Advertisement
০৫ মে ২০২৪

নামে বিভ্রান্তি, ক্ষুব্ধ আড়ংঘাটা

৩০০ বছরের পুরনো মেলা বলে যা এলাকায় পরিচিত ছিল, সোশ্যাল নেটওয়ার্কের দৌলতে তা আজ ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

প্রাচীন: আড়ংঘাটার মন্দির। নিজস্ব চিত্র

প্রাচীন: আড়ংঘাটার মন্দির। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ১৩:৩০
Share: Save:

লোক মুখে ছড়াতে ছড়াতে শেষ পর্যন্ত পরিচয়টাই ছিনতাই হওয়ার উপক্রম! আড়ং মানেই যে মেলা বা উৎসব, আড়ংঘাটার আবাল-বৃদ্ধদের সে কথা আর জানতে বাকি নেই। সোশ্যাল মিডিয়া ভুল বার্তা ছড়ালে তার পরিণাম কী হতে পারে তা টের পাচ্ছেন আড়ংঘাটার বাসিন্দারা।

৩০০ বছরের পুরনো মেলা বলে যা এলাকায় পরিচিত ছিল, সোশ্যাল নেটওয়ার্কের দৌলতে তা আজ ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তা নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ লোকজন। তাঁরা মনে করছেন, এ ভাবে মেলার ইতিহাস নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। তবে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ এ বার সত্য তুলে ধরতে পাল্টা প্রচারে নেমেছেন।

প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসে আড়ংঘাটায় মেলা বসে। নাম যুগল-কিশোর মেলা। ক্রমে তা যুগল মেলা হিসেবেই পরিচিত হয়েছিল। মেলার পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস। অনেকেই মনে করেন, এই মেলা শুরুর মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে এলাকার নামের ইতিহাসও। কারণ, আড়ং মানেই তো মেলা বা উৎসব।

আড়ংঘাটা যুগল কিশোর মন্দিরের বর্তমান মহান্ত শ্যাম দাসের দাবি, মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন গঙ্গারাম দাস। বর্ধমানের আদি বাসিন্দা গঙ্গারাম বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বৃন্দাবনে পৌঁছন। সেখানে রাধা-কৃষ্ণের কিশোর মূর্তি পূজিত হতে দেখে তাঁরও এমন মূর্তি প্রতিষ্ঠার ইচ্ছে জাগে। একদিন স্বপ্নে তাঁকে দর্শন দেন গোবিন্দ নিজে। যমুনার জলে এমনই এক মূর্তি রয়েছে। সেই মূর্তি নিয়ে বাংলার দিকে রওনা হন গঙ্গারাম। মাঝে বেশ কিছুদিন তিনি বিভিন্ন জায়গায় ছিলেন। সেই জায়গাগুলির কোথাও কোথাও গোবিন্দের মন্দিরও হয়েছে। যেমন বর্ধমানের সমুদ্রগড়। সমুদ্রগড় থেকে তিনি আড়ংঘাটায় আসেন। এই এলাকার নাম তখন আড়ংঘাটা ছিল কি না তা অবশ্য জানা যায় না।

মন্দির প্রতিষ্ঠার পরে সেখানেই গোবিন্দের কিশোর মূর্তি স্থাপন করেন গঙ্গারাম দাস। শোনা যায়, কিছুদিন পরেই তিনি ফের স্বপ্নাদেশ পান, কৃষ্ণনগরে রাজবাড়িতে রাধিকার কিশোরী মূর্তি রয়েছে। সেটি নিয়ে এসে যেন তাঁদের যুগলে পুজো করা হয়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁকে জানান, তাঁর বাড়ির সব মূর্তিই যুগল। পরের রাতে ফের স্বপ্ন পান মহান্ত, রাজবাড়ির একটি দেওয়ালে দাগ কাটা রয়েছে। সেখানেই মিলবে রাধিকার মূর্তি। পরদিন সেই মূর্তি গঙ্গারামের হাতে তুলে দেন কৃষ্ণচন্দ্র। রাজা খুশী হয়ে মন্দিরের নামে সম্পত্তি দান করেন। দুই মূর্তিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই উপলক্ষে মেলা বসে। শুরু হয় আড়ং। তা ক্রমে যুগল মেলা নামে পরিচিত হয়। চলে একমাস ধরে। জামাইযষ্ঠীর আগে-পরে শুরু হয় এল মেলা। যষ্ঠীর দিন মেয়ে-জামাইরা মন্দিরে পুজো দেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত দু’বছর ধরে কয়েক জন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মেলাকে জামাই মেলা হিসেবে প্রচার করতে শুরু করে। এলাকার বাসিন্দা রত্নদীপ রায় বলছেন, ‘‘এ ভাবে প্রচার পেলে ধীরে ধীরে সেটাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। তাই আমরাও মেলা-মন্দির এবং আড়ংঘাটার লিখিত ইতিহাস তুলে ধরে প্রচার শুরু করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE