বাঁশের খুঁটি আর কাঠের পাটাতনটা নড়বড়ে ছিলই। এর উপর ঢালাই করলে যে বড়সড় বিপদ হতে পারে, সে আশঙ্কাও নাকি করা হয়েছিল। তবু কোনও কিছু তোয়াক্কা না করে ঢালাইয়ের কাজ শুরু করতেই ভেঙে পড়ল নির্মীয়মাণ বাড়িটি। আর তার জেরেই মৃত্যু হল দুই রাজমিস্ত্রির। আহত অন্তত আট জন।
বুধবার দুপুর তখন সওয়া ৩টে। কৃষ্ণনগর পুরসভার জলসরবরাহ প্রকল্পের (জলকলের) বুস্টিং স্টেশনের ঘটনা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতরা হলেন গৌতম বিশ্বাস(৩০) ও সহদেব বিশ্বাস(৪৫)। গৌতমের বাড়ি কৃষ্ণনগরের শিমুলতলাতে। আর কৃষ্ণনগরেরই শম্ভুনগরে সহদেবের বাড়ি। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত শুরু হয়েছে। দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, রাজ্য সরকার মৃতদের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে।
এ দিনের ঘটনায় পুরসভা অভিযোগের আঙুল তুলেছে ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে। পুরসভার চেয়ারম্যান অসীমকুমার সাহার কথায়, “আমি মঙ্গলবারই কাজ দেখতে এসেছিলাম। সেন্টারিংয়ের বাঁশ এবং কাঠের পাটাতন নড়বড়ে দেখে নির্দেশও দিই, বুধবার যেন ঢালাইয়ের কাজ না হয়। কিন্তু ঠিকাদার সংস্থার মালিক নির্দেশিকা অমান্য করে এ দিন কাজ করছিল। ঠিকাদারের গাফিলতির জন্যই এই ঘটনা ঘটল। আমি ওর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করব।”
ঠিকাদার খলিল মল্লিকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তাঁর বন্ধু রবিন শেখ ফোনে জানান, “খলিল নিজেও আহত হয়েছে। উনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। ওঁকে কলকাতায় নিয়ে যাচ্ছি।”
জেলা কংগ্রেস আবার শাসকদল পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনেছে। তাদের বক্তব্য, সিন্ডিকেট-রাজ চলছে। আর তার জেরেই এই ঘটনা। জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহা বলেন, “রাজ্য জুড়ে সর্বত্র সিন্ডিকেট-রাজ চলছে। টেন্ডার ছাড়াই ডিপার্টমেন্টাল কাজের নাম করে নিজেদের লোককে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে অত্যন্ত নিম্নমানের জিনিস। সেন্টারিংও খুব দুর্বল ছিল। যার ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে।” এ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান পাল্টা বলেন, ‘‘জেলা কংগ্রেস সভাপতি সিন্ডিকেটের প্রশ্ন তুলছেন, তা তাঁর ভাটার ইঁটই তো এখানে ব্যবহার করা হয়েছে।”
সিটু অনুমোদিত নির্মাণকর্মী ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এসএম সাদী ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছেন। সাদীর কথায়, “পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর থাকা সত্ত্বেও এত বড় ঘটনা ঘটল কী করে? এর দায় পুরসভাকে নিতেই হবে।”
কী ঘটেছিল? পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণনগরে জেলখানা রোডের ধারে জলসরবরাহ প্রকল্প রয়েছে পুরসভার। সেখানে পুরসভার বেশ ক’টি অফিস রয়েছে। গত তিন মাস ধরে প্রায় ৫ হাজার স্কোয়্যার ফুটের একটি গ্যারাজ তৈরি হচ্ছিল। নাকাশিপাড়ার মুড়াগাছার খলিল মল্লিক নামে এক ঠিকাদারের আওতায় প্রায় ১৪০ জন কর্মী এ দিন ঢালাইয়ের কাজ করছিলেন। কোনও মতে বেঁচে ফিরেছেন রাজমিস্ত্রি বিষ্ণু প্রামাণিক। বললেন, ‘‘৭০-৮০ জন উপরে ঢালাইয়ের কাজ করছিল। আমরা ৭ জন নিচে দাঁড়িয়ে খুঁটিগুলিকে উঁচু করছিলাম। হঠাৎই সেন্টারিংয়ের খুঁটিগুলি নড়তে শুরু করে। কিছু বুঝতে পারার আগেই বিকট আওয়াজে হুমড়ি খেয়ে ছাদ গায়ের উপরে পড়ে যায়। ৭ জনের মধ্যে ৫ জনকে উদ্ধার করা হয়। বাকি দু’জনকে উদ্ধার করতে দেরি হওয়ায় আর বাঁচানো যায়নি।’’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন পুরসভার চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা, পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া, মহকুমাশাসক মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায়, পুরসভার কাউন্সিলররা। তাঁদের উপস্থিতিতিতেই উদ্ধার কাজ চলে। জেলাশাসক জানান, “পুরো ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy