এ চাল নাকি ক্যান্সারকে দূরে রাখে। শুধু ক্যানসারই নয়, এ চালে স্নায়ু ভাল থাকে। এমনকী দাবি এমনটাও, আলঝাইমার্স-এর সঙ্গেও মোকাবিলার ক্ষমতা ধরে এই চাল।
এই ধানের চাল কালো। কালো ধানের চাষ আগেও করেছেন ফুলিয়ার চাষিরা। কিন্তু, এমন ওষধি গুণ সম্পন্ন চালের কথা আগে শোনেননি নদিয়ার চাষিরা। তাঁদের এমন ধানের কথা শোনালেন মণিপুরের ধান গবেষক ৬৩ বছরের পি দেবকান্ত। এই ধানের নাম ‘চাখাও পোইরিটন’।
৬৩ বছরের পি দেবকান্ত চাষিদের বলছেন, “ধান নয়, এটা আসলে ভেষজ ওষুধ। শুধু টাকার জন্য চাষ না করে নিজেদের রোগমুক্ত রাখতে চাষ করুন এই ধান।” দেবকান্ত ২০১২ সালে কেন্দ্র সরকারের ‘প্রোটেকশন অফ প্লান্ট ভ্যারাইটিস অ্যান্ড ফার্মাস রাইট অ্যাক্ট’ পুরষ্কার পেয়েছেন।
এই কালো ধানের চাষ আগেও করেছেন নদিয়ার চাষিরা। সেটা ছিল মহারাষ্ট্রের ‘কালাভাত’। তাতে সাফল্যও পেয়েছেন তাঁরা। গত বছর প্রায় ১৫ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এ বার তা দু’শো টনের বেশি হবে বলেই আশা করছেন ফুলিয়া কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গবেষকরা। এবার মণিপুরের চাখাও পোইরিটন ধান চাষে উৎসাহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফুলিয়ার কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সহ অধিকর্তা অনুপম পাল বলছেন, “মণিপুরের এই কালো ধানের চালের ওষধি গুণ প্রচুর। দামও মিলবে প্রায় কেজি প্রতি দেড়শো টাকা। এই চাষ অার্থিক ভাবে লাভজনক, তেমনই চাষিদেরকে বলছি, নিজেদের পরিবারের খাওয়ার জন্য হলেও এই ধান চাষ করুন।”
মণিপুরি ভাষায় চাখাও-এর মানে সুস্বাদু। দেবকান্তের দাবি, ১০ হাজার বছর আগে মণিপুরের পোইরিইটন রাজ পরিবার এই চাষের জন্য স্থানীয় চাষিদের উৎসাহিত করেছিলেন।
মণিপুরের এই ধান গবেষক দুশো লুপ্তপ্রায় দেশি ধান সংরক্ষণ করেছেন। তার মধ্যে কালো ধান আছে ২০ রকমের। দেবকান্তের দাবি, খাদ্যগুণ ও সুগন্ধের জন্য গোটা বিশ্বের মধ্যে এই ‘চাখাও পোইরিইটন খুবই উৎকৃষ্ট মাণের। কারণ, এই ধানের চালে আছে প্রচুর পরিমানে ‘অ্যান্টি অক্সিডেন্ট’। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। সঙ্গে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এই চাল খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেক কম হয় বলে একে ‘অ্যান্টি ডায়াবেটিস রাইস’ও বলা হয়। লোহা ও জিঙ্ক প্রচুর পরিমানে থাকার জন্য প্রসূতিদের ক্ষেত্রে পথ্য হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রশ্ন একটাই, মণিপুরে যে ধান সহজেই চাষ হয় নদিয়ায় সে ধানের চাষ কি সম্ভব? দেবকান্ত বলছেন, ‘‘শর্ত একটাই, চাষ করতে হবে জৈব সারে । তবে নদিয়ার মাটিতে খাদ্য গুণ একই থাকলেও গন্ধ মণিপুরের চালের মতো হবে না।’’