Advertisement
E-Paper

বাসন্তী আঁচলে বাঁধা গাঁদাফুল রঙা রোদ্দুর

হলুদ, কাঁচা হলুদ, বাসন্তী বা কমলা ঘেঁষা...দিদির শাড়ি, মায়ের শাড়ি, এই প্রথম নিজের শাড়ি, আলুথালু আঁচল, খিলখিল হাসি...

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৮
কলেজের সরস্বতী পুজো ছুঁয়ে নিরালায়। — নিজস্ব চিত্র

কলেজের সরস্বতী পুজো ছুঁয়ে নিরালায়। — নিজস্ব চিত্র

হলুদ, কাঁচা হলুদ, বাসন্তী বা কমলা ঘেঁষা...

দিদির শাড়ি, মায়ের শাড়ি, এই প্রথম নিজের শাড়ি, আলুথালু আঁচল, খিলখিল হাসি...

রাস্তা জুড়ে সরস্বতীর ঢল। মাঘের সকাল উড়ুউড়ু। শীতের হি-হি স্নানের পরে স্কুলমুখো হিমানি-তরঙ্গ।

আর বারান্দা থেকে ঝুঁকে পড়া টেরিকাটা মাথা। সাইকেলে পাঁইপাঁই চক্কর। রকেট হয়ে উড়ে আসছে হৃদয় দোমড়ানো চিঠি, এই যাঃ ভুল আঁচলে গিয়ে গোঁত্তা দিল!

রাস্তার ও পারে বঙ্গবালা ইশকুল, এ পারে বটতলা বিদ্যালয়। সন্ধে থেকে ঠাকুর সাজানো, কাগজের কল্কা কাটা, ফল কুচোনো। মাঝে এক-এক বার জানলা দিয়ে এক পলক।

আর তার পরে এই সকাল... সব শুঁয়ো প্রজাপতি হয়ে গিয়েছে। সব ছেলেই ‘দাদার কীর্তি’র কেদার। এই দিনে বই ছোঁয়া বারণ, সব বই দেবীর পদতলে। ঠাকুরমশাই এলেই হাতে গাঁদাফুলের কুচো নিয়ে ‘বিদ্যাস্থানেভ্য এবচ’। অথচ মাঘের শীতে বুকজলে দাঁড়িয়ে ভোম্বলদার (অনুপকুমার) প্রম্পট শুনে কেদার (নবাগত তাপস পাল) আউড়ে যাচ্ছে— ‘বিদ্যাস্থানে ভয়েবচ’। তবেই না তার জ্বর বাধিয়ে সরস্বতী-রূপী মহুয়া-প্রাপ্তি!

তাই বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলেন, “বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীর কাছে সরস্বতী পুজো বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবীর জন্য নির্দিষ্ট তিথি’’, শুনে হেসে ফেলেন বহরমপুর গার্লস কলেজের মিষ্টু চক্রবর্তী বা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সৌমাভ দত্তেরা।

“এ দেশে ভ্যালেন্টাইন ডে এই সে দিন শুরু হল। সরস্বতী পুজোর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কটা কিন্তু বহু কালের। আগের প্রজন্মের গল্পও তো আমরা শুনি’’, হাসতে-হাসতেই বলেন মিষ্টু। ডাক্তারির ছাত্র সৌমাভ যোগ করেন, “সুন্দরের আরাধনায় শাড়ি-পাঞ্জাবির কী যুগলবন্দি!”

বৈষ্ণবশাস্ত্র মতে, সরস্বতী পুজো অর্থাৎ শ্রীপঞ্চমী থেকেই বসন্তের সূচনা। পুজোর উপকরণে আবির, কুমকুমের তাই অনিবার্য উপস্থিতি। নবদ্বীপ কলেজের নীলাঞ্জনা দত্ত আর অপরাজিতা কর ফাঁস করেন গোপন কথা, “আসলে কী জানেন তো, এই একটা দিন বাড়ি থেকে যে স্বাধীনতা পাওয়া যায়, অন্য দিনে তা মেলে না!” বহরমপুরের অর্পণ চক্রবর্তী ভুরু তুলে জিগ্যেস করেন, “ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র কথা বলে ক’জন আর বাড়ি থেকে বেরোতে পারে?’’

গন্তব্য যে শুধু স্কুল-কলেজই, তা অবশ্য নয়। করিমপুর পান্নাদেবী কলেজের শিক্ষক প্রসেনজিৎ সাহার আক্ষেপ, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুজোয় বহু ছাত্রছাত্রীই জড়ায় না। বরং অন্য ঘোরাঘুরির প্ল্যান করে রাখে।”

সেটাও আবার পুরোপুরি ঠিক নয়। পাল্টেছে বহু কিছুই। বাবা-কাকাদের হাতে স্মার্টফোন
ছিল না। কলেজের দোরগোড়ায় পৌঁছনোর আগেই মা-মাসিদের অনেককে বসতে হয়েছিল বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু এই গাঁদাফুল রঙা রোদে হাতছুট ঘুড়ির মতো ভেসে যাওয়ার ইচ্ছেটা?

না বোধহয়। সরস্বতী পুজো মানেই স্কুলের রাস্তায় যেতে-যেতে হঠাৎ ‘ভ্রূ পল্লবের ডাক’। আর তার পরে হঠাৎই ভিড় থেকে একা হয়ে চন্দনের বনে হারিয়ে যাওয়া!

কলেজের সরস্বতী পুজো ছুঁয়ে নিরালায়। — নিজস্ব চিত্র

Saraswati Puja Berhampore Girls' College
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy