Advertisement
২১ মে ২০২৪

রক্তের উপাদান বিভাজন হবে এ বার কল্যাণীতে

গত বছরের ঘটনা। জ্বর এবং গাঁটে ব্যথা নিয়ে কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল (জেএনএম) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গয়েশপুরের এক তরুণী। দিন কয়েক পর তাঁর ডেঙ্গি ধরা পড়ে। দেখা যায়, তাঁর রক্তে প্লেটলেটস ৮০ হাজারে নেমে এসেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০১:১২
Share: Save:

গত বছরের ঘটনা। জ্বর এবং গাঁটে ব্যথা নিয়ে কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল (জেএনএম) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গয়েশপুরের এক তরুণী। দিন কয়েক পর তাঁর ডেঙ্গি ধরা পড়ে। দেখা যায়, তাঁর রক্তে প্লেটলেটস ৮০ হাজারে নেমে এসেছে। পরদিন তা আরও নেমে যায়। চিকিৎসকরা তাঁকে তক্ষুনি প্লেটলেটস দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু, কল্যাণী তো বটেই, কাছাকাছি কোথাও প্লেটলেটস পাওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না। আবার কলকাতা থেকে দিনের পর দিন প্লেটলেটস নিয়ে এসে চিকিৎসা অসম্ভব। ফলে, সেই তরুণীকেই পাঠানো হয় কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজে।

এটা একটা উদাহরণ মাত্র। শুধু মাত্র রক্তের উপাদান আলাদা না করতে পারার জন্য একদিকে যেমন অনেক রোগীকে নাকাল হতে হচ্ছে। আবার চিকিৎসকদেরও নানান অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। অনেক সময় শুধুমাত্র এই কারণের জন্য রোগীকে কল্যাণী থেকে কলকাতায় 'রেফার' করতে হচ্ছে। আবার রক্তের অপচয়ও হচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, রক্তের উপাদান আলাদা করা গেলে এক ইউনিট রক্ত চার থেকে পাঁচজনকে দেওয়া যেতে পারে। তবে সেই সমস্যা এবার মিটতে চলেছে। জেএনএম মেডিক্যাল কলেজে চালু হচ্ছে রক্তের উপাদান পৃথক করার (ব্লাড কম্পোনেন্ট সেপারেটর) ইউনিট। খুব শীঘ্রই তা চালু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের সুপার ডাঃ স্নেহময় চৌধুরী।

বিভিন্ন উপাদান নিয়ে রক্ত গঠিত হয়। সব রোগীর ক্ষেত্রে রক্তের সব উপাদান সব সময় প্রয়োজন হয় না। মেডিক্যাল কলেজের প্যাথোলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ বার্ণিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এমনিতেই মেডিক্যাল কলেজে রোগীর সংখ্যা বেশি। তার উপর গরমের সময় কার্যত রক্তের সঙ্কট চলে। রোগীদের রক্ত যোগাতে আমাদের হিমসিম খেতে হয়। রক্তের উপাদান আলাদা করা যায় না বলে, এক এক জন রোগীকে পুরো ইউনিট রক্ত দিয়ে দিতে হয়। যদি রক্তের উাপাদান পৃথক করা যেত, তাহলে ওই এক ইউনিট রক্তই চার থেকে পাঁচ জন রোগীকে দেওয়া সম্ভব হত।

ধরা যাক, অগ্নিদগ্ধ কোনও রোগীর ক্ষেত্রে প্রয়োজন রক্তের প্লাজমা। আবার ডেঙ্গি আক্রান্তের প্রয়োজন প্লেটলেটস। সেরকমই কোনও কোনও রোগীর প্রয়োজন শ্বেত রক্ত কণিকা, বা লোহিত রক্ত কণিকা। এই উপাদানগুলি পৃথক করা গেলেই এক ইউনিট রক্তই বিভিন্ন রোগীকে দেওয়া যাবে।

রক্তের উপাদান পৃথক করার জন্য পূর্ণাঙ্গ একটি ইউনিট প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন ষন্ত্রের মাধ্যমে রক্তের উপাদানগলি পৃথক করা হয়। মেডিক্যাল কলেজে সাধারণত এই ইউনিট থাকার কথা। কিন্তু এতদিন সেই ইউনিট এখানে ছিল না। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই ইউনিট ছিল বহু প্রতিক্ষিত। কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ সরাসরি স্বাস্থ্য দফতরের অধীন নয়। এটি রাজ্যের একমাত্র মেডিক্যাল কলেজ, যেটি পুরোপুরি রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত। বার্ণিকবাবু জানিয়েছেন নতুন এই ইউনিটটি বসাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা। ব্যয়ভার বহন করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। সব যন্ত্র এসে গিয়েছে। সেগুলি বসানোর কাজও চলছে।

মেডিক্যাল সুপার জানিয়েছেন, এই ইউনিট চালু করার জন্য আর কিছুদিন সময় লাগবে। কারণ, এই ধরণের ইউনিট চালু করতে গেলে ড্রাগ কন্ট্রোল দফতরের অনুমতি প্রয়োজন। এছাড়া দমকল, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকেও ছাড়পত্র লাগবে। অনুমতি ও ছাড়পত্রের জন্য সব জায়গায় জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই তা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই ইউনিটটি চালু হয়ে গেলে শুধু এই হাসপাতালই নয়, উপকৃত হবেন জেলার অন্যান্য হাসপাতালের রোগীরাও। এই হাসপাতালের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি রক্ত বা রক্তের উপাদান অন্য হাসপাতালগুলিকে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital Patient Blood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE