২০ টাকা। ভাইফোঁটা স্পেশ্যাল আমদই, আম রসগোল্লা ও গোকুল পিঠের চাহিদাও ভাল। লালবাগের রাহুল দত্ত ভাইফোঁটায় তৈরি করেছেন ‘বোম্বে রোল’। কোমর বেঁধে সেজেছে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোও। বহরমপুরের একটি হোটেলের তরফে ইমানুল হক জানান, ইলিশ, ভেটকি, পাবদা, চিংড়ির সঙ্গে অজস্র চিকেন এবং মাটনের পদ নিয়ে প্রস্তুত তাঁরা। মোবাইল-অ্যাপসে ‘অর্ডার’ নিয়ে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌছে দেওয়ার জন্য তৈরি কৃষ্ণনগরের এক রেস্তোরাঁ। তার মালিক অরিন্দম গড়াই জানান, হায়দরাবাদ থেকে ছ’জন বিশেষজ্ঞ শেফ এসেছেন।
সব মিলিয়ে জমজমাট ভাইফোঁটার পাত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy