Advertisement
০৯ মে ২০২৪

প্রভু ক্ষমা কোরো, বলছে বড়দিনের কেক

বড়দিন এসে গেল। কিন্তু সান্তার ঝুলি থেকে কেক আর বেরোল কই? ফি বছরই মনোহারি লাল-নীল আলোর মালায় সেজে পাড়ার মোড়ে দোকান জানিয়ে দেয়— শীত পড়ুক বা না পড়ুক, আজ বড়দিন।

বেকারিতে খদ্দেরের অপেক্ষা। কৃষ্ণনগরে। —নিজস্ব চিত্র।

বেকারিতে খদ্দেরের অপেক্ষা। কৃষ্ণনগরে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:১৪
Share: Save:

বড়দিন এসে গেল। কিন্তু সান্তার ঝুলি থেকে কেক আর বেরোল কই?

ফি বছরই মনোহারি লাল-নীল আলোর মালায় সেজে পাড়ার মোড়ে দোকান জানিয়ে দেয়— শীত পড়ুক বা না পড়ুক, আজ বড়দিন। নেহাত গুমটিতেও দশ-বিশ হাজার টাকার নানা সাইজের কেক ডাঁই হয়ে থাকে।

কিন্তু এ বার সেই স্বাদ ফিকে।

নোট বাতিলের পরে পঞ্চাশ দিন কাটতে চলল। এখনও শহরে-গাঁয়ে সান্তার সন্তান-সন্ততিরা কতটা কাবু, তার প্রমাণ কেকের বিক্রিতে চোখ রাখলেই সাফ বোঝা যায়। মাস শেষ হতে চলল। ব্যবসা মার খেয়েছে, চাষ কী দিয়ে হবে বোঝা যাচ্ছে না, ব্যাঙ্ক মাছি তাড়াচ্ছে, এটিএম ঢনঢনে। মনে ফূর্তি আর ট্যাঁকে কড়ি কোথায় যে লোকে কেক কিনে খাবে?

পাড়ার ছোট দোকান কেক তোলার সাহসই দেখায়নি। অনেক ছোট বেকারিও কেক তৈরি করেনি। যারা করেছে, তারাও নিয়মরক্ষার মতো পাঁচশো থেকে হাজার পাউণ্ড কেক বানিয়ে ক্ষান্ত দিয়েছে।

নদিয়ার বেকারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সাহা বলেন, ‘‘গাঁয়ের মানুষ এখনও কেক বলতে বেকারির কেক বোঝেন। এখন তাঁদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ভাত না খেয়ে লোকে কেক কিনবে, এমন ভাবনা বাড়াবাড়ি।”

কৃষ্ণনগরের গির্জায় প্রার্থনা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

বড়দিনের দু’তিন দিন আগে থেকে বেকারি থেকে পাইকারি দরে কিনে বহরমপুর শহরে রাস্তার পাশে টেবিল সাজিয়ে বসেন কিছু দোকানি। দোকান চলে দু’দিন পর পর্যন্ত। খাগড়ার পরিমল বসাক বলেন, ‘‘মানুষের হাতে টাকা নেই। খুচরো তো নেই-ই। ২০০০ টাকার নোট নিয়ে এলে তা ভাঙিয়ে কেক বিক্রি করা যাবে না। তাই এ বার আর দোকান দিইনি।’’

কাদাই মোড়ের একটি বেকারির মালিক অরিন্দম দে বলেন, ‘‘একশো টাকার নোটের খুব অভাব। পাঁচশোর নোটও বেশি নেই। ফলে ব্যবসা বেশ মন্দা। বহরমপুরের মতো মফস্সল শহরে তো প্লাস্টিক মানির চল নেই।’’ তবে গোরাবাজার শিবতলার বেকারি মালিক জ্যোতি সাহা বলেন, ‘‘শেষ বেলায় অবশ্য বিক্রিবাটা ভালই।’’

নবদ্বীপের দুই বড় কেক বিক্রেতা চন্দন দাস ও অনুপকুমার সাহার হিসেবে, বড়দিনে নামী কোম্পানি ও স্থানীয় বেকারি মিলিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়। পোড়ামাতলার কারবারি চন্দন বলেন, “বাজারের যা অবস্থা তা বুঝেই অন্য বারের তুলনায় তিরিশ শতাংশ কম কেক তুলেছি।” বড়ালঘাটের অনুপ বলেন, “এ বার কেকের দাম বাড়েনি। উল্টে একটি বড় সংস্থা ৭০-৮০ টাকায় ভাল মানের কেক এনেছে বাজারে। তবু ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।” নবদ্বীপের কেক ডিস্ট্রিবিউটর সন্দীপ সাহা বলেন, “অন্য বার মাঝ ডিসেম্বর থেকে দোকানদারেরা আমায় কেকের জন্য পাগল করে দিতেন। এ বার দোকানে-দোকানে ঘুরছি, অর্ডার নেই।”

কেক-বুভুক্ষু কেউ এ বেলা বলে না বসে— প্রভু, ওদের ক্ষমা কোরো, ওরা জানে না ওরা কী করছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Christmas Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE