Advertisement
১০ মে ২০২৪

শিক্ষক দিবস উপলক্ষে চাঁদা আদায়, সংঘর্ষে বন্ধ কলেজ

শিক্ষক দিবস পালনের জন্য ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা তোলাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়াল ধুলিয়ানের নূর মহম্মদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে। বুধবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ গড়ায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। দু’পক্ষের অন্তত ৯ জন সমর্থক আহত হয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫৪
Share: Save:

শিক্ষক দিবস পালনের জন্য ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা তোলাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়াল ধুলিয়ানের নূর মহম্মদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে। বুধবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ গড়ায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। দু’পক্ষের অন্তত ৯ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অফিস, কলেজের অফিসের বহু আসবাবপত্রও। বাধ্য হয়ে শুক্রবার ও শনিবার কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে, সংঘর্ষের জন্য কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকেই দায়ী করেছেন দু’পক্ষই ।

কলেজ সূত্রের খবর, শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর অনুমতি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বুধবার দুপুরে ৩০ টাকা করে চাঁদা তুলছিল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা। হঠাতই কিছু ছাত্র নিজেদের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক বলে দাবি করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা তোলার অনুমতি চায়। তিনি অনুমতি দিলে তারাও ৩০ টাকা করে চাঁদা তুলতে শুরু করে। কলেজের ক্যাম্পাসের মধ্যে যুযুধান দু’পক্ষ চাঁদা তোলার সময় পরস্পরকে ব্যাঙ্গবিদ্রুপ করতে থাকে। কলেজে তোলা টাকার হিসেব না দিয়ে পকেট ভরা হয় বলে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগও তোলে। এরপরই উত্তেজনা ছড়ায়। শুরু হয়ে যায় দু’দলের মধ্যে হাতাহাতি। একদল ছাত্র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ঘরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করতে থাকে। পরে চড়াও হয় কলেজের অফিসে। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে গোটা কলেজ চত্বর জুড়ে। দু’দলের মধ্যে চলতে থাকে ঢিল পাটকেল ছোঁড়াছুড়ি। এতে দু’পক্ষের আহত হন ৫ জন ছাত্র। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন বিরাট পুলিশ বাহিনী। লাঠি হাতে কলেজে ঢুকেই পুলিশ তাড়া করে দু’দলকেই। তাড়া খেয়ে কলেজ ছাড়ে দু’দলের সমর্থেরাই।

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেদিনের মতো রণে ভঙ্গ দিলেও পর দিন পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েই আসে তারা। কলেজ খুলতেই বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই ছাত্র সংগঠন। আহত হয় আরও ৪ জন। সামশেরগঞ্জের ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, “পরিকল্পিত ভাবেই ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূলের লোকেরা। তিনি আরও বলেন, “কলেজে ছাত্র সংসদ যখন নেই তখন কেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা তোলার অনুমতি দিলেন ছাত্রদের উপর। অনুষ্ঠান করলে তা কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেরাই করতে পারতেন। তাহলে এই অশান্তি হত না।”

তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হাবিবুর রহমানও বলেন, “বুধবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষক দিবসের চাঁদা তোলার ভার দেন ছাত্র পরিষদের ছেলেদের উপর। স্বভাবতই অন্য ছাত্ররা তাতে আপত্তি করে। এরপর তৃণমূলের ছেলেদেরও টাকা তুলতে বলেন তিনি। এইভাবে দু’দল ছাত্রের মধ্যে সংঘর্ষের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষই। সুযোগ বুঝে তৃণমূলের ছেলেদের পরিকল্পিত ভাবে মারধর করা হয়েছে। কলেজের সম্পত্তি ভাঙচুর করেছে ছাত্র পরিষদের ছেলেরা।” তিনি আরও বলেন, “রাজ্য সরকার যখন বার বার ঘোষণা করেছে রসিদ ছাড়া অন্যায় ভাবে ছাত্রদের থেকে কোনও টাকা তোলা যাবে না তখন কেন কলেজের মধ্যে এভাবে টাকা তোলার অনুমতি দিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ?” তবে এভাবে কলেজে অনুষ্ঠানের নামে টাকা তোলার ঘটনা ওই কলেজে নতুন নয় বলে জানিয়েছেন এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য মোদাশ্বর হোসেন। তিনি বলেন, “এ ভাবে দু’টি দলকে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অন্যায় ভাবে টাকা তোলার অনুমতি দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। সংঘর্ষের জন্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেই কারণেই।”

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অমিত ভৌমিক অবশ্য কলেজে টাকা তোলার অনুমতি দেওয়ার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে কাউকে টাকা তোলার অনুমতি দিইনি। যেহেতু নতুন কলেজ, ছাত্র সংসদ নেই তাই ছাত্ররা নিজেরাই কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সকলেই তাতে যোগ দেন। দল হিসেবে কলেজে কারও পরিচয় দেখা হয় না।” তিনি আরও বলেন, “এদিন টাকা তোলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’দলের মধ্যে দফায় দফায় যেভাবে সংঘর্ষ চলেছে তাতে আমরাও উদ্বিগ্ন। কলেজে আমার ঘর ও অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে।” তবে কলেজের তরফে অবশ্য এনিয়ে পুলিশের কাছে কারও বিরুদ্ধেই কোনও অভিযোগ করা হয় নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE